সীমান্তে ছায়া-যুদ্ধ যেমন চলছে চলুক। পাকিস্তানের মাটিতে ভারত-বিরোধী জঙ্গি সক্রিয়তা কমারও কোনও লক্ষণ নেই। কিন্তু নিজের সংসদীয় কাঠামোকে জোরদার করতে ভারতেরই দ্বারস্থ পাকিস্তান!
পাকিস্তান সফর সেরে সদ্য দেশে ফিরেছেন লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার। সেখানে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে পাকিস্তানের স্পিকার ফেহমিদা মির্জা-র সঙ্গে। এমনিতেই দুই ‘বন্ধু’ বছরভর নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন ফোনে, কোনও নৈশভোজে গেলে চেষ্টা করেন একই রঙের পোশাক পরতে! এ বারে দু’জনের আলাপচারিতা আরও গভীর হয়েছে। পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খারের সঙ্গেও নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন মীরা। ঘরোয়া ভাবে ভারতীয় স্পিকারের কাছে পাক রাজনৈতিক নেতৃত্ব আক্ষেপ করেছেন তাঁদের বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থা আর সামরিক কাঠামো যতটা জোরদার, আইনসভা তথা সংসদীয় ব্যবস্থা ততটাই দুর্বল। নির্বাচনের আগে জারদারি সরকারের লক্ষ্য, পাক পার্লামেন্টকে মজবুত করা। আর সেই লক্ষ্যপূরণে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতের সংসদই তাঁদের কাছে অনুসরণযোগ্য দৃষ্টান্ত। মীরা কুমারকে জানানো হয়েছে, ভারতের কাছ থেকে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিতে চান তাঁরা।
দৃষ্টান্ত ভারত! অথচ ভারতের সংসদীয় অধিবেশন তার নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭০ শতাংশই বন্ধ থাকে। নষ্ট হয় কোটি কোটি টাকা। টাকার থলে নিয়ে লোকসভায় ঢুকে পড়েন সাংসদরা। তাতে কী? দু’টি অধিবেশনের মধ্যবর্তী সময়ে যে ভাবে বিলের খসড়া তৈরি হয়, বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যে ভাবে কাজ করে, সেটা দেখেই মুগ্ধ ইসলামাবাদ। পাক পার্লামেন্টে এ ধরনের কোনও ব্যবস্থা নেই। মীরা কুমারের কাছে ভারতীয় সংসদীয় ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করে সে দেশের নেতৃবর্গ জানিয়েছেন, বিলের খসড়া তৈরি থেকে শুরু করে সংসদীয় রীতিনীতি, সব কিছু তাঁরা শিখতে চান। ভারতের ব্যুরো অফ পার্লামেন্টারি স্টাডিজ-এর ধাঁচে গড়তে চান পাকিস্তানে একটি সংস্থা। এর আগে একাধিক বার পাক এমপিদের প্রতিনিধিদল ভারতে এসেছেন। ঘুরে দেখেছেন সংসদ। কিন্তু সংসদীয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। ফেহমিদা মির্জা এ বার মীরা কুমারকে জানিয়েছেন, শীঘ্রই বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তাঁদের।
সাহায্য করতে রাজি ভারতও। সম্প্রতি দু’দেশের মধ্যে ভিসা সংক্রান্ত চুক্তি হওয়ার পর কিছুটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ একাধিক বার পাক নেতৃত্বের কাছে বার্তা দিয়েছেন, মতপার্থক্যের বিষয়গুলিকে আলাদা করে রেখে যে সব ক্ষেত্রে একসঙ্গে এগোনো সম্ভব, সেই জায়গাগুলিকে চিহ্নিত করা হোক। দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়টির উপর বাড়তি গুরুত্ব দিতে চাইছে কেন্দ্র। সেই নিরিখে স্পিকারের এই সদ্যসমাপ্ত সফরটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বিদেশ মন্ত্রক।
সংসদীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে এই নতুন আস্থাবর্ধক পদক্ষেপের পাশাপাশি মীরা কুমারের পাকিস্তান সফরে এ বার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে বলিউডের পুরনো রোম্যান্স আর শায়েরি। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফের নৈশভোজে রীতিমতো মুশায়েরা-র আসর বসেছিল! উর্দুতে সুদক্ষ মীরা কুমার একটি শায়েরি শোনানোর পরই ব্যস্ত হয়ে তাঁর সচিবকে দিয়ে একটি শায়েরির বই আনান শাহবাজ! খোদ পাকিস্তানে এসে এক তরফা শায়েরি শুনিয়ে চলে যাবেন ভারতীয় স্পিকার, তা তো হতে পারে না! শুরু হয়ে যায় কবির লড়াই। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নিয়ে যাওয়া উপহার, মুঘল-ই-আজমের নতুন ডিজিটাল সংস্করণ নিয়েও কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছে পাক নেতৃবৃন্দের মধ্যে! |