তৃণমূল ছাত্র পরিষদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুন্ডামি করছে বলে অভিযোগ করলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সুনন্দ সান্যাল। শুক্রবার মেদিনীপুরে এসে তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষায় রাজনীতিকরণ চাইনি। সিপিএম ক্ষমতা থেকে সরে যাক চেয়েছিলাম। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থক ছিলাম। মমতাও শিক্ষাকে বিরাজনীতিকরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রাখেননি।” তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তো গুন্ডামি করছে। এটা আশা করিনি। এমনটা চলতেও পারে না।” |
শুক্রবার থেকে মেদিনীপুর শহরে শুরু হয়েছে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (বিপিটিএ) ২৩ তম দ্বি-বার্ষিক রাজ্য সম্মেলন। চলবে রবিবার পর্যন্ত। রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে এদিন শহরের কলেজ মোড়ে এক প্রকাশ্য সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। সুনন্দবাবুর পাশাপাশি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ্ পবিত্র গুপ্ত, সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কার্তিক সাহা, রাজ্য সভাপতি তপন রায়চৌধুরী প্রমুখ। সমাবেশের আগে শহরে এক মিছিল হয়। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশ- ফেল তুলে দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধীতা করে সুনন্দবাবু বলেন, “পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুখ্যমন্ত্রী কে? উনি স্কুল- শিক্ষা কমিটি তৈরি করেছিলেন। কমিটির পরামর্শ নিতে পারতেন।” সিপিএমের দেখানো পথেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার হাঁটছে বলে অভিযোগ করে তাঁর মন্তব্য, “তোলাবাজি, সিন্ডিকেট রাজ, চোলাই মদের কারবার, নারী নির্যাতন- সবই চলছে। কিছুরই পরিবর্তন হল না। একটা অনুষ্ঠানে শুনলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএমের মেধাবী ছাত্রী। আমি এই বক্তব্যকে সমর্থন না করে পারছি না।” এই পরিস্থিতিতে সকলকে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সমাবেশ থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শিক্ষানীতির কড়া সমালোচনা করেন উপস্থিত সকলে।
সম্মেলনের প্রতিবেদনেও রাজ্যের শিক্ষানীতির সমালোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্যের অবস্থা শোচনীয়। একদা অগ্রগন্য রাজ্য শিক্ষায় ক্রমাগত পিছিয়ে বর্তমানে ২০ তম স্থানে। অতীত আমলের এই সর্বনাশা অবস্থা বর্তমানেও পরিবর্তনের চিত্র নেই। শিক্ষক নিগ্রহ চরম আকার ধারন করেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের উপর আক্রমণের ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যুক্ত শাসক দলের অনুগামীরা। সরকার অনুগামীদের আড়াল করার অপচেষ্টাও লক্ষ্যনীয়।’ নতুন পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যে পাঠ্যপুস্তকগুলি তৈরি হচ্ছে তার না আছে কোনও বাস্তব ভিত্তি। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মতামতও গ্রহণ করা হচ্ছে না। বই তৈরি হচ্ছে। টিভিতে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু, শিক্ষকেরা দেখতে পাচ্ছেন না। একখানা বই দিয়ে শিক্ষা দেওয়া হবে, বই থাকবে স্কুলে, কোনও হোমটাস্ক থাকবে না, যত সব আজগুবি পরিকল্পনা। কিন্তু, সেগুলি নিয়ে কোনও মতামত নেওয়ার বালাই নেই। যা সরকার করছে- তা মুক বুজে মানতে হবে। এ কোন গণতন্ত্র?’ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাশ- ফেল ও বৃত্তি পরীক্ষা চালু রাখা, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিলেবাস ও পাঠ্যপুস্তক তৈরি করা প্রভৃতি দাবিতে আগামী দিনে জোরদার আন্দোলন হবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব। |