এ রাজ্যে কাজ করতে চাইলে কারওকে ঘুষ দেওয়ার দরকার নেই। কোনও দলের তহবিলেও টাকা ঢালতে হবে না। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে এই আর্জি জানিয়ে দল আর প্রশাসনকেও কি আবার কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
শনিবার ই এম বাইপাসের ধারে মিলনমেলায় হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই হিসেব দিয়ে বলেন, ১০০ টাকার কাজে ৪০ টাকা দলের তহবিলে ও ২৫ টাকা ঘুষ দেওয়ার পরে কী ভাবে কাজ হবে? মমতা বলেন,“আমরা লোভীর দল নই। একটা পয়সাও পার্টির নামে তুলি না। পার্টি ফান্ডের জন্য সরকার থেকেও টাকা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আমি ছবি আঁকি। ছবি বিক্রি করে দলের জন্য টাকা তুলি। কোনও কাট-মানি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।” তবে তাঁর আশ্বাস, “সব ফুটো এক দিনে বন্ধ হবে না। কাজের ধারাবাহিকতা তৈরি হলে সমস্যা কমে আসবে।”
তৃণমূলের নেতারা চাইলেও টাকা দেবেন না, শিল্পোদ্যোগীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা অবশ্য নতুন নয়। সদ্য সরকার গঠনের পরে যখন একের পর এক তোলাবাজির ঘটনার অভিযোগ আসছিল, তখনও একই বার্তা দিয়েছিলেন মমতা। একটি শিল্প প্রকল্পের শিলান্যাস করতে গিয়ে শিল্পপতিদের তিনি বলেছিলেন, “দলের নাম করে কেউ টাকা চাইলে আপনারা কিছুতেই দেবেন না। এটা আপনাদেরও বন্ধ করতে হবে।” দলীয় বৈঠকে নেতাদেরও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছিলেন, এমন অভিযোগ এলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তোলাবাজির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে তাঁর সরকার। |
কিন্তু তার পরেও যে তোলাবাজদের দাপট বন্ধ হয়েছে, এমন কথা বলতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। কেলেঘাই ও কপালেশ্বরী নদী সংস্কারের কাজ কেন্দ্রীয় প্রকল্প হিসাবে নথিভুক্ত হওয়ার পরে ছয় ঠিকাদারকে দিয়ে তা শুরু করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত মাকিনটস বার্ন। কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করে সম্প্রতি তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। দামী যন্ত্রপাতিও পড়ে থাকে বিনা পাহারায়। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী তোলাবাজদের সতর্ক করে প্রশাসনকে বার্তা দিলেও, তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য, সেচ ও জলপথ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিকাদারদের অভিযোগের প্রতিবিধান করা তো দূরের কথা, সরাসরি তা নাকচ করে দিয়েছেন। রাজীববাবু বলেন, “পুজোর আগে তো খুব বৃষ্টি হয়েছিল, সে জন্যই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার-ঠিকাদার মতভেদের কিছু বিষয়ও রয়েছে। সে সব এখন ঠিক হয়ে গিয়েছে। তোলাবাজির জন্য কাজ বন্ধের কথা একেবারেই ঠিক নয়।” |
রাজীববাবুর মন্তব্যে বিপাকে পড়া ঠিকাদাররা যেমন হতাশ, তেমন বিস্মিতও। তাদের কথায়, মাস দুয়েকের মধ্যে এমন ভারী বৃষ্টি এ রাজ্যে হয়নি যে নদী সংস্কারের কাজ বন্ধ রাখতে হবে। তা ছাড়া দলের স্থানীয় তোলাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উড়িয়ে কার্যত দুষ্কৃতীদেরই উৎসাহিত করছেন মন্ত্রী। অথচ, তাঁর কাছেই বিচারের আশা করেছিল ঠিকাদারেরা।
দল ও সরকারি মহলে ঘুষ দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে দেদার চুরির প্রসঙ্গও তোলেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, সরকারি নিগমগুলিতে এত দিন ‘যা নয় তাই হয়েছে’। এ বার ‘চুরি’ বন্ধ করে কাজের কাজ করে দেখাতে হবে। এ দিন মেলার স্টল ঘুরে দেখার সময়ে কেনাকাটাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে বলেন, “আমি এমনি কারও জিনিস নিই না, পয়সা দিয়ে নিই। তবে আমি তো বড়লোক নই! যেটুকু সামর্থ্য, কেনাকাটা করেছি।” |