বাঁ হাতটা কব্জির তলা থেকে উধাও। মুখে-গলায় ধারাল অস্ত্রের কোপ। তৃণমূল নেতার রক্তাক্ত দেহটি রাস্তার ধারে পড়েছিল এই অবস্থায়। পরে পুলিশ আসে, পুলিশ কুকুর আসে। আসেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। বনগাঁর গোপালনগর থানার গঙ্গানন্দপুরের জনপ্রিয় তৃণমূল নেতা অরুণকুমার বিশ্বাসকে (৫৫) খুনের ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘটনার দায় চাপিয়েছেন সিপিএমের উপরে।
এলাকাবাসীর একটা বড় অংশের মত, গরু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার জেরেই এই পরিণতি হল অরুণবাবুর। ২০০৯ সালের পর থেকে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষকে সংগঠিত করার কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যও কমেছিল। পাচারকারীদের কোনও দল অরুণবাবুর উপরে হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশের একাংশও। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “তদন্ত চলছে। খুনে জড়িতরা শীঘ্রই ধরা পড়বে।” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপালনগরের মামুদপুর বাজারে অরুণবাবুর কাঁসা-পিতলের দোকান আছে। বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে ৯টার পরে দোকান বন্ধ করে বেরিয়েছিলেন। রাতে বাড়ি ঢোকেননি। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ জানা যায়, বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মুড়িঘাটা-মামুদপুর সড়কের ধারে পড়ে আছে তাঁর ক্ষত-বিক্ষত দেহ।
ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক কারণও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
২০০৮-এর আগে পর্যন্ত চারবার গঙ্গানন্দপুর পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন অরুণবাবু। তৃণমূল এ বার পঞ্চায়েত ভোটে জিতেছিল তাঁরই নেতৃত্বে। শুরু থেকেই তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল প্রবল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ‘আমরা-ওরা’ বিভেদ করেননি কখনও।
এ দিন এলাকায় এসে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “সামনে পঞ্চায়েত ভোট। সে জন্যই সিপিএম চক্রান্ত করে খুন করল ওঁকে।” একই বক্তব্য বনগাঁ (উত্তর) কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের। সিপিএমের বনগাঁ জোনাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ ঘোষ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “পুলিশ-প্রশাসন তদন্ত করুক। তা হলেই সত্য উদ্ঘাটন হবে।” ঘটনাস্থলেই জ্যোতিপ্রিয়বাবুর মোবাইলে ফোন আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দোষীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন তিনি। পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের একাংশ মনে করছে, পুরনো আক্রোশেই খুন হতে হল অরুণবাবুকে। কী সেই আক্রোশ? ২০০৯ সালে গোপালনগরে সহদেব সরকার ওরফে নাড়ু নামে এক দুষ্কৃতীকে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুন করে জনতা। অরুণকুমার-সহ কয়েক জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। নাড়ুরও বাঁ হাত ছিল না। অরুণবাবুরও বাঁ হাত কব্জির নীচ থেকে কেটে নেওয়ায় সন্দেহ, পাল্টা প্রতিশোধে খুন হয়েছেন তিনি। |