ইভ-টিজিং রুখতে নজর রাখবে ক্লাবের ছেলেরা
কালীপুজোর রাতে ইভটিজিং রুখতে মণ্ডপ চত্বরের আসেপাশেই থাকবেন বহরমপুর গোরাবাজারের স্যান্টাফোকিয়া ক্লাবের একশো স্বেচ্ছাসেবী। তাঁদের মধ্যে থাকবেন বেশ কয়েকজন মহিলাও। ভিড়ের মধ্যেই মিশে থাকবেন তাঁরা। তাই কেউ সেই ভিড়ের সুযোগে কোনও মহিলার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে, ধরা পড়বেন সেখানেই। পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক অতীশ সিংহ (কাল্টু) বলেন, “আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা ভিড়ে মিশে থাকায়, সারাক্ষণই নজরদারি রাখা সম্ভব হবে। কী ভাবে সেই নজরদারি রাখতে হবে, তা-ও আমরা স্থির করেছি।” সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ রাখব যাতে অবাঞ্ছিত ভাবে কেউ বাজিও না ফাটায়।” একই ভাবে ফৌজদারি বাজারের কাছে এমজিওয়াইএস ক্লাব কর্তা সমিত মজুমদার বলেন, “প্রতিমা ও পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে আমাদের মণ্ডপে প্রতি বছরই উপচে পড়া ভিড় হয়। ভিড়ের মাঝে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্য ক্লাব সদস্যরা সতর্ক থাকেন।” বাজি থেকে অগ্নিকাণ্ড খুবই দ্রুত ঘটে যেতে পারে। বহরমপুর শহরের বেশিরভাগ উদ্যোক্তারাই তাই কালী পুজোর রাতে বাজি ফাটানোর উপরে কড়া নজরদারি রাখবেন বলে জানিয়েছেন।
দীপাবলির রাতে সাধারণত রাস্তায় বেরোন কম লোক। প্রধানত বাজির ভয়েই রাস্তাঘাটে গাড়িঘোড়াও কম থাকে।
কালীপুজোর প্রস্তুতি। বহরমপুরে নিজস্ব চিত্র।
তেমনই সেই রাতে বেশি থাকে মদ্যপের উপদ্রবও। সমিতবাবু বলেন, “সে কারণেই ওই রাতে কোনও মহিলা একা পড়ে গেলে সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই আমরা ঠিক করেছি, পুজোর মণ্ডপের এলাকা তো বটেই, গোটা চত্বর জুড়েই আমাদের ছেলেরা নজর রাখবে।” সমিতবাবু জানান, সম্প্রতি পুজো নিয়ে বৈঠক করতে গিয়েই এক সন্ধ্যায় আচমকা তাঁরা এক মহিলার আর্তনাদ শুনতে পান। তিনি বলেন, “আমরা সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে ছুটে গিয়ে দেখি ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে এক মহিলাকে ঘিরে রয়েছে কয়েকজন যুবক। তারা অবশ্য আমাদের দেখেই পালিয়ে যায়। আমাদের ছেলেরা ছুটে গিয়ে তাদের কয়েকজনকে ধরে ফেলে। ওই মহিলা আমাদের বলেছিলেন, তাঁকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওই যুবকেরা কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। তাতে তিনি আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করেন।”
বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার ময়দান লাগোয়া ক্যান্টনমেন্ট রাস্তায় পরপর অনেকগুলো পুজো হয়। ওই রাতে সেই সব পুজোর চত্বর ছাড়ালেই অন্ধকারের রাজত্ব। ময়দানের চারপাশে আলো থাকলেও ভিতরে আঁধার। তা ছাড়া, লোকজনও থাকবে না। সেটাই সব থেকে ভয়ের। শহরের বাসিন্দা দেবাশিস মজুমদার বলেন, “সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ বাস টার্মিনাসের কাছে ফাঁকা রাস্তায় এক দম্পতি কিছু বদলোকের পাল্লায় পড়েছিল। ওই মহিলার শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা হয়। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেরা ছুটে গিয়ে ওই দম্পতিকে রক্ষা করেন। সেই শহরে কালীপুজোর রাত নিয়ে ভাবনা তো হয়ই।”
কালীপুজোয় ‘ইভটিজিং’ রুখতে জেলা পুলিশ প্রশাসন বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, “পুজোর ভিড়ে মিশে থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ। তার মধ্যে মহিলাও থাকবে। এছাড়াও টহল দেবে পুলিশের গাড়ি। সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটিগুলিকেও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করার অনুরোধ করা হয়েছে।”
দেবাশিসবাবুই অবশ্য বলেন, “আসলে ক্লাবের ছেলেরা যদি এলাকার উপরে নজরদারি রাখে, তা হলেই এই সব দুষ্কর্ম কমে যাবে।” একই কথা বলেন ব্যবসায়ী টুপু ঘোষ। তাঁর কথায়, “পাড়া সংস্কৃতি এখনও রয়েছে। সেটাই বাঁচোয়া।” প্রবীণ নাগরিক তথা প্রাক্তন শিক্ষক বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশি নজরদারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি প্রতি পাড়ার ছেলেরা নিজেদের পাড়ার উপরে নজর রাখে, তা হলে তার থেকে ভাল আর কিছু হয় না। অতীতে বহরমপুরে সেই সংস্কৃতি ছিল। এখনও রয়েছে বলে বিশ্বাস করতে চাই। তা হলে শুধু কালীপুজোর রাতই নয়, নির্বিঘ্নে পেরিয়ে আসা যাবে অনেক অন্ধকারই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.