নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
বেআইনি লটারি’র রমরমা আটকাতে রাতভর অভিযান চালিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করল পুলিশ। সোমবার ভক্তিনগর থানার ইয়ং স্টার, উজ্জ্বল সঙ্ঘ এবং শক্তিগড় সর্বজনীনে হানা দেওয়া হয়। ওই ক্লাবগুলি থেকে ২টি বাইক, ৯টি ফ্রিজ, ১৪টি ওয়াশিং মেশিন, ৩১টি টেলিভিশন, ২৬টি মাইক্রো ওভেন, ১৯টি ওভেন, ৬টি এলসিডি এবং ৩৩টি ফ্যান আটক করা হয়েছে। এ ছাড়াও ওই দিন রাতে শিলিগুড়ি থানার পুলিশ সুভাষপল্লির একটি পুজো কমিটির দফতরে হানা দেয়। তারা অবশ্য ইতিমধ্যে লটারি খেলা বন্ধ করে দিয়েছে। অভিযোগ, প্রধাননগর, ফুলেশ্বরী শিবমন্দিরে আরও কয়েকটি ক্লাবেও লটারি খেলার আয়োজন করা হয়েছে। পুলিশ কর্তাদের ধারণা, ইতিমধ্যে ওই লটারি বিক্রি করে বাজার থেকে ১ কোটি টাকার উপরে তুলে নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা কোথায় গেল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “কোনও অনুমতি না নিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লটারি খেলার আয়োজন করা হয়। খেলায় কোনও স্বচ্ছতা ছিল না বলেও অভিযোগ পেয়েছি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ইতিমধ্যে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেশ কিছু জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বেআইনি খেলা বন্ধে লাগাতার অভিযান চলবে। দুর্নীতিদমন বিভাগকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।” আয়োজকদের বিরুদ্ধে গরিব মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন শিলিগুড়ি পুরসভার ডেপুটি মেয়র রঞ্জনশীল শর্মা। তিনি বলেন, “বাইরের কিছু ব্যক্তি স্থানীয় ক্লাবগুলিকে লোভ দেখিয়ে লটারির আয়োজন করেছে। তাদের কাছে কোনও অনুমতি পত্র নেই। পুরসভা থেকেও ট্রেড লাইন্সেস নেওয়া হয়নি। গরিব মানুষদের কাছে লটারি বিক্রি করে টাকা তোলা হয়েছে। এর ফলে দু-এক জায়গায় গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে বলেও খবর পেয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি করেছি।” পুলিশ সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে শুধু ভক্তিনগরের তিনটি ক্লাব নয়, প্রায় ১০টি ক্লাবে লটারি খেলার আয়োজন করা হয়। হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা এবং মালদহের কয়েকজন ব্যক্তি লটারি খেলা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে স্থানীয় ক্লাবগুলির সঙ্গে চুক্তি করে। ১৬ সপ্তাহে ধরে চলা খেলায় প্রতি সপ্তাহে ১০০ টাকার ১৬ হাজার টিকিটের খেলা চালানো হবে বলে ঠিক হয়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ক্লাব টিকিট বিক্রি করে ছয় থেকে সাত সপ্তাহ লটারি খেলা চালিয়েছেন। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ উঠতে থাকে। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, ১৬ সপ্তাহ খেলা চালিয়ে আড়াই কোটি টাকা বাজার থেকে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যা থেকে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ছক কষা হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে ক্যানিংয়ের প্রদীপ ওঝা এবং মালদহের কমল সরকারকে গ্রেফতার করেছে। হাওড়ার শিবপুরের এক ব্যক্তি ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত। তিনিই পুরো পরিকল্পনা তৈরি করে শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন জায়গায় লটারি খেলার আয়োজন করেছেন। তার খোঁজে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে। সোমবার অতিরিক্ত সহকারি পুলিশ কমিশনার প্রদীপ পাল, ভক্তিনগর থানার ওসি তীর্থসারথী নাথের নেতৃত্বে রাতভর অভিযান চালিয়ে দশ লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র আটক করে পুলিশ। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার মহাসচিব শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র পারিষদ (পূর্ত) কৃষ্ণ পাল বলেন, “শিলিগুড়িকে লুঠ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যার মস্তিষ্ক থেকে ওই খেলার ধারণা বেরিয়েছে তাকে কড়া শাস্তি দিতে হবে। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। প্রশাসন কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে ঠিক করেছে।” |