কালীপুজোর বাজারে রক্তচক্ষু জবা
সিঁদুর রঙের জবায় ভরে রয়েছে মল্লিকঘাট ফুলবাজার। ৮ থেকে ১০ ফুটের লম্বা জবার মালা ও জবার কুঁড়ি নিয়ে হাজির ফুল বিক্রেতারা। কালীপুজোর আগে বাজারে জবার ঢল নামলেও বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এ বার জবা ফুল ও জবার মালার দাম থাকবে অন্য বারের তুলনায় অনেকটা বেশি। ফুল বিক্রেতাদের আশঙ্কা, জোগানে টান না থাকলেও ভাল মানের জবা এ বার বাজারে কম থাকবে। ফলে কালীপুজোর সময়ে ভাল মানের জবার মালার দাম বেশ চড়া হবে। তা ছাড়া, চাষির হাত থেকে ক্রেতার হাত পর্যন্ত পৌঁছনোর আগে বেশ কিছু হাত ঘোরায় ফুলের দাম এই সময়ে আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা ফুলচাষিদের।
মল্লিকঘাট ফুলবাজারের বিক্রেতারা জানালেন, সেখানে ইতিমধ্যেই প্রতি দিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ জবা আসতে শুরু করেছে। আসছে বড়বড় জবা ফুলের মালাও। তবে ফুলবিক্রেতারা জানাচ্ছেন, পাইকারি দামে ১০০০টি জবা পাওয়া যাচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। সাধারণ সময়ে যার দাম থাকে ২০-৩০ টাকা। ভাল জবার ১৫ থেকে ১৮ ফুট লম্বা মালার দাম হাজার টাকারও বেশি।
পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট, হাওড়ার বাগনান, পশ্চিম মেদিনীপুরের দাশপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিরাকোল অঞ্চল থেকে জবা আসে মল্লিকঘাট ফুলবাজারে। এই বাজারের ফুলবিক্রেতাদের মতে, কালীপুজোর সময়ে এক লাফে চাহিদা অনেক বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বছর দামও অনেকটা বাড়ে। ‘সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুলব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, “শীতের সময়ে জবা আকারে ছোট হয়ে যায়। এ বার কালীপুজোর আগে নিম্নচাপে টানা বৃষ্টি হওয়ায় শীতের ভাব আরও বাড়বে। আশঙ্কা, ভাল মানের জবা কম আসবে বাজারে। ফলে দাম আরও বাড়বে।”
তবে শুধু আবহাওয়ার কারণেই নয়, কালীপুজোর আগে জবার চাহিদা বাড়ায় চলে আসছে মধ্যস্বত্বভোগীরাও। সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চাষির হাত থেকে ক্রেতার হাতে পৌঁছনো পর্যন্ত জবার দাম প্রায় তিনগুণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ, ১০০০টি জবা ফুল যদি এক জন চাষি মধ্যস্বত্বভোগীকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেন, তা ক্রেতার হাতে পৌঁছয় ২৪০ টাকায়। তবে যে সব চাষি নিজেরা মল্লিকঘাট ফুলবাজারে বিক্রি করতে আসেন, তাঁদের এই মধ্যস্বত্বভোগীদের কবলে পড়তে হয় না।
ফুলের মান নিয়ে চিন্তিত রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন নিগমের আধিকারিকেরাও। এই দফতরের এক আধিকারিক শিবাজী রায় বলেন, “যে সব চাষিরা কীটনাশক দিয়ে যত্নে জবা চাষ করেছেন, তাঁদের উৎপাদন ভাল হওয়ার কথা। আমাদের যে হিমঘরগুলি রয়েছে, সেখানে ভাল মানের জবা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তবে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় মানের দিক থেকে কিছু হেরফের ঘটতে পারে। ভাল জবার দামও বাড়তে পারে।”
তবে এর ফলে কালীপুজোর বাজেট বাড়লেও মালার মানের সঙ্গে আপস করতে নারাজ কলকাতার বড় কালীপুজো কমিটিগুলি। যেমন আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকার একটি বিখ্যাত কালীপুজো ‘আমহার্স্ট স্ট্রিট সাধারণ শ্রীশ্রী কালীপুজো কমিটি’র তরফে বাদল বণিক বলেন, “আমাদের কালী প্রতিমা হয় ১৬ ফুটের। মালা এত বড় হয় যে প্রতিমার গলা থেকে সামনে রাখা ঘট পর্যন্ত চলে যায়। এক-একটি মালাতেই ১২০০-১৫০০ ফুল থাকে। যে ক’দিন প্রতিমা থাকে, রোজ এ রকম বেশ কয়েকটি মালা লাগে। জবার মালার দাম প্রতি বছরই বাড়ছে। তবে দাম বাড়লেও আমরা মানের সঙ্গে কোনও আপস করি না।” ওই পুজোর কাছেই আর এক বিখ্যাত পুজো ‘নবযুবক সঙ্ঘ’-এর এক কর্মকর্তা প্রণব রায় বলেন, “আমাদের এখানে এমন অবস্থা হয় যে, মালার ভারে প্রতিমা যেন বেঁকে যায়। তার মধ্যে জবার মালাই বেশি। আমাদের ১৮ ফুটের প্রতিমার জন্য বিশাল বিশাল জবার মালা লাগে। বাজেট বাড়লেও মল্লিকঘাট ফুল বাজার থেকেই আমাদের জবার মালা আনা হয়।” তবে শহরে বড় পুজোর সংগঠন ছাড়াও কালীপুজো করে অনেক ছোট ছোট ক্লাব। দমদম এলাকার এ রকমই কিছু পুজোর কর্মকর্তারা জানালেন, গত বছরেই কালীপুজোর সময়ে তাঁরা ১৫ ফুট মালা কিনেছিলেন ১০০০ টাকায়। জবার মালার দাম আরও বাড়লে পুজোর বাজেটে বেশ টান পড়বে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.