পুলিশ থাকে, সান্ত্রী থাকে। তবু প্রতি কালীপুজোর রাতেই দুর্গাপুর ও আসানসোলে পাড়া মাথায় তোলে বেআইনি শব্দবাজির দাপট।
প্রতি বারই পুলিশ বলে, তারা সতর্ক থাকছে। তবু প্রকাশ্যে মদ-জুয়া চলতে থাকে। ইভটিজারদের ভয়ে কিশোরী-তরুণীরা ঘরেই নিরাপদ বোধ করে।
পুলিশ কমিশনারেট চালু হওয়ার পরে এটা দ্বিতীয় দীপাবলি। গত বছর, প্রথম বারের পরীক্ষায় পুলিশ কার্যত ডাহা ফেল করেছিল। সিটি সেন্টার থেকে আসানসোল রেলপাড়, বহু জায়গাতেই বাতাস ভারী করে তুলেছিল চকোলেট-দোদমা। মদ্যপদের উৎপাত তো ছিলই। এ বার কী হবে?
পুলিশের দাবি, শব্দবাজি ও জুয়ায় লাগাম টেনে সুষ্ঠু ভাবে কালীপুজো সম্পন্ন করতে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কিছু শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কোন-কোন বাজি শব্দসীমা অতিক্রম করে পীড়াদায়ক হয়ে উঠতে পারে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে থানায়-থানায়। যদিও পুলিশের হাতে শব্দের ডেসিবেল মাপার যন্ত্রই নেই। ফলে আপাতত শব্দবাজির ‘ব্র্যান্ড নেম’ দিয়েই তালিকা বানিয়েছে পুলিশ। কর্তাদের দাবি, সেই সব নামের তালিকা ধরে ইতিমধ্যেই থানাগুলি অভিযান শুরু করে দিয়েছে।
এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, আসানসোলে শব্দবাজি ও জুয়ারিদের রুখতে বিশেষ অভিযান চলছে। টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। যে সব জায়গায় শব্দবাজি বিক্রি হয় সেখানে সেখানে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে। |
এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, ইতিমধ্যেই দুর্গাপুর, কোকওভেন ও অন্ডাল থানায় কিছু শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। একাধিক জায়গায় শব্দের কম্পাঙ্ক মাপার যন্ত্র বসানো হচ্ছে। পর্ষদের আসানসোল শাখার আধিকারিক অঞ্জন ফৌজদার জানান, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুয়ারিদের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশ থাকে বলে যে অভিযোগ চিরকালের, তা-ও এ বার মুছে দেওয়া যাবে বলে কমিশনারেটের দাবি। এক পুলিশকর্তার কথায়, “সব থানাতেই অভিযান চলছে। তবে অন্ডাল থানা এলাকায় জুয়ারিদের রমরমা বেশি থাকে। সেই জন্য সেখানে বনবহাল, উখড়া প্রভৃতি ফাঁড়ি থেকে পুলিশকর্মীদের নিয়ে এসে বিশেষ বাহিনী গড়া হয়েছে।” তিনি জানান, ইভটিজিং রুখতে মহিলা কলেজ ও বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে সাদা পোশাকে পুলিশকর্মীরা থাকছেন। মহিলা সিভিক পুলিশ কর্মীদেরও এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এডিসিপি (পূর্ব) বলেন, “ওই মহিলা কর্মীরা সাধারণ পোশাকে থাকায় দুষ্কৃতীরা চিনতে পারছে না। ফাঁদে পা দিচ্ছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে।”
পুলিশের দাবি, আইনশৃঙ্খলা-জনিত সমস্যায় জড়িত থাকার অভিযোগেও প্রতি দিন বেশ কিছু গ্রেফতার হচ্ছে। দুর্গাপুরের তিনটি থানা মিলে গড়ে রোজ প্রায় দেড়শো জনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। দুর্গাপুজোয় দুর্গাপুর থানা এলাকার ১০টি, নিউ টাউনশিপ থানা এলাকায় ৬টি এবং কোকওভেন থানা এলাকার ৩টি পুজোমণ্ডপে সিসিটিভি লাগানো হয়েছিল। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে কালীপুজোতেও একই পন্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে দুর্গাপুরে কালীপুজোর রমরমা সেই তুলনায় কম। বেনাচিতি এলাকার একটি, বি-জোনের দু’টি এবং কোকওভেন থানা এলাকার একটি পুজোয় সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে। একই ধরনের ব্যবস্থা হচ্ছে আসানসোলেও।
দ্বিতীয় বছরের পরীক্ষায় পুলিশ ফেল করে না পাশ, বলবেন মা কালী! |