সবই ছিল। অনবদ্য স্থাপত্য, লেখ্য ভাষা, উন্নত শিল্পকীর্তি। এক কথায় যা যা থাকলে বলা যায় ‘একেই তো বলে সভ্যতা’, সে সব উপকরণই ছিল মায়া সংস্কৃতিতে। তার পর এক দিন সব শেষ। কী ভাবে, কেন তা নিয়ে ইতিহাসবিদ্দের মধ্যে বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক দাবি করেছেন, কোনও অজানা কারণে নয়, পরিবর্তিত স্থানীয় আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পেরেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় মায়া সভ্যতা।
গবেষকদল জানিয়েছেন, সময়টা ১০২০ থেকে ১১০০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি। একের পর এক খরা সামাল দিতে দিতে মায়ার বাসিন্দাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। ক্রমাগত শস্য নষ্ট হওয়ায় বেড়ে চলেছে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যাও। একসময়ে দেখা দিল বীভৎস দুর্ভিক্ষ। প্রাণ বাঁচাতে দেশত্যাগীও হলেন কেউ কেউ। তাতেও থামল না প্রকৃতির রোষ। মৃত্যুলীলা যখন থামল ততদিনে জনশূন্য হয়ে পড়েছে মায়া সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল। যদিও এ হেন পরিণতি দেখে বোঝা সম্ভবই নয়, ঠিক কতটা ‘আধুনিক’ ছিল সেটি। তাই বোধ হয় তাকে নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ওই গবেষকদলের সদস্য ও প্রত্নতত্ত্ববিদ্যার অধ্যাপক ব্রুস উইন্টারহল্ডার। মায়ার বাসিন্দাদের সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, “ওঁরা অবিশ্বাস্য শিল্পী ছিলেন। কৃষিকাজ, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং যুদ্ধবিগ্রহেও অসম্ভব দক্ষ ছিলেন ওঁরা।” |
মায়া সভ্যতার নিদর্শন এই স্ট্যালাগমাইট। ছবি: রয়টার্স |
এ হেন উন্নত সভ্যতাকে আরও ভাল করে জানতেই গবেষণার পরিকল্পনা করেছিলেন ব্রুস।
এ কাজে তাঁরা দু’ভাবে এগোন। প্রথমত, বিভিন্ন মায়া-লিপির পাঠোদ্ধার করা হয়। বিশেষত, উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন সৌধে মায়া-ভাষায় যে সব লেখা খোদাই করা ছিল, তারই পাঠোদ্ধার করেন গবেষকেরা। তাতে মূলত সৌধ নির্মাণের সময়কাল, কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সন-তারিখ লেখা রয়েছে বলেই দাবি করেছেন তাঁরা। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যত সময় এগিয়েছে অর্থাৎ যত অবলুপ্তির দিকে এগিয়েছে মায়া সভ্যতা, তার সৌধ নির্মাণের সংখ্যাও তত কমেছে। অন্য দিকে বেলিজের এক গুহা থেকে স্ট্যালাগ্মাইট উদ্ধার করেছেন তাঁরা। সেটিকে নিয়ে বৈজ্ঞানিক কাটাছেঁড়া করেছেন। আর এর থেকেই উঠে এসেছে প্রায় ২০০০ বছর আগে ঠিক কেমন ছিল ওই এলাকার আবহাওয়া। দু’টি দিক থেকেই তাঁরা মোটামুটি একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। তাঁদের দাবি, ৩০০ থেকে ৬৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এলাকায় বেড়ে গিয়েছিল বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। বেড়েছিল জনসংখ্যাও। ৬৬০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ধীরে ধীরে খরার মরসুম শুরু হয় সেখানে। পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধবিগ্রহ এবং অবশেষে শাসনব্যবস্থার পতন। খরা, দুর্ভিক্ষ, মৃত্যু। প্রকৃতির রোষে পড়ে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয় প্রাচীন সভ্যতা। হাজার বছর পেরিয়ে তাকেই ফিরে দেখতে চাইলেন ব্রুস ও তাঁর সহকর্মীরা। |