কলকাতায় বর্ধিত বাস ভাড়া চালু হলেও ঘোষণার ১০ দিন পরেও সরকারি নির্দেশনামা পৌঁছয়নি অনেক জেলাতেই। ফলে বর্ধিত বাসভাড়া সেই সব জেলায় চালু না হওয়ায় বিভিন্ন রুটে পর্যাপ্ত সংখ্যায় যাত্রীবাহী বেসরকারি বাস চলাচল করছে না বলে বাস মালিক সমিতি ও বাস শ্রমিক সংগঠন গুলির দাবি। অন্য দিকে যাত্রী সমিতি গুলির দাবি, সরকার বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাস খানেক আগেই বাসের মালিক পক্ষ ও বাসের শ্রমিকরা খুশি মতো বধির্র্ত ভাড়া জবরদস্তি আদায় করার ঘটনায় দু’ পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। এই অবস্থায় রাস্তায় বাসের দেখা সহজে মিলছে না। আসলে, বসে যাওয়া বাসের মধ্যে মাত্র ৫০টি আবার চালু করা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় ভাগীরথীর নদীর দুপাড় দিয়ে তিন-চার কিলোমিটার তফাত দিয়ে প্রায় সমান্তরাল ভাবে দু’টি রেলপথ রয়েছে। নদীর পশ্চিমপাড়ের রাঢ় এলাকা দিয়ে চলে গিয়েছে পূর্বরেলের হাওড়া ও মালদহ বিভাগের রেলপথ। নদীর পূর্বপাড়ে বাগড়ি এলাকা দিয়ে চলে গিয়েছে শিয়ালদহ বিভাগের রেললাইন। কিন্তু ওই দু’টি রেললাইনের মধ্যে তফাত বড়জোর তিন-চার কিলোমিটার হওয়ায় রেলপথ পরিবহণ ব্যবস্থায় সুফল থেকে প্রায় গোটা জেলাটাই বঞ্চিত। সে ক্ষেত্রে মুর্শিদাবাদ জেলার ৭২ লক্ষ মানুষকে নির্ভর করতে হয় সড়ক পরিবহণের উপর। সেই সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থাও মূলত বেসরকারি বাস ও লরির উপরই নির্ভরশীল।
মুর্শিদাবাদ ও লাগোয়া জেলা ছাড়াও রয়েছে কলকাতা, শিলিগুড়ি, কুচবিহার, দিঘা, দুর্গাপুরের মতো দূরপাল্লার বেসরকারি বাস পরিবহণ ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে বেসরকারি বাসের সংখ্যা প্রায় সাড়ে আটশো। মুর্শিদাবাদ জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক তপন অধিকারী ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট’-এর রাজ্য সভাপতিও। তপনবাবু বলেন, “২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পর আর বাসভাড়া বাড়েনি। অথচ যন্ত্রাংশ, টায়ার ও জ্বালানি-সহ বিভিন্ন উপকরণ ও শ্রমিকের বেতন বেড়েছে। ফলে পূর্বের ভাড়ায় খরচ না ওঠায় প্রায় আড়াইশোটি বাস বসে গিয়েছে। পুজো-ঈদ উপলক্ষে ও নতুন বর্ধিত ভাড়ার সিদ্ধান্তের কথা সরকারি ভাবে ঘোষণা করায় বসে যাওয়া বাসের মধ্যে ৫০টির মতো চালু হয়েছে। নতুন বধির্র্ত ভাড়া কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত বাকি বাসগুলির মালিকরা রুটে বাস নামাতে নারাজ।”
তপনবাবুর দাবি, “বর্দ্ধিত বাসভাড়ার সরকারি সিদ্ধান্ত গত ৩০ অক্টোবর ঘোষণা করা হলেও আজ পর্যন্ত ওই সম্পর্কিত সরকারি আদেশনামা মুর্শিদাবাদ-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আজও পৌঁছয়নি।” বাস শ্রমিকদের ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ‘মুর্শিদাবাদ জেলা মোটর শ্রমিক সমন্বয় কমিটি’র নির্বাহী সম্পাদক জয়দেব মণ্ডল বলেন, ‘‘বর্ধিত বাসভাড়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত সরকারি আদেশনামা কলকাতা থেকে জেলায় পৌঁছনোর পর আর টি ও বোর্ডের সদস্যরা বসে নতুন করে ভাড়ার তালিকা তৈরি করবেন। তাতেও বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে। ফলে বসে যাওয়া বাসগুলির শ্রমিকদের আরও কিছু দিন দুর্দিনের মধ্যে কাটাতে হবে।’’ মুর্শিদাবাদ জেলার সদ্য নিযুক্ত আর টি ও ইন্দ্রনীল বসু অবশ্য বলেন, “বর্ধিত বাসভাড়ার সরকারি সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত সরকারি আদেশনামা আজ-কালের মধ্যেই হাতে পেয়ে যাব। পাওয়ার পর পরিবর্তিত ভাড়ার তালিকা তৈরি করা হবে। অল্প দিনের মধ্যেই নতুন ভাড়া চালু করা হবে।” বাসযাত্রীদের প্রায় ১৫টি সংগঠন নিয়ে গঠিত ‘মুর্শিদাবাদ জেলা নিত্যবাসযাত্রী সমিতি সমন্বয় কমিটি’র আহ্বায়ক জগন্ময় চক্রবর্তীর অভিযোগ, “সরকার বাসের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করারও মাস খানেক আগে থেকে যন্ত্রাংশ, টায়ার ও জ্বালানি-সহ বিভিন্ন উপকরণের খরচ বেড়ে যাওয়ার কথা বিবেচনা করে আমরা নিত্যযাত্রীরাই স্বেচ্ছায় ১০ টাকার বদলে ভাড়া ভাড়া বাড়িয়ে ১২ টাকা দিতে শুরু করি। কিন্তু মালিক ও শ্রমিকরা ১৫ টাকা আদায় করার জন্য জবরদস্তি শুরু করে। তার ফলে কেবল বহরমপুর-কান্দি রুটেই রাজ্য বিদ্যুৎ বিভাগের বয়স্ক ডেপুটি ম্যানেজার ও একজন বয়স্ক ব্লক ওয়েলফেয়ার অফিসার বাস শ্রমিকদের হাতে নিগৃহীত হন।” ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট’-এর রাজ্য সভাপতি তপনবাবু ও ‘মুর্শিদাবাদ জেলা মোটর শ্রমিক সমন্বয় কমিটি’র নির্বাহী সম্পাদক জয়দেববাবু বলেন, “২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের বর্ধিত ভাড়ার সবটা আদায় করা যেত না। এ দিকে যন্ত্রাংশ, টায়ার ও জ্বালানি ইত্যাদির খরচ বেড়ে যাওয়ায় গাড়ি নামানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তখন ‘সঠিক ভাড়া আদায় কর্মসূচি অভিযান’-এ নামি। তখনই বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।” কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে নতুন বর্ধিত ভাড়া আদায় শুরু হলে পরিস্থিতিটা কেমন দাঁড়াবে তা অবশ্য ভবিষ্যতই বলবে। |