|
|
|
|
গুলি করুন, আর্জি ঢেকলাপাড়ার |
ব্লক প্রশাসনের কর্তাকে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন শ্রমিকেরা |
নিলয় দাস • জলপাইগুড়ি |
এতদিনে মনে পড়ল আমাদের কথা? বিডিও দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন ঢেকলাপাড়া বাগানের ১৫ জন শ্রমিক। সেই ১৫ জন শ্রমিক, যাঁরা গত মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে ইচ্ছেমৃত্যুর আর্জি জানিয়েছিলেন। বিডিওকে সেই চিঠির কপিও পাঠিয়েছিলেন তাঁরা। ওই চিঠির কপি পেয়ে শুক্রবার সকালে ঢেকলাপাড়ায় যান বিডিও পেম্বা শেরপা। তাঁকে দেখে শ্রমিকরা প্রায় সমস্বরে বলতে থাকেন, “১০ বছর ধরে কচু ও শাকপাতা সেদ্ধ খেয়ে বেঁচে আছি। কোনদিন আমাদের এখানে উঁকি দিতে দেখিনি আপনাদের। এখন মরতে চাওয়ায় সরকারের মান বাঁচাতে ছুটে এলেন বুঝি? কিছু করতে হবে না আপনাদের। গুলি করে মেরে ফেলুন আমাদের। তাতেই শান্তি পাব।” এমন হতাশা, ক্ষোভের মুখে পড়ে বিব্রত হন বিডিও। তিনি বলেন, “আমি সরকারি কর্মচারী এটা আপনাদের বুঝতে হবে। সরকারের নির্দেশ পেয়েই এখানে এসেছি। আপনারা আমায় ভুল বুঝবেন না। যা দেখলাম আর যা বুঝলাম তা সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানাব। আপনাদের জন্য কী করতে পারি তা দেখা হচ্ছে।” |
|
—নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন সকালে বীরপাড়া-মাদারিহাটের বিডিও বাগানের নেপানিয়া ডিভিশনে গিয়ে ওই ১৫ জন শ্রমিক ও তাদের পরিবারের লোকজনদের জড়ো করান। ওই বৃদ্ধবৃদ্ধাদের অনেকে ঠিকমত চলাফেরা করতে পারেন না। বাগানের কয়েকজন যুবক-যুবতীর কাঁধে ভর দিয়ে তারা একটি জায়গায় জড়ো হন। ওই তালিকায় নাম থাকা বন্ধন কুমহার নামে ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা জানান, বাগান বন্ধের পরে বছর দুয়েক সরকারি ভাতা মেলে। তার পর ৫৮ বছর হয়ে য যাবার কারণে তিনি আর ভাতা পান না। দুই ছেলে নদীতে পাথর ভাঙতে যান। তাঁর আক্ষেপ, “অনুদান বন্ধ করে সরকার যখন আমাদের মত বৃদ্ধবৃদ্ধাদের দায় নিতে চায় না বলে বুঝিয়ে দিয়েছে। তখন বেঁচে থেকে কী লাভ বলুন? এর চাইতে মরা ঢের ভাল।” কষ্টু লোহার নামে ৬৭ বছর বয়সী এক শ্রমিক জানান, তাঁর একটি হাত ভাঙা। স্ত্রীও অসুস্থ। কোনও কাজ করতে পারেন না তাঁরা দুজনে। কষ্টু চিৎকার করে বলতে তাকেন, “আমাদের গুলি করে মেরে রেহাই দিন।” বিডিও সকলকে আশ্বস্ত করে ২-৩দিনের মধ্যে প্রতি পরিবারে ১২ কিলোগ্রাম করে চাল দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন। বীরপাড়া-মাদারিহাটের বিডিও বলেন, “ওই ১৫ জনের অবস্থা খুব খারাপ। আড়ালে রাজনীতি থাকতে পারে। আমি রিপোর্ট দিচ্ছি।” এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জানান, তিনি বষয়টি শুনেছেন। তাঁর মন্তব্য, “৫৮ বছর হলে কেউ ভাতা পাবে না বলে আইন আছে। তবে কেউ যাতে না খেয়ে না মারা যান তা খাদ্য দফতর দেখছে। অসুস্থদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।” এ দিকে তিন মাস ধরে বন্ধ দল মোড় চা বাগানেও মৃত্যুর মিছিল চলছে। ইতিমধ্যে বন্ধ থাকাকালীন সময় ওই বাগানে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে মিশন লাইনের বাসিন্দা বাগানের মহিলা শ্রমিক সাবিনা ওঁরাও (৪২) মারা যান। সাবিনার স্বামী তেলেস্ফোর বলেন, “ঠিক মতো খেতে দিতে পারিনি। দুর্বল হয়ে বউটা মরে গেল। ছেলেটাও কষ্টে আছে। কী যে হবে!” বীরপাড়া-মাদারিহাট পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা ওই বাগানের বাসিন্দা কিশোর পালচের অভিযোগ, “সরকার কাজের ব্যবস্থা করছে না। বাগান বন্ধের পরে এই নিয়ে ১১ জনের মৃত্যু হল।” |
|
|
|
|
|