|
|
|
|
শুভেন্দু বলছেন সাজানো ঘটনা, কিন্তু... |
আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে হলদিয়া |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও হলদিয়া |
এবিজি কর্তাদের অপহরণের ঘটনাকে সাজানো ঘটনা বলে দাবি করলেন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, গোটাটাই রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করার একটা চক্রান্ত। সেই চক্রান্তে এবিজি-র সঙ্গে অনেকগুলো মাথা কাজ করছে এবং তার মধ্যে একটি সংবাদপত্রগোষ্ঠীও রয়েছে বলে শুভেন্দুর অভিযোগ।
মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ। এবিজি-কাণ্ডে অভিযোগের অন্যতম আঙুল শুভেন্দুর দিকেই। এবিজি-র ছাঁটাই না-হওয়া শ্রমিকরা এই পরিস্থিতির জন্য শুভেন্দুকেই দায়ী করছেন। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মুখ খোলার দায়ে সোমবার রাতে এবিজি-র তিন কর্মীর বাড়িতে পুলিশ চড়াও হয়েছিল বলেও অভিযোগ।
এ দিন কলকাতায় অবশ্য শুভেন্দু সব অভিযোগই মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। একটি সংবাদপত্রগোষ্ঠীর একাংশ নিজের স্বার্থে হলদিয়া-কাণ্ড নিয়ে মমতার সরকারকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে বলে পাল্টা অভিযোগ এনেছেন তিনি। এ দিন শুভেন্দু বলেন, “রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করতে এবিজি-র সঙ্গে অনেকগুলো মাথা কাজ করছে...জমির ঊর্ধ্বসীমা তুলে দিতে চায় যে সংবাদপত্রগোষ্ঠী, যারা চায় সব জমি বেসরকারি হাতে দিয়ে দেওয়া হোক, তারাই এই কাজের মাথায় রয়েছে।” হলদিয়া বন্দরের পরিবেশ নষ্ট করার উদ্দেশ্যেই এই কুৎসার রাজনীতি করা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। শুভেন্দুর কথায়, “সিঙ্গুরের সময়ও এরা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুৎসা করেছিলেন। এখনও নিজেদের গোষ্ঠীর স্বার্থে মমতার জনপ্রিয়তা খর্ব করতে নেমেছেন।” |
|
শুভেন্দুর বক্তব্য অনুযায়ী, এবিজি কর্তাদের অপহরণ-কাণ্ড সাজানো ঘটনা। শুভেন্দু এ দিন দাবি করেছেন, “অপহরণের অভিযোগের সঙ্গে তথ্যপ্রমাণের কোনও সাযুজ্য নেই। এমন ভাবেই অপহরণ করা হল যে, ওই কর্তাকে স্বাস্থ্য-পরীক্ষাও করাতে হল না! একাই ট্রেনে উঠতে পারলেন!” এমনিতেই অপহরণের ঘটনার পরে তিন দিন কেটে যাওয়া সত্ত্বেও পুলিশ কাউকে ধরতে পারল না কেন, এই প্রশ্ন উঠছিল। এ দিন শুভেন্দু যা বললেন, তার পরে পুলিশ আদৌ তদন্তের ব্যাপারে কতটা কী করবে, সেই আশঙ্কা জাঁকিয়ে বসেছে।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আশঙ্কা শুধু অপহরণের ঘটনার তদন্ত নিয়েই নয় অবশ্য। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মুখ খুললে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ আসছে। অভিযোগ, সোমবার রাতে হলদিয়ার দুর্গাচক ও সুতাহাটা থানার পুলিশ এবিজি-র তিন কর্মীর বাড়িতে হানা দেয়। ভাগ্যবন্তপুরের বাসিন্দা রহিম মল্লিক মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, “সোমবার রাতে পুলিশ দু’বার এসেছিল। কোনও কারণ না জানিয়েই আমাকে তুলে নিয়ে যেতে চায় ওরা। আমি বাধা দিই। পরিবারের লোকেরাও বাধা দেন। তখন আমাকে ও স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করা হয়।” রহিমের স্ত্রী নূরবানু বিবি বলেন, “ওরা মেরে আমার ওড়না ছিঁড়ে দেয়। টর্চ দিয়ে মাথায় মেরেছে।” মঙ্গলবার হলদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন রহিম। অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমন হাওলাদার বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এবিজি-র আরও দুই কর্মী, কুকড়াহাটির হরিবল্লভপুরের বাসিন্দা শেখ সিরাজ ও গেঁওডাবের বাবলু সাহুর বাড়িতেও পুলিশ গিয়েছিল। শেখ সিরাজ বলেন, “আমার বাড়িতে সুতাহাটা থানার পুলিশ এসেছিল। বাড়িতে ছিলাম না। স্ত্রী সে কথা জানালে পুলিশ চলে যায়।” রহিম-সিরাজ-বাবলুর বাড়ি কেন গিয়েছিল পুলিশ? এ ব্যাপারে পুলিশের কী বক্তব্য? হলদিয়ার এসডিপিও অমিতাভ মাইতি বলেন, “ওই তিন জনের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতা তুষার মণ্ডল সুতাহাটা থানায় জালিয়াতির অভিযোগ করেন। তাই পুলিশ ওদের বাড়িতে গিয়েছিল।” |
|
অপহরণের অভিযোগের ৩৬ ঘণ্টা পরে পুলিশ মুখ খুলল কেন? |
রবিবার রাতে আবাসনে পাহারা বসলো না কেন? |
গত ৪৮ ঘণ্টায় কেন কেউ ধরা পড়ল না? |
ভূষণ পাটিলের ফ্ল্যাটের দরজায় ভাঙচুরের চিহ্ন কেন? |
সোমবার সকালেই আবাসিকদের জিজ্ঞাসাবাদ হল না কেন? |
পুলিশকে পাঠানো এবিজি-কর্তাদের অন্য এসএমএসগুলো কী? |
এবিজি তো চলে যেতেই নোটিস দিয়েছিল, তারা পালাবে কেন? |
বন্দর-কর্তারা রবিবার রাতেই ঘটনা জানতেন, তাঁরা কী করেছেন? |
সব জেনেও কেন রবিবার ২, ৮ নং বার্থে জাহাজ ঢোকানো হল? |
|
কী ধরনের জালিয়াতি? তৃণমূল নেতা তুষার মণ্ডলের দাবি, “যাঁরা সাংসদের বিরুদ্ধে, দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, তাঁরা দলের কেউ নন। তবু দলের পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এঁদের দলীয় সদস্যপদের কার্ডও ভুয়ো। তাই আমরা দলীয় ভাবে জালিয়াতির অভিযোগ করেছি।” এ ব্যাপারে রহিম-সিরাজরা কী বলছেন? রহিমের দাবি, “আমরা তৃণমূল করি। ভোটেও খেটেছি। আমরা সত্যি কথাটা বলেছি। সেটা সহ্য করতে না পেরেই শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে এই অত্যাচার।” রহিমের প্রতিবেশীরা জানান, পুলিশ যাওয়ার সময়ে বলে গিয়েছে, ‘মুখ খুললে আরও একটা নন্দীগ্রাম হবে’। শুভেন্দুর এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া, “নিজেকে তৃণমূলের সমর্থক পরিচয় দিয়ে যিনি অভিযোগ করছিলেন, তিনি শেখ সিরাজ। তিনি সুতাহাটার অন্তর্গত কুকরাহাটার সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য।”
ঘটনা হল, সোমবার থেকেই এবিজি-র ছাঁটাই না-হওয়া কর্মীরা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মুখ খুলে আন্দোলনে নেমেছেন। এবিজি যে আর কাজ করবে না, সে বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত ওঁরা। এই পরিস্থিতির জন্য, ওঁদের মতে দায়ী শুভেন্দুই। এবিজি-র ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের আন্দোলনও অব্যাহত। এত দিন বন্দরের বাইরে শিবির করে আন্দোলন করছিলেন ছাঁটাই হওয়া ২৭৫ জন শ্রমিক। এ দিন এঁরা বিক্ষোভ দেখান বন্দরের গেটে। এই ডামাডোলের মধ্যেই এবিজি-র জন্য নির্দিষ্ট দু’টি বার্থ ছাড়া হলদিয়ার অন্য ১১টি বার্থে এ দিন কাজ হয়েছে। শুভেন্দুবাবুও দাবি করেছেন, হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতি ‘পুরো স্বাভাবিক’ রয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বন্দরে পরিস্থিতি থমথমে। আশঙ্কা আর অনিশ্চয়তার এই বাতাবরণে ইন্ধন জুগিয়েছে বন্দর-কর্তৃপক্ষের আচরণও। এবিজি-র জন্য নির্দিষ্ট দু’টি বার্থ, ২ এবং ৮ নম্বরে গত এক মাস ধরেই কাজ হচ্ছে না। শনিবার রাতে তিন এবিজি কর্তার অপহরণ নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যাওয়ার পরে রবিবার হঠাৎ ওই দুটি বার্থে দু’টি জাহাজ ঢুকিয়ে দেন বন্দর-কর্তৃপক্ষ। এবিজি-র কর্মীরা কাজে না আসায় জাহাজ দু’টিকে পরে অন্য বার্থে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আদৌ কেন রবিবার ওই দুটি বার্থে জাহাজ ঢোকানো হয়েছিল, তা নিয়ে বন্দর-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথাযথ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। |
|
|
|
|
|