এ বার থেকে সাত-সকালেই থলে নিয়ে মাছ-বাজারে না গেলেও চলবে। উল্টে হয়তো মাইকে মাছ ব্যবসায়ীদের হাঁক-ডাকে ঘুম ভাঙবে গৃহস্থের। মাছের পসরা নিয়ে দোরগোড়ায় এসে দাঁড়াবে বিশেষ তিন চাকার যান। পছন্দসই মাছ কেনা আর দরাদরিটাই বাকি থাকবে শুধু।
রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার আর্থিক সহায়তায় আর রাজ্য মৎস্য দফতরের উদ্যোগে এমন দিন দূরে নেই। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু মাছ ব্যবসায়ীকে তিন চাকার ওই মৎস্যযান বিলি শুরু করেছে মৎস্য দফতর। মৎস্য সংরক্ষণের জন্য বিলি করা হচ্ছে বিশেষ বাক্সও।
পাইলট প্রোজেক্ট হিসাবে আপাতত পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় আটশোরও বেশি স্বাস্থ্যসম্মত মৎস্য সংরক্ষণ বাক্স এবং ৪৫টি মৎস্যযান বিলি করা হচ্ছে। অন্য তিনটি জেলায় মৎস্যযান বিলি হয়ে গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৮টি ব্লকে মোট ১২টি মৎস্যযান বিলি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
প্রশাসন ও মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে উপভোক্তাদের বাছা হয়েছে। চন্দ্রকোনা রোডের বড় ডাবচার মাছ ব্যবসায়ী স্বরূপ তিওয়ারি নিখরচায় চার হাজার টাকার এই বাক্স পেয়েছেন। তিনি বলেন, “আগে আমার প্রায় তিন থেকে চার কিলো করে মাছ রয়ে যেত। সংরক্ষণের অভাবে সেগুলি এমনিই নষ্ট হয়ে যেত। নতুন এই ব্যবস্থায় খুবই সুবিধা হল।” বিনামূল্যে মাছ সংরক্ষণের বাক্স পেয়ে বেজায় খুশি গোয়ালতোড়ের আমলাশুলির বৈদ্যনাথ পণ্ডা, ঘাটালের শ্রীমন্তপুরের ব্যবসায়ী হরিপদ জানাও। |
মেদিনীপুর বিডিও অফিসে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা। |
সদ্যই মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাথরা পঞ্চায়েতের বেনাডিহি গ্রামের শেখ কামালউদ্দিন মৎস্যযান পেয়েছেন। নিখরচায় ৫০ হাজার টাকার যানটি পেয়ে খুশি আর ধরে না কামালউদ্দিনের। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের খোদামবাড়ির বাসিন্দা বলাই ভুঁইয়া দিন পনেরো হল নতুন এই যানে মাছ বিলি করছেন। তিনি বলেন, “খুবই সুবিধা হয়েছে আমার। যেখানে যাচ্ছি, গাড়ি দেখতে লোকে ভিড় করছে। বিক্রিও হচ্ছে ভালই।”
কিন্তু যাঁরা এই বাক্স বা মৎস্যযান পেলেন না, তাঁরা কী করবেন?
রাজ্য মৎস্য দফতরের উপ-মৎস্য অধিকর্তা (পশ্চিমাঞ্চল) উৎপল সর বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতিগুলির কাছে নামের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছিল। সেই মতো উপভোক্তা বেছে বাক্স ও মৎস্যযান বিলি করা হয়েছে। অন্যদের নগদ মূল্য দিয়েই কিনতে হবে। তবে, এরই মধ্যে কেন্দ্র বা অন্য কোনও তহবিল থেকে অনুদান পেলে, ফের বিনামূল্যে বিলি করার কথা ভাববে মৎস্য দফতর।”
পরিসংখ্যান বলছে, দেশে উৎপাদিত মাছের ১৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায় শুধুমাত্র সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে। মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সমস্যা মেটাতেই স্বাস্থ্যসম্মত মৎস্য সংরক্ষণ বাক্স বিলি করা হচ্ছে। এতে তিন দিন পর্যন্ত মাছ সংরক্ষিত করা যাবে। দিনের শেষে অবিক্রিত মাছ ওই বাক্সে বরফের মধ্যে রেখে দেবেন বিক্রেতারা। এক-একটা বাক্সে ৬০ কেজির বেশি মাছ রাখা যাবে।
অন্য দিকে, তিন চাকার মৎস্যযানে বিক্রেতারা সরাসরি পাড়ায়-পাড়ায় গিয়ে মাছ বিক্রি করতে পারবেন। ওই যানের মধ্যেই থাকছে মাছ ওজন করার যন্ত্র। জ্যান্ত মাছ বিক্রির জন্য এবং অবিক্রিত মাছ স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে রাখার জন্য আলাদা আলাদা বাক্স রয়েছে মৎস্যযানে। মাছ ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য থাকছে অডিও সিস্টেম। ব্যাটারি চালিত ওই যন্ত্রের সাহায্যেই হাঁকডাকটা সারবেন মাছ ব্যবসায়ীরা। উৎপলবাবু জানান, মডেল দু’টি মৎস্য দফতরের নিজস্ব। তবে, এর অধিকাংশ তৈরি করেছে বনহুগলী মৎস্যজীবী কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি। এ ছাড়াও মৎস্যজীবীদের বেশ কিছু কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি এই কাজে হাত লাগিয়েছে। |