|
|
|
|
কানা ময়ূরাক্ষীতে কড়াইয়েই পারাপার |
কৌশিক সাহা • কান্দি |
হাত বাড়ালেই রাস্তা, কিন্তু সামনে যে কানা ময়ূরাক্ষী!
খুলিগ্রাম, রঘুপুর, শান্তিপুর কিংবা গোলাহাট থমকে আছে তার সামনেই। সামনে একটা নড়বড়ে বাঁশের সেতু। টলমল করে তার উপর দিয়েই মানুষ, গরু এবং মোটরসাইকেল। পারাপার করেন অসুস্থ, ন্যূব্জ এমনকী প্রসূতিও।
বর্হিজগতের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার ওই চার গ্রামের টালমাটাল যোগাযোগ সরু সুতোর মতো ঝুলে রয়েছে ওই সেতুতেই। বর্ষায় অবশ্য যোগাযোগের সেই শেষ ভরসাটুকুও ধুয়ে যায়। ময়ূরাক্ষীর স্রোতে ভেসে যায় বাঁশের সেতু। আর তখন খুলিগ্রাম-সহ চার-চারটি গ্রামের মানুষ ভেসে পড়েন কড়াইয়ে!
হ্যাঁ, নদী পারাপারের জন্য নৌকা নয়, ওই গ্রামগুলির ভরসা লোহার কড়াই। ভাড়া জন প্রতি তিন টাকা।
গ্রীষ্মের মরা ময়ুরাক্ষী আষাঢ়-শ্রাবণে বাস্তবিকই কানায় কানায় পূর্ণ। নদী পারাপারের জন্য ওই চারটি গ্রামের মানুষ সেই সময়ে পড়শি গ্রাম লাহারপাড়া থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসেন রস জ্বাল দেওয়ার সুবৃহৎ লোহার কড়াই। গ্রামীণ যুবকদের একাংশের আয়ের পথও খুলে যায় সে মরসুমে। খান পাঁচেক কড়াই নিয়ে নদীর পারে কড়াইয়ের খেয়া নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকেন তাঁরা। দু বছর আগেও ভাড়া ছিল সাকুল্যে এক টাকা। এখন তা ৩ টাকা। কিন্তু সেই ঝুঁকির পারাপারে কচি-কাঁচাদের স্কুলে যাওয়া? খুলিগ্রামের পঞ্চম শ্রেণির স্বপন মল্লিক জানায়, “নদীতে জল বাড়লে কড়াইয়ে পারাপার করতে খুব ভয় লাগে। তাই তখন আর স্কুলে যাইনা।” |
|
|
বর্ষার ভরসা লোহার কড়াই (বাঁ দিকে)। অন্যথায় চার-গ্রামে যোগাযোগের সেতু। ছবি: গৌতম প্রামাণিক। |
|
গ্রামের হাজার দশেক মানুষ গত কয়েক দশক ধরে প্রশাসনের কাছে দরবার করে আসছেন, একটা সেতু। বাঁশ নয়, ফুট দশেক চওড়া পাকা একটা সেতু। এই আব্দার নিয়ে কত বার কাকুতি মিনতি করেছেন গ্রামের মানুষ, স্থানীয় প্রশাসন থেকে পঞ্চায়েত। কিন্তু সাড়া দিলে তো!
নির্বাচনের আগে রাজনীতির ‘খেলুড়েরা’ গ্রামে এসে গাল ভরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান, প্রতি বার। রঘুপুরের আনারুল শেখ বলেন, “ওঁরা আসেন কথা দেন। কিন্তু কথা রাখেন না। আমরা এই আশ্বাসেই অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি!” তিন থেকে পাঁচ বছর অন্তর, নির্বাচন বদলে যায় পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভায়। কিন্তু গ্রামের মানুষের ভোটে সেই নির্বাচন-বৈতরনী পেরিয়ে গেলেও গোলাহাটার সেই পাকা সেতুর স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে।
চারটি গ্রামের মানুষের সঙ্গে রাজ্য সড়কের ঘুর পথে যোগাযোগ করা যায় না এমন নয়। কিন্তু পাকা সড়কের খোঁজে ভাঙতে হয় অন্তত সাড়ে চার কিলোমিটারের মাঠ-ঘাট, আল পথ। তারপর পাকা সড়ক। কিন্তু সেই অগম্য পথে গাড়ি তো দূরের কথা, সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করাও সম্ভব নয়। তাই অন্ধের যষ্ঠির মতো কানা ময়ূরাক্ষীর উপরে ওই সেতুই ভরসা। এবং গ্রামের অনেকেই ধরে নিয়েছেন, এটাই তাঁদের ভবিতব্য। তাঁদেরই এক জন খোকন মিঁঞা বলেন, “এ জন্মে আর ওই সেতু দেখে যেতে পারব বলে মনে হয় না!”
স্থানীয় বিধায়ক কংগ্রেসের অপূর্ব সরকার। তিনি বলছেন, “এ বার পাকা সেতু হবেই। টেন্ডার ডেকে বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় সাংসদ অধীর চৌধুরীর এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকেই অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে।” কিন্তু কবে?
আগামী বর্ষায় প্রতিশ্রুতি ফের ভেসে যাবে নাতো কানা ময়ূরাক্ষীর স্রোতে! |
|
|
|
|
|