নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
শিল্পায়নের দাবিকে সামনে রেখে রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নতুন উদ্যমে পথে নামছে কংগ্রেস।
হলদিয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে আগামী ৮ নভেম্বর কলকাতার রানি রাসমণি রোডে দিনভর গণ-অবস্থান করবে প্রদেশ কংগ্রেস। ওই অবস্থান-মঞ্চ থেকে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। অবস্থানে রাজ্য থেকে কেন্দ্রে সদ্য মন্ত্রী হওয়া অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সি ও আবু হাসেম খান চৌধুরীকেও উপস্থিতি থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, “শিল্পের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা তিন জন নতুন মন্ত্রীকে নিয়ে রাজ্য জুড়ে লড়াই করব। আমাদের মন্ত্রীরা শুধু লালবাতি-জ্বালা গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন না! মানুষের কাছে গিয়ে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝাবেন।”
হলদিয়া-কাণ্ডে মমতা-সরকারের কঠোর সমালোচনা করে প্রদীপবাবু মঙ্গলবার বলেন, “রাজ্যে সিঙ্গুরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না। বাংলা থেকে শিল্পের বিতাড়নের কর্মসূচির বিরুদ্ধে আন্দোলন করব। বাংলায় শিল্পপতি, বিনোয়গকারীদের আবাহনের জন্য আমরা আন্দোলনে নামছি। আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে রাজ্য সরকারকে বাধ্য করব এখানে শিল্প গড়ার পরিবেশ তৈরি করতে।” বস্তত, তৃণমূলের সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার পরে কংগ্রেস এখন বিরোধী ভূমিকায়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্য থেকে অধীর-দীপাদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে পেয়ে সাংগঠনিক ভাবে তারা কিছুটা উজ্জীবিতও। এই পরিস্থিতিতে হলদিয়া-কাণ্ডের সূত্রে রাজ্যে শিল্পায়নের দাবিকেই আন্দোলনের চেহারা দিতে চাইছে প্রদেশ কংগ্রেস।
বাংলায় এখন শিল্পের পরিবেশ নেই বলে মন্তব্য করে প্রদীপবাবু এ দিন অভিযোগ করেন, হলদিয়ায় মাওবাদীদের কায়দায় তৃণমূলের লোকেরা এবিজি আধিকারিকদের অপহরণ করেছে! এই ঘটনায় দেশের শিল্প মহলে রাজ্যের শিল্প পরিবেশ নিয়ে যাতে বিরূপ মানসিকতা ছড়িয়ে না-পড়ে, সেই লক্ষ্যেই কংগ্রেস রাজ্য জুড়ে আন্দোলন করবে। প্রদীপবাবুর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী কি জানেন না, শিল্প স্থাপনের পরিবেশ গড়তে হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা জরুরি! হলদিয়া বন্দর এলাকায় অপরাধীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা দরকার। সরকার-প্রশাসনের টালবাহানার বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন করতে হবেই।” তাঁর অভিযোগ, “সিপিএমের রাজত্বের মতোই তৃণমূল সরকারের পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করছে।” শিল্পায়নের দাবির পাশাপাশি পুলিশ ও প্রাশসনের শাসক দলের হয়ে কাজের বিরুদ্ধেও কংগ্রেস প্রতিবাদ আন্দোলন করবে।
এই পরিস্থিতিতে বসে নেই তৃণমূলও। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মোকাবিলায় দলের কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আগামী ৬ নভেম্বর ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে দলের সাংসদ, বিধায়ক, কাউন্সিলর, জেলা ও ব্লক সভাপতি এবং বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতা-নেত্রীদের ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরই মমতা দুর্গোৎসবের পরে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিজয়া সম্মিলনী করেন। এই বৈঠককে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজয়া-সম্মিলনী বলা হলেও সেখানে মমতা কংগ্রেসের নতুন তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মোকাবিলার দিশা দেখাতে পারেন বলে তৃণমূল সূত্রের ইঙ্গিত। পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি আরও এক দফা ঝালাইয়ের পাশাপাশি দলের পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে দলের শীর্ষ নেতাদের ধারণা। |