|
|
|
|
পুলিশকে অপহরণের খবর দেন বন্দর কর্তারাও |
জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
শনিবার রাতের অপহরণের কথা এবিজি কর্তারা শুধু নন, পুলিশকে জানিয়েছিলেন হলদিয়া বন্দরের এক কর্তাও। এবিজি-র কর্তাদের কাছ থেকে ঘটনার কথা শুনে জেলার পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং হলদিয়া থানার আইসি-কে এসএমএস পাঠিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। ফলে সে দিন অপহরণের কোনও ঘটনা ঘটেনি এবং এবিজি-র তিন কর্তা স্বেচ্ছায় হলদিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন পুলিশ সুপারের এই দাবি আরও একটা বড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। বন্দর কর্তার এই এসএমএস নিয়ে মঙ্গলবার রা কাড়েননি পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন।
শনিবার রাত সওয়া ১টা নাগাদ এবিজি-র তিন কর্তাকে শঙ্খিনী আবাসন থেকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বন্দরের মুখপাত্র তথা ট্রাফিক ম্যানেজার দামোদর নায়েক এবং ম্যানেজার (প্রশাসন) অমল দত্তকে ফেন করেন এবিজি-র ম্যানেজার (অপারেশন) প্রদীপ ঘোষ। গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে বন্দরের সাহায্য চান তিনি। |
|
কাজ হারানোর আশঙ্কায় এবিজি-র শ্রমিকদের মিছিল। —নিজস্ব চিত্র |
দামোদরবাবু জানতে চান, অপহরণের কথা প্রদীপবাবু কী ভাবে জেনেছেন। এবিজি-কর্তা তাঁকে বলেন, “মনপ্রীত জলি, ভূষণ পাটিল এবং জগদীশ বেহরা আমাকে বার বার ফোন করছেন। তাঁরা আতঙ্কিত, সাহায্য চাইছেন। কী করব বুঝতে না পেরেই আপনাকে ফোন করছি।” মঙ্গলবার এ ব্যাপারে দামোদরবাবুকে জিজ্ঞাসা করে হলে তিনি বলেন, “এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না, পুলিশ তদন্ত করছে। তারাই যা দেখার দেখবে।”
দামোদরবাবুকে ফোন করার পরেও বন্দরের আর এক কর্তা অমল দত্তকে ফোন করেন প্রদীপবাবু। বন্দরের প্রশাসনিক ম্যানেজার হিসেবে অমলবাবুই স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। অপহরণের অভিযোগ পেয়ে তিনি তৎক্ষণাৎ পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং হলদিয়া থানার আইসি-কে এসএমএস পাঠান। তাতে লেখেন, “এবিজি-র তিন কর্তা-সহ পাঁচ জনকে কিছু লোক তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে খবর পেয়েছি। ঘটনার সত্যাসত্য বিচার করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আর্জি জানাচ্ছি।” সেই এসএমএস পাঠানো হয় শনিবার রাত দেড়টার মধ্যে। তবে দামোদরবাবুর মতো অমলবাবুও এ দিন বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তিনি বলেন “এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমে কিছু বলব না। কোনও তদন্তকারী সংস্থা জানতে চাইলে নিশ্চয়ই জানাব।”
এবিজি-র সিইও গুরপ্রীত মালহিও এ দিন বলেন, “শুধু পুলিশ নয়, হলদিয়া বন্দরের দু’জন সিনিয়র অফিসারকেও আমরা অপহরণের ঘটনা জানিয়েছিলাম। যদি পালিয়েই আসব তা হলে পুলিশ ডেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে আসতে যাব কেন? হাইকোর্টের নির্দেশ মানা হলে আমরা এখনও হলদিয়ায় কাজ করতে পারি। কিন্তু সেই পরিবেশ দেবে কে?”
সোমবার রাতে সাংবাদিক সম্মেলনে মনপ্রীত জলির এসএমএস দেখিয়ে অপহরণের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন। দাবি করেছিলেন, ওই এসএমএসে স্বেচ্ছায় হলদিয়া ছেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন মনপ্রীত। (যদিও মঙ্গলবার তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “স্বেচ্ছায় যাওয়ার কথা ছিল কিনা জানি না, তবে হলদিয়া ছেড়ে যাচ্ছি বলে লেখা হয়েছিল।”) বন্দর কর্তার এসএমএস নিয়ে কিন্তু এ দিন তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। শুধু বলেন, “এ রকম বার্তা এসেছিল কিনা, দেখতে হবে।”
এ দিকে এত দিন চুপচাপ থাকার পরে হলদিয়া নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে জাহাজ মন্ত্রক। এবিজি-র অন্যতম কর্ণধার সাকেত অগ্রবালকে নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে বন্দরের পরিস্থিতি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করেন মন্ত্রকের কর্তারা। আজ, বুধবারও বৈঠক হবে। মন্ত্রক সূত্রে খবর, রাজ্য প্রশানকে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হতে পারে। এমনকী সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বন্দরের অছিদেরও।
এরই মাঝে অবশ্য হলদিয়া থেকে এবিজি-কে বিদায় দিতে চেয়ে আজ, বুধবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে বন্দর। সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর এজলাসে এই সংক্রান্ত মামলা তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। বন্দরের বক্তব্য, এবিজি কাজ করতে না পারলে চুক্তি বাতিল করে চলে যাক। বন্দর আর লোকসান সইতে পারছে না। এবিজি-ও পাল্টা জানাবে যে, আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা যাচ্ছে না। কর্মীরা ভয়ে কাজ করতে চাইছেন না। তা সত্ত্বেও হলদিয়ায় থাকতে চায় তারা। |
|
|
|
|
|