|
|
|
|
এই সপ্তাহান্তে রেশনে চাল নেই পশ্চিমে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সরকারের চালের ভাঁড়ার শূন্য। ফলে চলতি সপ্তাহে অর্থাৎ শুক্র থেকে রবিবার রেশনে চাল পাবেন না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সাধারণ গরিব মানুষ। তবে এই সঙ্কট কতদিন চলবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যদি দ্রুত লেভি সংগ্রহ শুরু না করা হয় তাহলে সঙ্কট তীব্রতর হবে। সেক্ষেত্রে পরপর ২-৩ সপ্তাহ রেশনে চাল নাও মিলতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন রেশনের চালের উপরেই নির্ভরশীল দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসকারী মানুষেরা। তবে প্রশাসন দ্রুত এই সমস্যা মেটাতে তৎপর বলে দাবি পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রজত সাইনির। তিনি বলেন, “দু’চারদিনেই মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে। সাধারণ গরিব মানুষ যাতে চাল পান সে জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” তবে প্রশাসন আশ্বাস দিলেও তা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
চালের সঙ্কট শুরু হয়েছিল চলতি বছরের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে। কিন্তু পুজোর সময়ে রেশনে চাল না পেলে বিক্ষোভের আশঙ্কায় হাওড়া থেকে চাল নিয়ে এসে সমস্যা সামাল দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু এ বার ডিস্ট্রিবিউটারেরা হাওড়া থেকে চাল আনতে রাজি হচ্ছেন না। প্রশাসন সূত্রে খবর, এমনিতেই রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ডিস্ট্রিবিউটাদের বকেয়া পাওনা রয়েছে। ফলে তাঁরা নিজেদের খরচে চাল কিনে বেশি টাকা পরিবহন খরচ দিয়ে চাল আনতে অস্বীকার করছেন। এছাড়া হাওড়াতে দীর্ঘদিন গুদামে মজুত থাকা চালের গুনগত মানও অনেকটাই কমে গিয়েছে। ফলে চলতি সপ্তাহে, অর্থাৎ শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত যে রেশন দোকানগুলি থেকে উপভোক্তাদের চাল পাওয়ার কথা, তাঁরা তা পাবেন না।
কিন্তু হঠাৎ এই সঙ্কট কেন? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্থ সঙ্কটই মূল কারণ। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৬১ লক্ষ রেশন কার্ড রয়েছে। যার মধ্যে জঙ্গলমহলে বিপিএল তালিকায় থাকা ইউনিটের সংখ্যা ১৪ লক্ষ (প্রাপ্ত বয়স্ক এক ইউনিট, ১২ বছরের নীচে অর্ধেক ইউনিট), আর জঙ্গলমহলের বাইরে থাকা বিপিএলের সংখ্যা ১১ লক্ষ। এছাড়াও অন্তোদয় রয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ ও অন্নপূর্ণা সাড়ে ৩ হাজার ইউনিট। এই সমস্ত মানুষকে চাল দিতে সপ্তাহে ২৯০০ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন। কিন্তু, সম্প্রতি ইউনিট প্রতি বরাদ্দ বাড়ায় প্রয়োজনীয়তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫১০০ মেট্রিক টন। গত বছরে জেলায় লেভি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয় ২ লক্ষ ২৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। তার বাইরে প্রয়োজনে এফসিআই (ফুড কর্পোরেশন অব ইণ্ডিয়া) থেকে চাল নেওয়া হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, মাঝে বরাদ্দ বাড়ায় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে লেভি সংগ্রহের চালে গণবন্টন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে দু’টি পথ খোলা রয়েছে। হয় নভেম্বরের বদলে লেভি সংগ্রহ আগে শুরু করতে হবে, নয়তো সেপ্টেম্বর মাস থেকেই এফসিআই থেকে চাল নিতে হবে। রাজ্য সরকারের কাছে অর্থও চেয়ে পাঠায় জেলা প্রশাসন। কিন্তু সরকার টাকা না দেওয়ায় কোনটাই করা যায়নি বলে জানায় প্রশাসন। মূলত, লেভি সংগ্রহের কাজ করেন চালকল মালিকেরা। কিন্তু গত বছরের লেভি সংগ্রহ বাবদ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে চালকল মালিকদের অনেক টাকা পাওনা থেকে গিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকার ও অন্যান্য এজেন্সি মিলে (ইসিএসসি, কনফেড, বেনফেড প্রভৃতি) বকেয়া পাওনার পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকা। ফলে সরকারি নির্দেশ ও অর্থ না আসা পর্যন্ত চালকল মালিকেরাও লেভি দিতে রাজি হচ্ছেন না।
বিষয়টি রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এ বারও ডিস্ট্রিবিউটারদের বুঝিয়ে হাওড়া থেকে চাল এনে গণবন্টন ব্যবস্থা সচল রাখার চেষ্টা চলছে। তবে চলতি সপ্তাহে মানুষ যে ২ টাকা কেজি চাল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তা নিয়ে সংশয় নেই। তবে পরবর্তীতে চালের সমস্যা মিটলে এই সপ্তাহের বরাদ্দ অন্য সপ্তাহে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। |
|
|
|
|
|