|
|
|
|
পাচার বাড়ছে গোটা রাজ্যেই |
বালিকা খুন, অভিযুক্ত পাচারকারী প্রতিবেশী |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী অদিতি ভট্টাচার্যের (১১) অপহরণ এবং খুনের ঘটনায় শুক্রবার উত্তাল হয়ে উঠল চাঁপাপুকুর গ্রাম। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা অদিতির পরিবারের প্রতিবেশী আজগর আলি মণ্ডলের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় তার ভাইয়ের গাড়িতেও।
পুলিশ সূত্রে খবর, এলাকায় অবৈধ ভাবে সীমান্ত পারাপার করানোর কাজের জন্য পরিচিত আজগর। কিছু দিন আগে তার বাড়ি থেকে ১৮ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। তাই অদিতির ঘটনায় গ্রামবাসীদের সন্দেহ, আজগরই তাকে পাচারের চেষ্টা করছিল, না পেরে তাকে খুন করে।
বসিরহাটের চাঁপাপুকুর গ্রামে এই ঘটনায় বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বিশাল বাহিনী নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। তিনি বলেন, “মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আজগর, তার মা ও স্ত্রী-সহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।” তবে এই খুনের ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না তাও দেখছে পুলিশ।
সন্তান হারিয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন অদিতির মা কাকলিদেবী। তিনি বলেন, “আজগার যে নারী পাচারের ব্যবসা করে সে কথা এলাকার অনেকেই জানে। মেয়েকে মুম্বই পাচার করছে বলে সন্দেহ বাড়ে, যখন আজগারের বাড়ি থেকে বলা
হয় যে এক লক্ষ টাকা দিলে মেয়েকে ফিরে পাব। আমরা কুড়ি হাজার
টাকা দেব বলার পর ওরা বলে, ওরা ঠাট্টা করছিল।”
পুলিশ জানায়, আজগারের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশীদের এ পারে নিয়ে এসে মুম্বই, দিল্লি, গুজরাতে পাঠানোর কয়েকটা অভিযোগ রয়েছে। আজগার গ্রেফতার হয়েও জামিনে ছাড়া পায়। অদিতি নিখোঁজ হওয়ার পর আজগারের নামে অদিতির পরিবার অভিযোগ করে পুলিশের কাছে। তার প্রতিশোধ নিতে অদিতিকে খুন করা হয়েছে বলে সন্দেহ।
পাচারের উদ্দেশ্যে বালিকা অপহরণ অবশ্য ওই এলাকায় কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নারী পাচারের রমরমা চলছে বসিরহাটে বেশ কয়েক বছরই। কিন্তু মুম্বই থেকে যে সংখ্যায় এই অঞ্চলের মেয়েরা উদ্ধার হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে গত চার-পাঁচ মাসে পাচার ভয়াবহ আকার নিয়েছে, জানালেন নারী পাচার প্রতিরোধকারী এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত বৈতালী গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বসিরহাটের স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া, সন্দেশখানি ১ ও ২, হাসনাবাদ, বসিরহাট ১ এবং ২, মিনাখা থানা ও হিঙ্গলগঞ্জ হল নারী পাচারের কেন্দ্র স্থল। কাজ দেওয়ার নাম করে কিশোরীদের পাচার করা হচ্ছে।” বি এস এফ, পুলিশ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত, গ্রামবাসী, সকলেই জানে এই ব্যবসার কথা। কাজের ‘রেট’ও নির্দিষ্ট - বাড়ি থেকে বার করে আনার জন্য কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা। আর মুম্বইয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৩০-৫০ হাজার টাকা।
দক্ষিণবঙ্গের মতো উত্তরবঙ্গেও নারী পাচার উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে। জলপাইগুড়ি পুলিশ সূত্রের খবর, গত তিন বছরে প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে পাচার। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে জেলার ৩৮ মহিলাকে পাচার করার অভিযোগ ওঠে। ২০১১ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ৬৭। চলতি বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ১০ মাসে ১১৯ জনকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এখনও পর্যন্ত পুলিশ ৮২ জনকে উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার হয়েছে ১৪২ জন।
তবে পুলিশ তৎপর থাকায় আগের তুলনায় উদ্ধারের সংখ্যা বাড়ছে। জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করা হয় না। তাতে সমস্যা বাড়ে।”
উত্তরবঙ্গে চা বাগান বন্ধ। গোটা রাজ্যেই বন্ধ হতে বসেছে পাট কল। হচ্ছে না নতুন শিল্প। আজ এ রাজ্যের রফতানিযোগ্য পণ্য কি তবে কেবল নারী আর বালিকা? |
|
|
|
|
|