|
খেলার খবর |
কাঠি খোঁজাখুঁজি
(হারিয়ে যাওয়া খেলা, পর্ব--২৮)
অর্ঘ্য ঘোষ • রাজনগর |
|
‘কী মজা কী মজা
ভজা খেল গজা
গজার ভিতর পোকা
ভজা বড় বোকা’
বছর কুড়ি-পঁচিশ আগেও একটি বিশেষ খেলার সুবাদে কচিকাঁচাদের মুখে ফুটত এই ছড়া। এখন বহুলোকেরই কেবল স্মৃতিতেই তার একমাত্র অস্তিত্ব। কারণ, যার সূত্রে তৈরি এই ছড়া চর্চার অভাবে হারিয়ে যাওয়া খেলার তালিকায় নাম লিখিয়েছে সেই ‘কাঠি খোঁজাখুঁজি’ বা ‘কাঠি গোজাগুজি’ খেলাটিও।
ছেলেমেয়ে একসঙ্গে বা আলাদা ভাবে এই খেলা চলে। তবে ‘কাঠি খোঁজাখুঁজি’ মূলত দুই প্রতিযোগীর খেলা। বিশেষ গণনা-পদ্ধতিতে বা টসের মাধ্যমে প্রথমেই একজনের ‘মোড়’ (এই খেলার ক্ষেত্রে বলা হয় ‘ভজা’) নির্ধারিত হয়। এই খেলায় বিপক্ষের লুকোনো কাঠি খুঁজে বের করাই হল সেই ‘ভজা’র কাজ।
খেলার জন্য বালি বা ধুলো দিয়ে ছোট আকৃতির একটি বাঁধ তৈরি করে নেওয়া হয়। প্রতিপক্ষকে ওই বাঁধের ভেতরই এক হাতের তালুর আড়াল করে একটি ছোট গাছের ডাল বা কাঠি লুকোতে হয়। আর ভজাকে দুই হাত আঙুল বদ্ধ অবস্থায় বাঁধের উপর চাপা দিয়ে লুকোনো কাঠিটিকে চিহ্নিত করতে হয়। চিহ্নিতকরণ সঠিক হলে বিপক্ষকে এক ‘চিক’ দেবে ভজা। আর ভুল জায়গায় হাত চাপা পড়লে উল্টে ভজা নিজেই এক ‘চিক’ খায়।
খেলার আগেই দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হয়, কত সংখ্যক চিকে এক ‘গজা’ বা এক ‘গেম’ ধরা হবে। সেই অনুযায়ী যে ওই পরিমাণ চিক খাবে তাকেই গজা খেতে হবে। |
গজা খাওয়ার অর্থ হল, ভজা অর্থাৎ মোড়ধারীকে দু’হাত মেলে ধরতে হবে। প্রতিপক্ষ বাঁধ থেকে ধুলো বা বালি নিয়ে ভজার হাত ভর্তি করে দেবে। কাঠিটিকেও ওই ধুলো বা বালির মধ্যে গুঁজে দেবে। এরপর প্রতিপক্ষ দু’হাত দিয়ে ভজার চোখ চেপে ধরে কোনও গোপন স্থানে কাঠি-সহ ধুলো বালি ফেলে ফের চাপা দিয়ে খেলার স্থানে ফিরিয়ে আনবে।
শেষে চোখ খুলে দিয়ে ভজাকে বিভিন্ন ছড়া বা টিকাটিপ্পনী কেটে উত্যক্ত করবে প্রতিপক্ষ। আর ভজাকে নীরবে তা হজম করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাঠিটিকে খুঁজে বের করতে হবে। শুধু কাঠি খুঁজে বের করতে পারলেই হবে না। গোপন জায়গা থেকে ধুলো, বালি-সহ কাঠিটিকে কুড়িয়ে খেলার স্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে। তবেই তার মোড় অর্থাৎ ভজা ঘুচবে। অন্যথায় নির্ধারিত সময় পার হলে ফের তাকে ভজা হতে হবে।
ওই খেলার কথা আজও স্মৃতিতে ভাসে রাজনগরের তাঁতিপাড়ার সমীর দাস, রামপুরহাটের বড়শালের শীতল লেটদের। তাঁদের আক্ষেপ, “কাঠি খোঁজাখুঁজি খেলায় প্রচলিত ছড়ার সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে আমরা কত যে নতুন ছড়া বানাতাম তার ঠিক নেই। এখন আর ওই খেলাও নেই, তার ছড়াও নেই।” |