|
|
|
|
হাওড়ায় অভিযুক্ত তৃণমূল |
কোথাও দখল, কোথাও আবার ভাঙচুর দোকানে |
দেবাশিস দাশ • কলকাতা |
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, কোথাও জোর করে জায়গা দখল করে সেখানে দলীয় কার্যালয় তৈরি করা যাবে না। কাউকে ভয় দেখিয়ে টাকাও তোলা যাবে না।
সেই নির্দেশ যে দলীয় কর্মী ও নেতাদের একাংশ ভুলতে বসেছেন, তার প্রমাণ মিলল হাওড়ায়। অভিযোগ, হাওড়া-আমতা রোডের পাশে এক দলীয় কর্মীরই চায়ের দোকান দখল করে তৈরি করে ফেলা হয়েছে তৃণমূলের কার্যালয়। আরও অভিযোগ, প্রতিবাদ করায় মারধর করা হয় দলেরই ওই সক্রিয় কর্মীকে। পাশাপাশি দাবি মতো ‘তোলা’ চেয়ে না পাওয়ায় মধ্য হাওড়ার ড্রেনেজ ক্যানাল রোডের এক ব্যবসায়ীর অফিস ও শো-রুম আক্রমণ করে, কর্মীদের মারধর ও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে এক তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার বালিটিকুরির জাপানি গেটের কাছে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের থেকে অনুমতি নিয়ে আট বাই ছ’ফুটের একটা দোকান করেছিলেন স্থানীয় নিউ মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা শেখ কিবরিয়া। চায়ের সঙ্গে জ্বালানি কাঠও বিক্রি করতেন তিনি। এর পাশাপাশিই তিনি তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। শেখ কিবরিয়ার অভিযোগ, দলের নেতাদের আবেদনে তিনি তাঁর দোকানে এক সপ্তাহের জন্য দলের জিনিসপত্র রাখতে দিয়েছিলেন। ওই সময়ে কিছু দিনের জন্য কলকাতায় একটা কাজ পাওয়ায় সেখানে চলে যান তিনি। ফিরে দেখেন, চায়ের দোকান আর নেই। সেখানে ঝুলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া তৃণমূলের হোর্ডিং। চায়ের দোকান হয়ে গিয়েছে পার্টি অফিস। |
|
বালিটিকুরির জাপানি গেটের কাছে তৃণমূলের সেই পার্টি অফিস। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার |
ওই তৃণমূল কর্মীর আরও অভিযোগ, ঘটনার প্রতিবাদ করে চায়ের দোকান ফিরিয়ে দিতে দলের অন্য কর্মীদের কাছে আবেদন করেছিলেন তিনি। পরিবর্তে তাঁকে দোকানের সামনেই বেদম পেটানো হয় গত ২৭ অক্টোবর। তাঁর পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়। ওই দিনই তিনি এফআইআর করেন। পরে স্থানীয় বিধায়ক জটু লাহিড়ীর কাছেও যান। অভিযোগ, সেখানেও কোনও সাহায্য মেলেনি।
শেখ কিবরিয়া শুক্রবার বলেন, “জটুদাই আমাকে দোকানটি কয়েক দিনের জন্য দলকে দিতে বলেছিলেন। কিন্তু ঘটনার পরে তাঁকে সব কথা বলা সত্ত্বেও তিনি কোনও সাহায্য করেননি। উপরন্তু দোকানের মায়া ছাড়তে বলেছেন।”
এক জন দলীয় কর্মীর দোকান দখল করে তাঁকে এ ভাবে মারধর করা হল কেন? শিবপুর কেন্দ্রের বিধায়ক এবং জেলার অন্যতম তৃণমূল নেতা জটু লাহিড়ী বলেন, “দোকানটি ওই ছেলেটি নিজেই দিয়ে দিয়েছে। কেউ কেড়ে নেয়নি। আর মারধরের ব্যাপারে আমি জানি না।”
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১২ অক্টোবর। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দিন মধ্য হাওড়ার ড্রেনেজ ক্যানাল রোডে নতুন একটি বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের শো-রুমের সামনে এক তৃণমূল কাউন্সিলরের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখান দলের স্থানীয় কর্মীরা। বিক্ষোভের সময়ে শো-রুমের কর্মীদের মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার দিনই ওই সংস্থা পুলিশের কাছে ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে। তাতে বলা হয়, কাউন্সিলরের দাবি মতো পাঁচ লক্ষ টাকা ‘তোলা’ না দেওয়াতেই পরিকল্পিত ভাবে হামলা হয়। অভিযোগ জানানো হয় হাওড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়কে। কিন্ত এর পরেও প্রতিকার হওয়া দূরে থাক, ওই সংস্থার অভিযোগ, ঘটনার পর থেকে ওই তৃণমূল কাউন্সিলর প্রতিনিয়ত জঙ্গি আন্দোলনের হুমকি দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন কর্মচারীরা।
দলীয় কর্মী ও নেতাদের এই ‘দাদাগিরি’ নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতিকে প্রশ্ন করা হলে অরূপবাবু বলেন, “ড্রেনেজ ক্যানাল রোডে সংস্থার কাছে টাকা চাওয়ার বিষয়টি আমি হাওড়ার পুলিশ কমিশনারকে তদন্ত করতে বলেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, জাপানি গেটের ঘটনাটিও কোনও ভাবে বরদাস্ত করা হবে না। কারণ, এটা দলের নীতিবিরুদ্ধ কাজ।” হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “দু’টি ঘটনারই তদন্ত হচ্ছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|