হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য ও সাধারণ আবর্জনা পৃথকভাবে ফেলার নিয়ম। ওই নিয়ম লাটে তুলে রায়গঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা-বর্জ্য ও সাধারণ আবর্জনার স্তূপেই ডাঁই করা হচ্ছে। ফলে হাসপাতালে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সব জেনেও হাসপাতাল সুপার সাফাইকর্মীদের বিরুদ্ধে না-নিয়ে তাঁদের ‘ভুল’ আড়াল করার চেষ্টা করছেন কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতাল কর্মীদের একাংশের মধ্যেই। হাসপাতাল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ নির্বিকার বলেই সপ্তাহ গড়ালেও সমস্যা মিটছে না। রায়গঞ্জ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা রায়গঞ্জ টাউন কংগ্রেস সভাপতি রণজকুমার দাস বলেন, “হাসপাতালের সুপার সহ অন্য কর্তাদের নজরদারির অভাবের সাফাইকর্মীরা চিকিৎসার বর্জ্যের সঙ্গে সাধারণ আবর্জনা মিশিয়ে হাসপাতাল চত্বরে ফেলছেন। ওই কারণে পুরসভা সাধারণ আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারছে না। মেশানো আবর্জনা পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেললে তা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” হাসপাতাল সুপার অরবিন্দ তান্ত্রি বলেন, “সাফাইকর্মীরা ভুল করে চিকিৎসার বর্জ্যের সঙ্গে সাধারণ আবর্জনা মিশিয়ে হাসপাতাল চত্বরে ফেলছেন। তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে। সাফাই কর্মীর উপরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।” |
হাসপাতালের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাফাই কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই বিষয়ে মুখ খোলেননি। যদিও হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, চিকিৎসার বর্জ্য এবং সাধারণ আবর্জনা হাসপাতাল সুপারের অফিস সংলগ্ন এলাকায় পৃথক ডাস্টবিনে জমা করে রাখার নিয়ম। শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি সংস্থা ওই বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। সাধারণ আবর্জনা সংগ্রহ করে রায়গঞ্জ পুরসভা। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে সাফাইকর্মীদের একাংশ চিকিৎসার বর্জ্য ও সাধারণ আবর্জনা একসঙ্গে মিশিয়ে সুপারের অফিস সংলগ্ন হাসপাতাল চত্বরে ফেলছেন বলে অভিযোগ। ওই পরিস্থিতি দেখে শিলিগুড়ির বেসরকারি সংস্থা চিকিৎসার বর্জ্য এবং পুরসভা হাসপাতাল আবর্জনা সংগ্রহ করছে না। ডাই হয়ে পড়ে থাকা আবর্জনার দুর্গন্ধের জেরে দু’দন্ড ডাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে হাসপাতাল চত্বরে। হাসপাতালের পাশে রায়গঞ্জের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানকার বাসিন্দাদেরও জেরবার দশা হয়েছে। রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য অরিন্দম সরকার বলেন, “দু-একদিনের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সাফাইকর্মী ও পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে।” হাসপাতাল চত্বরে রাখা চিকিৎসার বর্জ্যের ডাস্টবিন ভরে গিয়েছে। ওই ডাস্টবিনের পাশের মাঠে সাধারণ আবর্জনার সঙ্গে মিশিয়ে চিকিৎসার বর্জ্য ফেলার কাজ চলছে। কুকুর, বেড়াল ও ছাগলের দল পলিথিনে মোড়া চিকিৎসার বর্জ্যগুলি নিয়ে ছোটাছুটি করছে। প্যাকেট ছিঁড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ন্যাপকিন, রক্তমাখা ব্যান্ডেজ, তুলো সহ বিভিন্ন সামগ্রী। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে রয়েছে স্যালাইনের খালি বোতল, প্লাস্টিক, জলের খালি বোতল, উচ্ছিষ্ট ও প্লাস্টারের মতো একাধিক সাধারণ বর্জ্য। হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখে নাকে রুমাল গুঁজে ঘরে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র পালের মতো অনেকে। নারায়ণচন্দ্রবাবু বলেন, “গত এক সপ্তাহ ধরে দিনভর দূষণ ও দুর্গন্ধের জেরে ওয়ার্ডে ঠিকমতো কাজ করা যাচ্ছে না। রোগীদেরও নাকে রুমাল দিয়ে শুয়ে থাকতে হচ্ছে। ওই অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি চলতে থাকলে সংক্রমণ ছড়াবে বলে হাসপাতাল সুপারকে জানিয়ে দিয়েছি।” স্থানীয় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাবু জমাদার, বিজু জমাদার ও রুণু অধিকারী জানান, সামান্য বাতাস বইলে বর্জ্যের দুর্গন্ধে বাসিন্দারা ঘরে টেঁকা দায়। সারাদিন মাছি উড়ে বেড়ায়। দুর্গন্ধে খেতে বসে অনেকের বমি হয়ে যায়। সমস্যার কথা সম্প্রতি হাসপাতাল সুপারকে জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সুপারকে ঘেরাও করা হবে। |