শরিকি কাজিয়া এড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরার জন্য পদক্ষেপ শুরু করল কোচবিহার জেলা বামফ্রন্ট। বাম শরিকদের মধ্যে গোলমালের জেরে এই জেলায় ফি পঞ্চায়েত ভোটে গোঁজ প্রার্থী দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ বার তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে এলাকাভিত্তিক পরিস্থিতি মেনে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হলেন জেলা ফ্রন্ট নেতৃৃত্ব। ঠিক হয়েছে, শুধু গত বারের জেতা আসন এবং তার সঙ্গে হারা আসনে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দলের প্রার্থী দেওয়ার চিরাচরিত সূত্রই নয়। যে এলাকায় যে দলের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে তা-ও যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কোচবিহারে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক শক্তিশালী। পঞ্চায়েতে তাদের সঙ্গে বিবাদ এড়ানোর জন্য এ বার ব-র জেলা দফতরে ইতিমধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সেরে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ফ ব নেতৃত্ব যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, মঙ্গলবার জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকেও তা গৃহীত হয়েছে। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতি আসনে বামফ্রন্টের এক জন প্রার্থীই লড়াইয়ে থাকবেন। গত বার নিচু তলায় কিছু সমস্যার জন্য অনেক জায়গায় তা করা যায়নি। এ জন্য এ বার সার্বিক ঐক্য গড়তে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে প্রার্থী দেওয়া হবে। এখানে ফ্রন্টের জয়ের বিষয়টিই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রার্থী বাছাইয়ের রূপরেখাটিও মাথায় রাখা হচ্ছে।” প্রার্থী বাছাইয়ের রূপরেখা বলতে গত বারের ফলাফল দেখে সিদ্ধান্ত বোঝাচ্ছে। কিন্তু তার পাশাপাশিই এ বার এলাকার ‘বাস্তব পরিস্থিতি’র কথা বলছেন ফ্রন্ট নেতৃত্ব।
ফ ব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহের বক্তব্য, “এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই রূপরেখার চেয়ে বাস্তব অবস্থার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ব্যাপারে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এ দিনের বৈঠকে তা গৃহীত হয়েছে।” ফ ব নেতৃত্বের প্রস্তাব, গত বার যে আসনে তাঁরা জিতেছিলেন বা লড়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন, সেখানে সিপিএমের শক্তি বা গ্রহণযোগ্যতা বেশি হলে ওই আসন ওই দলকেই দিতে হবে। এই প্রস্তাবই আপাতত মেনে নিয়েছে বাকি শরিকেরা। ফ্রন্টের এক প্রবীণ নেতার কথায়, “বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূলের আঁতাঁত হয়েছিল। এ বার দু’দলের সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছে। ফলে ডানপন্থী ভোট ভাগ নিশ্চিত। অন্য দিকে বামেরা এক আসনে এক প্রার্থী দিতে পারলে ভোট ভাগাভাগির সম্ভাবনা থাকবে না।”
পঞ্চায়েতের আগে বাম ঐক্য মেরামত করার পাশাপাশি কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করতে ২১ নভেম্বর জেলা পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে পক্ষপাতিত্ব, সন্ত্রাসের অভিযোগে বিক্ষোভের কর্মসূচিও এ দিনের বৈঠকে চূড়ান্ত হয়েছে। ওই বৈঠকে সিপিএম নেতা অনন্ত রায়, মহানন্দ সাহা, জ্ঞানেন্দ্র চন্দ, সিপিআইয়ের সুরথ চক্রবর্তী, আরএসপি-র গণেশ বর্মণ, সন্তোষ সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। |