খোঁজা হবে প্রকল্পের গলদ
একশো দিনের কাজে সমীক্ষা ডিসেম্বর থেকে
কশো দিনের কাজের প্রকল্পের (এমজিএনআরইজিএ) হালহকিকত খতিয়ে দেখতে সমীক্ষায় নামছে রাজ্য সরকার। প্রকল্পের কোথায় গলদ রয়েছে, কোনও পরিবর্তন, পরিমার্জনের প্রয়োজন আছে কি না, তা দেখতেই এই সিদ্ধান্ত। সমীক্ষার পরে রাজ্যের তরফে যা প্রয়োজন তা তো করা হবেই, পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হলে তা-ও জানানো হবে। ডিসেম্বর থেকেই শুরু হবে এই সমীক্ষা। চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই (মার্চ, ২০১৩ এর মধ্যে) সমীক্ষার রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে পরিবর্তন বা পরিমার্জনের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চাইছে রাজ্য। একশো দিনের প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা রাজ্যের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার বলেন, “যে উদ্দেশ্য নিয়ে একশো দিনের প্রকল্প চালু করা হয়েছিল তার সঠিক রূপায়ণ হচ্ছে কি না, যদি না হয় কোথায় ত্রুটি থাকছে, কী ভাবে তা সংশোধন করা যায়, তা খতিয়ে দেখতেই সমীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
তবে সর্বত্র নয়, সমীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে তিনটি জেলাকে। মালদহ, বীরভূম এবং পিছিয়ে পড়া মাওবাদী অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুর। ২০০৬-০৭ আর্থিক বছরে এ রাজ্যে একশো দিনের প্রকল্প শুরু হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রথম বছরে ৬ লক্ষ পরিবারকে জব-কার্ড দেওয়া হয়েছিল। কাজ চেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৭ হাজার পরিবার অর্থাৎ ৫৭ শতাংশ। গড়ে কাজ পেয়েছিলেন ১৬ দিন। শ্রম দিবস তৈরি হয়েছিল ৫৮ লক্ষ ৩ হাজার। ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ সালে গড়ে ২৪ দিন ও ২৭ দিন কাজ দেওয়া গিয়েছিল। শ্রম দিবস তৈরি হয়েছিল ৭৬ লক্ষ ১০ হাজার ও ৮৬ লক্ষ ৬৯ হাজার। পরের বছর কাজ পাওয়ার গড় বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ দিন। শ্রম দিবস তৈরি হয় ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ১২ দিন। ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ আর্থিক বছরে যথাক্রমে গড়ে ৩৫ দিন ও ২৮ দিন কাজ পান আবেদনকারীরা। শ্রম দিবস তৈরি হয় ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৩৭ দিন ও ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৩৮ দিন। আর চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত গড়ে ২৬ দিন কাজ পেয়েছেন আবেদনকারীরা। জব-কার্ডের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮ লক্ষ ৯৩ হাজার। শ্রম দিবস তৈরি হয়েছে ৮৫ লক্ষ ৬২ দিন।
এখন প্রশ্ন কাজ পাওয়ার গড় বেড়েও হঠাৎ কমে গেল কেন? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯-১০ সাল পর্যন্ত টাকা চাইলেই পাওয়া যেত। বহু ক্ষেত্রে আর্থিক নয়ছয়েরও অভিযোগ ওঠে সেই সময়। এমনকী প্রকল্পের কাজ না করেও খরচের হিসেব দেওয়ার অভিযোগ বা একাধিক প্রকল্পে একই কাজ করার অভিযোগও ওঠে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্যান পালন দফতরের মাধ্যমে যে পুকুর সংস্কার করা হয়েছিল, সেই পুকুরকেই আবার একশো দিনের প্রকল্পে সংস্কার দেখানো হয়েছিল, আবার সেই একই পুকুরকে ভূমি সংরক্ষণ দফতরও খনন করেছিল। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র নির্দেশ দেয়, টাকা খরচের সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে হিসাব দিতে হবে প্রকল্পের ওয়েবসাইটে, তাহলেই পরবর্তী টাকা মিলবে। শ্রম দিবস কমে যাওয়ার জন্য জঙ্গলমহলে অশান্তিও একটি কারণ বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়াও কাজ চেয়ে যে আবেদন জানাতে হয়, এমন কথা অনেকেরই অজানা। তাঁদের ধারণা, জব-কার্ড থাকলেই কাজ মিলবে। সে বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি। কমিশনার বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরে কাজের গতি খুব ভাল বলা যায় না। ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
এই ধরনের প্রতিটি ত্রুটি চিহ্নিত করতেই এই সমীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূলত, তিনটি বিষয়ের উপর নজর দেওয়া হবে মহিলাদের যোগ দান, কাজের সন্ধানে এখনও মানুষকে অন্যত্র যেতে হচ্ছে কি না এবং প্রকৃত অর্থে সম্পদ তৈরি হচ্ছে কি না। সরকারি নির্দেশিকাতেই বলা রয়েছে, অন্তত এক তৃতীয়াংশ মহিলার যোগ দান জরুরি। এ ছাড়াও এই প্রকল্পে কোন কাজ সব থেকে বেশি করা হয়েছে, পুকুর খনন না রাস্তা তৈরির প্রয়োজন ছিল কি না, তা ব্যবহার হচ্ছে কি না, সমীক্ষায় তা দেখা হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে এই প্রকল্পে রাস্তা তৈরির কাজ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ জারি করে রাস্তা তৈরি বন্ধ করতে হয়। পরিবর্তে পুকুর খনন, জমি সমতলীকরণ, সেচের ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়ার নির্দেশ দিতে হয়। সমীক্ষায় আরও যে বিষয়গুলি দেখা হবে তা হল, সব পরিবারকে জব-কার্ড দেওয়া সম্ভব হয়েছে কিনা, জব-কার্ড থাকা সত্ত্বেও অনেকে কাজ করছেন না কেন, নাকি কাজ দেওয়া যাচ্ছে না বা সচেতনতার অভাবে তাঁরা কাজের দাবি জানাতে পারছেন না। ১৫ দিনের কম কাজ পেলে কেন এমন ঘটনা ঘটল, ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে টাকা দেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে কি না। এমনিতেই মাস্টার রোল খতিয়ে দেখে পঞ্চায়েত ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেয়। ব্যাঙ্ক সেই টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা দিতে আরও কিছুটা সময় নেয়। এই প্রক্রিয়াগত কারণে কাজে আগ্রহ কমছে কি না, তা সমীক্ষায় দেখা হবে। কমিশনার জানিয়েছেন, আগামী মার্চের মধ্যেই সমীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করা হবে। তখনই বোঝা যাবে প্রকল্পে কোনও পরিবর্তন বা পরিমার্জন প্রয়োজন কি না।
সমীক্ষার কাজে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের রিসার্চ ফেলোরা। তিনটি জেলায় ৫ জন রিসার্চ ফেলো গ্রামীণ উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁরাই পুরো বিষয়টি সমন্বয় করবেন। কমিশনারের কথায়, “এই সমীক্ষা আসলে একটি গবেষণামূলক কাজ। এটি গুরুত্ব দিয়েই করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.