|
|
|
|
এবিজি-র প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষেই সওয়াল শুভেন্দুর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হলদিয়ায় বিকল্প পথ বাতলে বিতর্ক বাড়ালেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, এবিজি হলদিয়া বন্দরে কাজ করতে না চাইলে তার জায়গায় টেন্ডারে যে সংস্থা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দর হেঁকেছিল, তাদের কাজ দেওয়া হোক।
মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে শুভেন্দু বলেন,“এবিজি কাজ করতে না পারলে টেন্ডারে যারা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দর হেঁকেছিল, বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের কাজ দিয়ে দিক। না হলে নতুন করে টেন্ডার ডাকুক।” জাহাজি মহলের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে নিয়ম হল নতুন করে গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা।
যে সংস্থায় এবিজি-র প্রতিদ্বন্দ্বী রিপ্লে সংস্থার অংশীদারী রয়েছে তার হয়ে সুপারিশ করে তমলুকের সাংসদ নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন বলে বন্দর সূত্রে বলা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাকে অধিক সুবিধা দিতে হলদিয়া বন্দর থেকে তাদের সরানোর চক্রান্ত হচ্ছে বলে এবিজি-র পক্ষ থেকে আগেই অভিযোগ তোলা হয়েছিল। এ দিন শুভেন্দুর সুপারিশে সেটাই প্রমাণিত হল বলে এবিজি-র এক কর্তা এ দিন দাবি করেছেন। |
|
সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র |
হলদিয়ায় ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে এবিজি পর যারা দর হেঁকেছিল তারা হল রিপ্লে অ্যান্ড কোম্পানি এবং টাটাদের একটি সহযোগীর যৌথ উদ্যোগের সংস্থা। এবিজি যেখানে প্রতি টন পণ্য খালাসের জন্য ৭০ টাকা দর হেঁকেছিল, সেখানে ওই যৌথ উদ্যোগের সংস্থা দর হেঁকেছিল প্রতি টনে ৯৫ টাকা। তৃতীয় সংস্থা হিসাবে দরপত্র দিয়েছিল একটি দক্ষিণ ভারতীয় কোম্পানি। তারা প্রতি টন পণ্য নামাতে-ওঠাতে ১৩৫ টাকা দর দিয়েছিল। সর্বনিম্ন দর দিয়ে শেষ পর্যন্ত এবিজি-ই ওই দুই বার্থে কাজের বরাত পায়।
এবিজি-কে রাখতে চেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ কেন আদালতের দ্বারস্থ হলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ। তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও যথাযথ নয়। এবিজি-কে রাখতে চেয়ে এত বার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কী প্রয়োজন ছিল? কলকাতা বন্দর চাইলে নিজেদের আইন প্রয়োগ করেই ওদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করতে পারত। সে পথে না গিয়ে অযথা জটিলতা বাড়িয়েছেন বন্দর কর্তারা।” এমনকী বন্দর চেয়ারম্যানকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। শুভেন্দু বলেন, “পূর্ণ দায়িত্বের চেয়ারম্যান নেই বন্দরে। যিনি আছেন তিনি আবার কলকাতাতেই বসে থাকেন। এ ভাবে বন্দর চলতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকারের এ দিকে নজর নেই। ”
এবিজি হলদিয়ায় কাজ করুক এটা কি আপনি চান না? এই প্রশ্নের জবাবে শুভেন্দুর বক্তব্য, “ছাঁটাই কর্মীদের পুনর্ববহাল ও পিএফ মিটিয়ে দেওয়ার পর এবিজি মনে করলে কাজ করতে পারে। আইন শৃঙ্খলার কোনও সমস্যা তো বন্দর এলাকায় নেই। তবে এবিজি নানা ছুতোয় পালিয়ে যেতে চাইছে।”
এবিজি-কে শিল্প সংস্থা বলতেও নারাজ শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “হ্যান্ডলিং এজেন্টকে শিল্পপতি বলা হচ্ছে! বাণিজ্যিক কারণেই তারা কাজ করতে চাইছে না।” দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরপত্র ডাকা সংস্থাটি ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে জাহাজ-মহলে পরিচিত। এবিজির বদলে ওই সংস্থাকে কাজের সুযোগ দিতেই তিনি তাদের হয়ে তদ্বির করছেন কি না, প্রশ্নের জবাবে শুভেন্দুর জবাব, “এই অভিযোগ মিথ্যে। আমাদের কোনও লোকএর মধ্যে নেই।”
হলদিয়া জট নিয়ে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও শুভেন্দুর সুরে সুর মিলিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি তো ওদের চিঠি দিয়ে দু-আড়াই মাস আগে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। ওরা আসেনি। ওরা ২৭৫ জনকে ছাঁটাই করল। এ ব্যাপারে তো ওরা শ্রম দফতরের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ওরা কাজকর্ম করে। ওদের রেকর্ড কোথায় কেমন তা খোঁজ নিলেই জানা যাবে। এখানে রাজ্য সরকারের কিছু করার নেই। চুক্তি হয়েছে বন্দরের সঙ্গে ওই সংস্থার। বন্দর কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা। বলা হচ্ছে শিল্প চলে যাচ্ছে। ওরা কোনও বিনিয়োগ করেনি। ওরা স্রেফ ঠিকাদার সংস্থা। ওরা চলে গেলে কিছু দিন হাতে কাজ হবে। পরে কেউ এক জন স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র নিয়ে আসবে।” পার্থর পাশাপাশি শুভেন্দুও অভিযোগ করেন, “এবিজি এর আগে মুম্বই বা গুজরাতেও একই ভাবে জটিলতা তৈরি করেছিল।”স্থানীয় সাংসদ হিসেবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে শুভেন্দুর দাবি, “এবিজি যে ভাবে এসএমএস করে ২৭৫ জন কর্মীকে ছাঁটাই করছে, তা মানা যায় না। এবিজি কর্মীরাই হলদিয়া থানায় অভিযোগ করেছেন, তাঁদের দু’বছরের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা পড়েনি। এবিজি কর্তারা সেই অভিযোগে অভিযুক্ত। ফলে সেই পিএফ দেওয়ার পাশাপাশি ছাঁটাই কর্মীদের পুনবর্হালের দাবি জানাচ্ছি।” শারদীয়ার আগে কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি ৩৩০ জন কর্মীকে পুজোর বোনাসও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। |
|
|
|
|
|