এক গৃহশিক্ষককে রাস্তায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর পরে মেরে বাড়িতে ঢুকে দিব্যি গা, হাত-পা ধুয়ে টিভি দেখছিলেন অভিযুক্ত যুবক। রাস্তায় পড়ে থাকা রক্তের কয়েক ফোঁটাই ধরিয়ে দিল তাঁকে। সোমবার রাতে বালুরঘাট থানার পাগলিগঞ্জের বিদয়পুর এলাকার ঘটনা। খবর পেয়ে তদন্তে গিয়েই বালুরঘাট থানার আইসি মনোজ চক্রবর্তী রাস্তায় পড়ে থাকা কয়েক ফোঁটা রক্তের চিহ্ন ধরে পৌঁছে যান অভিযুক্তের বাড়িতে। গুরুতর জখম ওই গৃহশিক্ষকের নাম সজল মণ্ডল। ২৭ বছরের সজলবাবুর দুহাতে, মাথায় ও দেহের একাধিক জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। রাতেই তাকে বালুরঘাট হাসপাতাল থেকে মালদহের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অভিযুক্ত যুবকের নাম বরুণ পাল। বিএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র বরুণকে পুলিশ গ্রেফতার করে তাঁর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছে। আইসি মনোজবাবু জানান, এমএসসির ছাত্রী বরুণের দিদিকে পড়াতেন আক্রান্ত সজল মণ্ডল। দিদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সহ্য করতে না পেরে গৃহশিক্ষককে রাতে রাস্তায় একা পেয়ে হাঁসুয়া নিয়ে বরুণ হামলা করে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে। আইসির বক্তব্য, “রক্তের ছিটে অভিযুক্তকে ধরতে সাহায্য করেছে। কেননা এলাকায় দু’জনই ভাল ছেলে বলে পরিচিত হওয়ায় গৃহশিক্ষক সজলকে প্রতিবেশি বরুণ মারতে পারে বাসিন্দারা প্রথমে কেউই বিশ্বাস করেননি। সজলের হামলাকারীকেও কেউই দেখেননি।” তারা বরুণকে ধরে নিয়ে যেতে দেখে একজোট হয়ে পুলিশকে বাধা দেন। পরে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের হস্তক্ষেপে পুলিশ বরুণকে থানায় নিয়ে যায়। রাত ১০টা নাগাদ রক্তাক্ত অবস্থায় প্রায় অন্ধকার গ্রামের গলির রাস্তায় পড়ে থাকা গৃহশিক্ষকের গোঙানি শুনে লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়ে পুলিশে খবর দেন। আইসি জানান, দিদির প্রেমিক গৃহশিক্ষককে কোপের পর কোপ মারায় রক্ত ছিটকে এসে পড়েছিল। হামলাকারী অভিযুক্তের শরীরে রাস্তার যেখানে গৃহশিক্ষক পড়ে ছিলেন। তার কিছু দূরে উল্টো দিকে কয়েক ফোঁটা রক্ত পড়েছিল। ওই রক্তের ফোঁটা অনুসরণ করে দেখা যায়, অভিযুক্তের বাড়ির গেটের সামনে বিন্দু বিন্দু রক্ত, রক্তমাখা হাত ঝাড়লে যেমন হয়।” ধৃতের পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে এবং কানেও রক্তের ছিটে দেখতে পাওয়া যায়। হাত মুখ ধুলেও কানের মধ্যে রক্ত লেগে আছে টের পায়নি অভিযুক্ত। এদিন অবশ্য বরুণের বিরুদ্ধে হাঁসুয়া নিয়ে হামলার অভিযোগ করেছে আহত গৃহশিক্ষক সজল। ধৃত বরুণ তার দেহে রক্তেরই দাগ, তা পুলিশের কাছে স্বীকার করলেও গৃহশিক্ষককে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে। পুলিশ ধৃতের শরীরে লেগে থাকা রক্তের দাগের ছবি তুলে রেখেছে। ডিএসপি (সদর) উত্তম ঘোষ বলেন, “ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।” |