হলদিয়ায় সব ঠিক আছে, ফের দাবি করলেন মমতা
লদিয়া বন্দর নিয়ে অপপ্রচার চলছে বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা দশ দিন পুজোর ছুটির পরে মঙ্গলবার মহাকরণে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তিনি জানিয়ে দিলেন, হলদিয়ায় কিছুই হয়নি।
হলদিয়া বন্দরের ঘটনায় তিনি হস্তক্ষেপ করবেন কি না, আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিকের করা এই প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “এটা আপনাদের তৈরি করা ইস্যু, আমাদের নয়। আমি দুঃখিত, কিন্তু এটা আনন্দবাজার তৈরি করছে। আমার অনুরোধ, আপনারা নিজেদের কোনও ব্যক্তিগত স্বার্থে এ ভাবে কাজ করবেন না। ওখানে সব ঠিক আছে। পুলিশ তাদের মতো ব্যবস্থা নিচ্ছে। আপনাদের চিন্তা করার কোনও কারণ নেই।” সাংবাদিকের উদ্দেশে মমতার মন্তব্য, “আপনারা তো সরকার চালান না, একটা কাগজ চালান। বিহেভ প্রপারলি। সরকারের দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে দিন। সরকার ওখানে পুরো নিরাপত্তা দিচ্ছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, হলদিয়া নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অতিরঞ্জিত এবং কুৎসিত ভাবে প্রচার চলছে। “যাঁরা করছেন, তাঁদের কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে কি না, তা আমি জানি না। আমাকে সবটা দেখতে হবে। পুরোটা না-জেনে মন্তব্য করব কেন বলুন?” মন্তব্য করেন মমতা।


এবিজি গোষ্ঠী কি রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে?
মমতার জবাব, “এ নিয়ে সিপিএম ও কংগ্রেস অপপ্রচার চালাচ্ছে। একটি সংবাদপত্র গোষ্ঠীও অপপ্রচার চালাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে শিল্প ভাল হচ্ছে। এতে কারও কারও হিংসা হচ্ছে।” মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “আসলে আগে বাড়িতে গিয়ে পরামর্শ করে এ সব হতো। এখন কারও বাড়িতে গিয়ে হয় না। সরাসরি সরকার থেকেই হয়ে যায়।”

মনমোহন সরকার
পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসের তিন জনকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী করা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “হতেই পারে। কার পার্টি, কার ছাগল, সে মাথা কাটবে কি লেজ কাটবে, কার মাছ, সে মাথা কাটবে কি লেজ কাটবে... এ তো কংগ্রেসের সরকার, ইউপিএ-র সরকার নয়। আপনাদের বুঝতে হবে, এখন ইউপিএ-২ সরকারে শরদ পওয়ার আর ডিএমকে-র দু’-এক জন ছাড়া কোনও পার্টি যোগ দেয়নি। এটা কি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা নয়? আমি মনে করি, আমার এই একটা লাইনই কথা বলবে।” মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “আমি শুনেছি, মুলায়ম, মায়াবতী এবং ডিএমকে দলকে বলা হয়েছিল। কেউ সরকারে যোগ দিতে রাজি হয়নি। ২২ জন নতুন মন্ত্রীর মধ্যে এক জন মাত্র এনসিপি-র। বাকি সবটাই কংগ্রেসের!” মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমি খুশি হব যদি ওরা বলে, এটা কংগ্রেসের সরকার, ইউপিএ-র নয়।”
কেন্দ্রের মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে মমতার অভিযোগ, “এই সরকার একতরফা ভাবে কাজ করছে। একটি দলের শাসন চলছে। দু’-এক জনকে রেখে দিয়েছে, তারা জোনাকি পোকার মতো টিমটিম করে জ্বলছে, আর সাহারা দিচ্ছে। তাদের নিয়ে যা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, প্রত্যেকটা সর্বনাশা। এই সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ওদের উচিত ছিল জনগণের আস্থা আছে কি না, তা সংসদে দেখে নেওয়া।” মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “অনেকে আমাদের বলেন, আপনারা কেন অনাস্থা আনলেন না? আমি বলি, যে দিন আমরা সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছি, সে দিনই অনাস্থার দাবিটা তুলে দিয়েছি। ওদের উচিত ছিল নিজে থেকে সংসদের আস্থা নেওয়া।”
এবং এ প্রসঙ্গেই মমতার সংযোজন, “অন্না হজারে বলেছেন, এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই। আমি এই মতকে পুরোপুরি সমর্থন করি। এই সরকারের ভোটে যাওয়া উচিত। একটা সংখ্যালঘু সরকার মন্ত্রিসভার রদবদল করল! আরে বডিটাই তো পচে গেছে! তাতে প্রাণসঞ্চার করা যায়? আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, ওটাকে কাঁধে করে শ্মশানে নিয়ে যাবেন, নাকি কবরে নিয়ে যাবেন, না সৎকারের গাড়িতে নেবেন। কারণ, বইবারই তো লোক নেই!”
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন অভিযোগ করেন, “কেন্দ্রে একটা সংখ্যালঘু সরকার অসাংবিধানিক ও অনৈতিক ভাবে সবাইকে চমকাচ্ছে, ধমকাচ্ছে, সিবিআইয়ের ভয় দেখাচ্ছে। যেন সরকারটা চালাচ্ছে সিবিআই। কয়েকটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে টাকা দেওয়া হচ্ছে, ডিল করা হচ্ছে, আর তাদের দিয়ে বলানো হচ্ছে, সরকার যা-ই করুক, সব ভাল হচ্ছে! এটা ভারতবর্ষ নয়।” তাঁর মন্তব্য, “আগে সংবাদপত্রকে দেখেছি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কত খবর করেছে! সরকারকে ফেলে দিয়েছে! এখন দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, একটা ডিল হয়ে যাচ্ছে, আর সমস্ত অন্যায়গুলোকে সমর্থন করে যাচ্ছে! আমি অনুরোধ করব, আপনাদের সম্মান আছে। এটা করবেন না।”

রেল প্রকল্প
তাঁর আমলের রেল-প্রকল্পগুলির প্রসঙ্গে এ দিন মমতার দাবি, “আমার সময়ে রেলের যত প্রকল্প হয়েছে, সব যোজনা কমিশন, ফিনান্স পর্যন্ত করে দিয়েছি। সব প্রকল্পের টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। কাজ চলছে। এগুলো কেউ আটকাতে পারবে না। আমাকে চমকে লাভ নেই। মনে রাখবেন, কেন্দ্রে আমাদের সমর্থন নিয়ে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। এখানে কিন্তু আমরা কংগ্রেসকে ছাড়াই একা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রয়েছি। এটাই মূল পার্থক্য। ভুলে যাবেন না।”

সেট-টপ বক্স
এ দিকে কাল, বৃহস্পতিবার থেকে গোটা দেশে কেবল টেলিভিশন সম্প্রচারে সেট-টপ বক্স বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “দিল্লির সরকারে বসে মস্তানি করলে আমরা শুনব না। বর্তমান অ্যানালগ ব্যবস্থার অপশন চালু রাখতে হবে।” তাঁর অভিযোগ, “এটা করার আগে কেন্দ্র আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। জুন মাসে সব জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছিলাম, এখনও উত্তর দেয়নি।”
মমতার বক্তব্য, “যাঁরা নিজের ইচ্ছায় সেট-টপ বক্স লাগিয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু যাঁরা লাগাতে পারেননি, তাঁরা কিছুই দেখতে পাবেন না!”
উদাহরণও দেন “হয়তো তাঁরা চ্যানেল টেন বা কলকাতা টিভি বা নিউজ টাইম দেখেন। আপনারা যাতে না ভাবেন আমি একপেশে কথা বলছি, তাই বলে রাখি, অনেকে ২৪ ঘণ্টাও দেখেন। সেট-টপ বক্স না-লাগালে তাঁরা কিছুই দেখতে পাবেন না। এ ভাবে তাদের সম্প্রচার বন্ধ করার চেষ্টা হলে কলকাতার রাজপথে আন্দোলন হবে। সেই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর মতে, “মুম্বই-দিল্লিতে কংগ্রেসের সরকার। ওরা করবে। চেন্নাইয়ের লোকের আর্থিক অবস্থা অনেক ভাল, ওরাও করতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষের পক্ষে তা সম্ভব নয়। যদি চালু করতেই হতো, তা হলে সরকারের উচিত ছিল আর্থিক অবস্থা বিচার করে সেই অনুযায়ী কিস্তিতে টাকা নিয়ে সেট-টপ বক্স বিলির ব্যবস্থা করা। তা না-করে গায়ের জোরে চালু করতে চাইলে রাজ্য সরকার বরদাস্ত করবে না। আপনারা বলুন বিনা পয়সায় দেবেন, আমরা সবার বাড়িতে ঢুকিয়ে দিচ্ছি।”
মমতা বলেন, “আমি জাটুয়া সাহেবকে (প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী সি এম জাটুয়া) জিজ্ঞাসা করেছিলাম। উনি বলেছেন, তাঁর কিছু জানা নেই। তাঁর কাছে এটা আনা হয়নি।”
রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি রদ, পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি কিংবা পেনশনের টাকা এক বারে দিয়ে দেওয়ার মতো কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে বলে অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “এই রকম একটা সময়েকী করে মানুষকে সেট-টপ বক্স কিনতে বাধ্য করা যায়? বাজারে আদৌ সেট-টপ বক্স আছে? থাকলে সেটা কি ন্যায্য দামে মিলছে? পুজোর মাসে ওটা কেনার ক্ষমতা কত জনের রয়েছে?”
তিনি আরও বলেন, “৩১ তারিখের পরে সেট-টপ বক্স না-থাকলে সম্প্রচার বন্ধ করে দেবে, এমন ঔদ্ধত্য বা অধিকার সরকারের নেই। এই ভাবে দরজা বন্ধ করা যাবে না।” সেট-টপ বক্স বাধ্যতামূলক করার চেষ্টার পিছনে অন্য অভিসন্ধির ইঙ্গিত দিয়ে মমতার মন্তব্য, “হঠাৎ কেন এটা কিনতেই হবে? কারা এটা বানাচ্ছে? কী ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে? দেশে ১৩-১৪ কোটি যন্ত্রের দরকার। শুনছি দু’টো চিনা সংস্থা এটি তৈরির বরাত পেয়েছে। কী ভাবে বরাত দেওয়া হল? মাথায় ঢুকছে না। বিগ বিগ ম্যাটার। আমরা এটা মানব না।”

আনাজের দাম
রাজ্যে ফল-সব্জির দাম প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, “কিছু লোক সরকারের দুর্নাম করতে দাম বাড়ানোর কথা বলছেন। আসলে কিছু বিদেশি আপেল আর মোসম্বির দাম শুধু বেড়েছে। দেশি ফলের দাম গত ছ’মাস ধরেই স্থিতিশীল। যে দু’-এক টাকা এ-দিক ও-দিক হয়েছে, সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।” মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “গড়িয়াহাট ফুটপাথে জিনিসের যা দাম, বড় শপিং মলে তা নয়। নেটের জামা পরা, স্টিকার লাগানো আপেল আমেরিকা-কানাডা থেকে আসে। সেগুলোর দাম বেড়েছে। সেটাকেই দাম বাড়া বলে অনেকে ওয়ালমার্ট-মার্কা তথ্য তুলে ধরতে চাইছেন।” আসন্ন কালীপুজো উপলক্ষে জেলা থেকে আসা সব্জি-বিক্রেতাদের উপরে চাঁদার জুলুম না-করতে উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে এ দিন আবেদনও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। “যাঁরা সব্জি নিয়ে কলকাতায় বিক্রির জন্য আসেন, তাঁদের জায়গায়-জায়গায় কালীপুজোর চাঁদা দিতে হয়। এরই মধ্যে কোলে মার্কেট, শিয়ালদহ, বারাসতের মতো জায়গা থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। ভয়ে তাঁরা আসতে পারেন না। অথবা এলেও চাঁদার জন্য সব্জির দাম বাড়াতে হয়। হাত জোড় করে অনুরোধ করছি, চাঁদার জন্য জুলুম করা থেকে বিরত থাকুন,” বলেন তিনি।

বক্তব্য বিকৃতি
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকের গোড়াতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমার কথা কোথাও কোথাও বিকৃত হচ্ছে। আমি হয়তো বলছি, আমি ভাত খাই, কিন্তু দেখানো হল ‘আমি ভাত’ পর্যন্ত। এতে কথার মানে বদলে যাচ্ছে। আমার কথা, হয় পুরো দেখান, না হয় দেখাবেন না। কেউ সমালোচনা করতেই পারেন। সেটা সানন্দে গ্রহণ করব। কিন্তু আমরা কিছু বলি না বলে কেউ কেউ কথা বেশি বিকৃত করছেন। এ বার তা হলে আমরা তথ্য আইন প্রয়োগ করার চেষ্টা করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.