নিহত তৃণমূল নেতার দেহ উদ্ধারে গিয়ে বেগ পেতে হল পুলিশকে।
শুক্রবার ভোরে গোপালনগরের মুড়িঘাটা-মামুদপুর সড়কের ধারে পড়ে থাকতে দেখা যায় তৃণমূলের গঙ্গানন্দপুর অঞ্চল সভাপতি অরুণকুমার বিশ্বাসের ক্ষত-বিক্ষত দেহ। তদন্তে আসেন ডিআইজি (পিআর) অনিলকুমার, উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন। আসেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস প্রমুখ। পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। দাবি ওঠে, নিহত নেতার কেটে ফেলা হাত খুঁজে বের করতে হবে। দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিও ওঠে। পরে পুলিশ কুকুর এসেও অবশ্য বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। ফলে, জনরোষ প্রশমিত হয়নি। শেষমেশ জ্যোতিপ্রিয়বাবু এবং বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস-সহ তৃণমূল নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে পুলিশ বেলা ১টা নাগাদ দেহ উদ্ধার করে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্তে পাঠায়।‘জনদরদী’ হিসাবে এলাকায় সুনাম ছিল অরুণবাবুর। নিজে তৃণমূল নেতা হলেও রাজনীতির রঙ না দেখেই মানুষের পাশে থাকতেন বলে বাসিন্দারা একবাক্যে জানালেন। গঙ্গানন্দপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের জাফর আলি মণ্ডল বলেন, “রাজনীতির গণ্ডির বাইরেও ওঁর একটা গ্রহণযোগ্যতা ছিল। আমরা এলাকার বাসিন্দারা কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়লাম।” একই সুর শোনা গিয়েছে মামুদপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রমেন ঘোষের কথায়। এ দিন বাজারের দোকান-পাট সমস্ত বন্ধ ছিল। অরুণবাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে একই দিনে দু’বার হামলা হয়েছিল তাঁর উপরে। অরুণবাবুর ছেলে অমিত ও অসিত বাবার সঙ্গেই মামুদপুর বাজারে কাঁসা-পিতলের ব্যবসা সামলাতেন। অমিতের কথায়, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাবার রাজনৈতিক ব্যস্ততা বেড়েছিল। ফিরতে অনেক সময় রাত হয়ে যেত। আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ভোরের দিকে মা (কল্পনাদেবী) ঘুম থেকে তুলে জানান, বাবা রাতে বাড়ি ফেরেননি। বাবার মোবাইলও বন্ধ।” অসিত সে কথা শুনে বেরিয়ে পড়েন। তারপরেই জানতে পারেন, বাবার দেহ মিলেছে বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ গাজিপুরে অরুণবাবুর বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষ্মণ বিশ্বাসের। খানিক ক্ষণ গল্পগুজব করে এগিয়ে যান লক্ষ্মণবাবু। এ দিন সন্ধ্যায় তাঁকে দেখা গেল, অঝোরে কাঁদছেন। বললেন, “বড্ডো আফসোস হচ্ছে। কেন যে বাড়ি অব্দি পৌঁছে দিয়ে এলাম না!” |