দু’দিনে বাস চালিয়ে লাভ ৪৯ টাকা
কাজের দিনেও রাস্তা সুনসান, ভোগান্তি চরমে
পুজোর ছুটির পর প্রথম কাজের দিন, মঙ্গলবার রাস্তায় বেরিয়ে প্রবল ভোগান্তির মুখে পড়লেন যাত্রীরা। রাস্তাঘাট ফাঁকা। বাসের দেখা নেই।
বাসভাড়া না বাড়ানোয় বেসরকারি বাস-মিনিবাস বসে যেতে শুরু করেছে বেশ কিছু দিন ধরেই। তা-ও পুজোর মরসুমে বেশি সংখ্যক সরকারি বাস পথে নামায় পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্মীপুজোর পর সরকারি অফিস-কাছারি খোলার দিনটিতে শহরের অবস্থা দেখে অবাক যাত্রীরা। বেসরকারি বাস-মিনিবাস তো নেই-ই, সরকারি বাসও তুলনায় অনেক কম।
সরকারি হিসেব বলছে, পুজোর সময় দিন-রাত মিলিয়ে প্রায় ৫০০ সিটিসি বাস রাস্তায় নেমেছিল। সিএসটিসি-র বাস চলেছিল ৮২০টি। কিন্তু এ দিন? রাজ্য পরিবহণ দফতরের হিসেবে মঙ্গলবার সিটিসি-র ৪৫০টি এবং সিএসটিসি-র ৭৫০টি বাস রাস্তায় চলেছে।
ফলাফল? হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা মহাদেব মজুমদার বললেন, “সকাল ১০টা নাগাদ হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে বড়বাজার যেতে গিয়ে মনে হল, কোনও রাজনৈতিক দল বন্ধ ডেকেছে। অফিস টাইমে হাওড়া ব্রিজে যানবাহনের যে চাপ থাকে, তা একেবারেই ছিলই না। বাসই তো নেই!” এ দিন রাস্তায় বেরনো অধিকাংশ মানুষেরই এই একই অভিজ্ঞতা। শহরের ব্যান্ড স্ট্যান্ড-ধর্মতলা-বিবাদী বাগ অথবা হাওড়া টার্মিনাসের চিত্রই এ দিন বলে দিয়েছে, বেসরকারি বাস কত কম! হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর উপরে সার দিয়ে বাস, মিনিবাস দাঁড় করিয়ে রেখেছেন বাস মালিকেরা।
বেসরকারি বাস আগের মতো পুরো দমে কবে রাস্তায় নামবে? মালিকদের সংগঠনগুলি এখনও সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। সরকারের পক্ষ থেকেও বাস মালিকদের সঙ্গে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে কোনও আলোচনা এ দিন করা হয়নি। ফলে কাজে বেরনো মানুষকে বাস না পেয়ে আজ, বুধবারও দুর্ভোগে পড়তে হবে বলেই আশঙ্কা।
নাগেরবাজার-হাওড়া রুটের (২১৯ নম্বর) বাসমালিক অসিত মাইতি জানাচ্ছেন, রবি-সোম বাস চালিয়ে খরচ মিটিয়ে হাতে এসেছে মাত্র ৪৯ টাকা। ২৮ অক্টোবর বাস চালিয়ে তেলের খরচ, চালক আর খালাসির বেতন মিটিয়ে কন্ডাক্টরের পাওনা ৪৭৫ টাকা অসিতবাবু ওই দিন দিতে পারেননি। পরের দিন ২৯ অক্টোবর বাস চালিয়ে কন্ডাক্টরের বাকি বেতন এবং সে দিনের বেতন মিটিয়ে অসিতবাবু হাতে পেয়েছেন ৪৯ টাকা। অর্থাৎ দু’দিন বাস চালিয়ে তাঁর ওই টাকা লাভ হয়েছে। অসিতবাবুর চিন্তা সরকারি কর, বিমা, বাসের যন্ত্রাংশ বদলের খরচ মিটিয়ে আর কত দিন তিনি বাস চালাতে পারবেন।
অসিতবাবু একা নন। অনেক বাসমালিকই জানাচ্ছেন, সব খরচ মিটিয়ে দিনের শেষে হাতে ২০০ টাকাও থাকছে না। এই অবস্থায় বাস চালানো বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তাঁদের অন্য উপায় নেই। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের এক নেতা জানান, যে কোনও রুটেই মেরামতি, চালক, কন্ডাক্টরের অভাব বা অন্য কারণে ইদানীং গড়ে ৩-৪টি বাস চলে না। কিন্তু এক ধাক্কায় ৫০ শতাংশ বাস বসে যাওয়ার মতো অবস্থা আগে কখনও হয়নি। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের পক্ষে দীপক সরকার দাবি করেছেন, গত কয়েক মাসে ডিজেলের দাম ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। তাই কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ বাস ভাড়া না বাড়লে তাঁদের পক্ষে আর বাস চালানো সম্ভব হবে না। দীপকবাবু বলেন, “এমনিতেই ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাস বসে গিয়েছে। ভাড়া না বাড়লে বাকি বাসও বসে যাবে।”
কেবল বাস নয়, এ দিন ট্যাক্সিও তুলনায় অনেক কম চলেছে বলে দাবি করেছেন বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিমল গুহ। ওঁরা সরকারকে আরও দশ দিন সময় দিতে চান। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা সুমন গুহ এ দিন বলেন, “গত শনিবারই আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছি। তার উত্তর পাইনি। বুধবার আমরা বৈঠকে বসে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।”
এমতাবস্থায় সরকার কী করবে? পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র এ দিন বলেন, “এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।” তবে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ভাড়া বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। শুধু মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষা। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা নতুন ভাড়ার ছক তৈরি করে রেখেছি। মুখ্যমন্ত্রী বললেই জমা দিয়ে দেব।”

স্তব্ধ চাকা
রুট কত চলে মঙ্গলবার চলেছে
রহড়া বাজার-বাবুঘাট ৩৭ ১৮
রায়পুর-বাবুঘাট ২৫ ১৩
বিরাটি-বাবুঘাট ৩২ ১৫
সল্টলেক-বাবুঘাট ১৪
মহিষবাথান-বাবুঘাট ১৪
ঘটকপুকুর-বাবুঘাট ২৮ ১০
বাঁশদ্রোণী-বাবুঘাট ২২ ১৩
নেতাজিনগর-হাইকোর্ট ২৪
লায়েলকা-হাওড়া ২৪
পৈলান-হাওড়া ৭০ ৫০
বেহালা অক্সিটাউন-হাওড়া ৩০ ১৮
দমদম পার্ক-হাওড়া ৫০ ২৪
বাগুইআটি-হাওড়া ৭০ ৫০
বারাসত-হাওড়া ৫১ ৩২
নাগেরবাজার-হাওড়া ৪৪ ২৭



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.