এ যেন দুর্গার পদতলে বসে জগদ্ধাত্রীর আবাহন পরিকল্পনা। শারদোৎসব বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব হলেও কৃষ্ণনগরে দুর্গা ও তাঁর পরিবার বিশেষ কলকে পায় না। বরং কৃষ্ণনাগরিকেরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন জগদ্ধাত্রীর। সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন বারোয়ারি দুর্গা পুজো শুরু করলেও তা নেহাতই জৌলুসহীন। উল্টে দুর্গাপুজো উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটি থাকায় এই দিনগুলিতে বারোয়ারির উদ্যোক্তারা জগদ্ধাত্রী পুজোর পরিকল্পনাগুলো সেরে নেন। একাধিকবার নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তৈরি করে ফেলেন বাজেট, মণ্ডপসজ্জার পরিকল্পনা এমনকী নিজেদের মধ্যে কাজের দায়িত্বও ভাগ করে নেন। এ বারেও তার যে বিশেষ ব্যতিক্রম ঘটেনি, তা পরিষ্কার হয়ে যায় বিভিন্ন বারোয়ারি কমিটিগুলোর সঙ্গে কথা বললেই। দুর্গাপুজো শেষ হতেই তাঁরা জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রস্তুতিতে পুরোপুরি ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারই মাঝে অবশ্য শহরের বিভিন্ন প্রান্তে কালীপুজো করে বিভিন্ন ক্লাব।
সম্প্রতি শহরে কালীপুজোর জৌলুস আগের থেকে কিছুটা বাড়লেও তা জগদ্ধাত্রীর জৌলুস আর আবেগের কাছে নেহাতই সাদামাটা। আপামর বাঙালির আবেগ জড়িয়ে আছে দুর্গাপুজোকে ঘিরে, কিন্তু বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো কৃষ্ণনগরের মানুষের আবেগ আবর্তিত হয় কেবল জগদ্ধাত্রীকে ঘিরেই। তাই তো দুর্গাপুজো থেকে ঈদ, কালীপুজো থেকে ভাইফোঁটা সমস্ত ছুটির দিনগুলিতে কৃষ্ণনাগরিকেরা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন জগদ্ধাত্রীর প্রস্তুতিতে।
কৃষ্ণনগরের অন্যতম বড় পুজো নগেন্দ্রনগর যুবগোষ্ঠীর এক উদ্যোক্তা স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা ষষ্ঠী ও দশমীর দিনই পাড়ায় বৈঠক সেরে নিয়েছিলাম, কারণ এটা একটা বড় সুযোগ। দুর্গাপুজোর ছুটিতে সকলেই বাড়িতে থাকেন। সকলেই তাই বৈঠকে যোগদান করে নিজেদের মতামত জানানোর পাশাপাশি দায়িত্বও ভাগ করে নিতে পারেন।” একই কথা বলেন ষষ্ঠীতলা বারোয়ারির কর্মকর্তা দীপক বিশ্বাস। পুজোর মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সেরে নিয়েছেন এই বারোয়ারির কর্মকর্তারা। দীপকবাবু বলেন, ‘‘শহরে যেহেতু তেমন দুর্গাপুজো হয় না, তাই ওই দিনগুলিতে আমাদের তেমন কোনও ব্যস্ততা থাকে না, সেই সুযোগে আমরা সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় জগদ্ধাত্রী পুজোর বাজেট থেকে আনুষাঙ্গিক কাজকর্ম সেরে ফেলতে পারি।”
কৃষ্ণনগর রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শহর বলে পরিচিত। আবার জগদ্ধাত্রী পুজোরও প্রচলন করেছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রই। অন্য উৎসবকে ম্লান করে দিয়ে বরাবরই জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে আবেগে মেতে ওঠেন কৃষ্ণনাগরিকেরা। আর সেই আবেগের অন্যতম কেন্দ্রস্থল চাষাপাড়ার বুড়িমা শুধু কৃষ্ণনগর শহরই নয়, জেলার গন্ডি ছাড়িয়ে বুড়িমার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে ভিনরাজ্যেও। পুজোর আগের দিন থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভিড় করেন। এই দেবীর সামনে আর সেই ভিড় সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয় উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসনকে। আর তাই এই বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দুর্গাপুজোর আগে থেকেই। বুড়িমা পুজো কমিটির সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “পুজোর এতবড় আয়োজন সেটা তো আর দুর্গাপুজোর জন্য ফেলে রাখা যায় না। দুর্গাপুজোর আগে থেকেই আমরা তাই পুজো প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলাম।” |