খেলার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী অদিতি ভট্টাচার্য (১১)। দু’দিন পরে বাড়ির কাছে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির লাগোয়া জলায় মেয়ের মৃতদেহ পেলেন বাবা-মা। শুক্রবার সকালে অদিতির মৃতদেহ উদ্ধারের পর তাকে অপহরণ করে খুন করার অভিযোগে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা আজগর আলি মণ্ডলের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় তার ভাইয়ের গাড়িতেও। বসিরহাটের চাঁপাপুকুর গ্রামে এই ঘটনায় এসডিপিও আনন্দ সরকার বিশাল বাহিনী নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। তিনি বলেন, “মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আজগর, তার মা ও স্ত্রী-সহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে অদিতি খুনের আসল কারণ জানা যাবে।” এ দিন সন্ধ্যায় ডিআইজি অনিল কুমার এবং উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা অদিতির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন এবং উপযুক্ত তদন্ত করে দোষীদের কড়া শাস্তির আশ্বাস দেন।
আজগরের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠলেও তার বক্তব্য, “মানুষ ‘পারাপার’ করি এটা সত্যি। ওদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কও ভাল। ওকে মেয়ের মতো দেখতাম। খুন করার কথা ভাবতেই পারি না। অন্য কেউ শত্রুতা করে আমার বাড়ির সামনে দেহ ফেলে রেখে আমাকে ফাঁসিয়েছে। পুলিশি তদন্তেই সব জানা যাবে।”
বসিরহাট শহর লাগোয়া চাঁপাপুকুর এলাকায় মহিলা পাচার নিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত আজগর এলাকায় ধুর পাচারকারী খোঁড়া আজগর (একটি পা খারাপ) নামে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও রয়েছে। কিছুদিন আগেই তার বাড়ি থেকে ১৮ জন বাংলাদেশিকে আটক করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় আজগরকে। |
সম্প্রতি সে জামিনে ছাড়া পায়। চাঁপাপুকুরে বড় রাস্তার একদিকে বাড়ি অদিতির বাবা পেশায় ভ্যানচালক গণেশবাবুর। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর বাড়ির উল্টোদিকেই বাড়ি আজগরের। দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কও ছিল ভাল। স্থানীয় চাঁপাপুকুর হাইস্কুলের ছাত্রী বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ খেলার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বলে মা কাকলীদেবী জানান। মেয়ে বিকেল পর্যন্ত না ফেরায় গণেশবাবু সন্ধ্যায় বসিরহাট থানায় নিখোঁজ ডাইরি করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অদিতিদের বাড়ির কাছেই একটি বাড়ি তৈরি হচ্ছিল। সেখানেই তাকে শেষ দেখা যায়। বাড়ির ভিতের মাটি কাটার জন্য সেখানে জল জমে ছিল। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই দিন গণেশবাবু জলে নেমে খোঁজাখুঁজি করলেও মেয়ের সন্ধান পাননি। ফিরে যায় পুলিশ। অথচ শুক্রবার সেখানেই অদিতির দেহ মেলায় রহস্য দানা বেঁধেছে।
বৃহস্পতিবার প্রতিবেশী আজগরের বাড়িতে একজন অপরিচিত লোককে দেখে সন্দেহ হয় গণেশবাবুর। তিনি পুলিশকে তা জানালে পুলিশ এসে আজগর এবং তার মা ও আলম মণ্ডল নামে ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। কাকলীদেবীর দাবি, “ওদের পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পরে আজগরের স্ত্রী মেহেরুন বিবি আমাকে বলে ‘লাখ টাকা দিলে তবে মিলবে মেয়ে’। এ কথা শুনে আমি বলি অত টাকা কোথায় পাব? কুড়ি হাজার টাকা হলে দিতে পারি। এ কথা শুনে মেহেরুন বলে সে আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করছিল।” কাকলীদেবীর বক্তব্য, “এমন বিপদের সময় কেউ ইয়ার্কি করতে পারে? আসলে বিপদে পড়েছে বুঝতে পেরে ওরা কথা ঘুরিয়ে দেয়।” গণেশবাবুর বক্তব্য, “আজগর যে মেয়ে পাচারের সঙ্গেও জড়িত তা পুলিশকে জানানোয় তা জানতে পেরে তার স্ত্রী আমাদের এই বলে শাসায় যে, লাখ টাকা দিলেও মেয়েকে ফিরে পাবি না। তাই ওরাই আমার মেয়েকে খুন করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস।” |