রাজ্য টেবল টেনিস মঙ্গলবার দু’জন ত্রিমুকুটজয়ী উপহার দিলঅনির্বাণ ঘোষ এবং সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়। পৌলমী ঘটক, মৌমা দাসদের মতো নামী তারকার অনুপস্থিতিতে বাংলার টিটি মঞ্চে নতুন দুই তারকার জন্ম হল।
অনির্বাণ এবং সুতীর্থা এখনও স্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি। এরই মধ্যে পাসপোর্টের পাতায় অনেক দেশ ঘোরার শিলমোহর পড়ে গিয়েছে। পেয়ে গিয়েছে তেল কোম্পানিতে চাকরিও। তবে বয়স যেহেতু কম, সে জন্য এখন অফিস থেকে ভাতা পাবেন দু’জনেই।
ছিপছিপে, দুবলা চেহারার বছর চোদ্দোর অনির্বাণের ‘টেবল কন্ট্রোল’ দেখে ইতিমধ্যেই তার মধ্যে ভবিষ্যতের অরূপ বসাককে দেখছেন কোচেরা। জয়ন্ত পুশিলাল, তপন চন্দ্রর মতো কোচ একযোগে বলছেন, “ছেলেটা ভগবানদত্ত প্রতিভা। এই বয়সে এ রকম রিফ্লেক্স খুব কম টিটি প্লেয়ারেরই থাকে। ওকে ঘষে-মেজে তৈরি করতে পারলে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হবেই।” রাজ্য মিটে অনির্বাণ এ দিন চ্যাম্পিয়ন হল সাব-জুনিয়র, জুনিয়র এবং যুব বিভাগে। পাঁচ বছরের খেলোয়াড় জীবনে এটাই রাজ্যস্তরে তার সেরা সাফল্য। সর্বভারতীয় স্তরে ইতিমধ্যেই অবশ্য ‘গোল্ডেন বয়’ বলা হচ্ছে নৈহাটি নরেন্দ্রনাথ বিদ্যানিকেতনের ছাত্রটিকে। কারণ, সাব-জুনিয়র বিভাগের খেলোয়াড় হলেও সিনিয়র বিভাগে ভারতে তার র্যাঙ্কিং ছয়। শরথ কমলের ভক্ত এ দিন পরপর চারটি ফাইনাল খেলে ওঠার পর বলছিল, “আমার প্রথম লক্ষ্য জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়া। বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ইচ্ছে আছে। কিন্তু স্পনসর নেই।” |
সুতীর্থা-অনির্বাণ। —নিজস্ব চিত্র |
রাজ্য টিটি এখনও তিনটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত। রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের উপর দায়িত্ব পড়েছে সমস্যা মেটানোর। ইগো সমস্যায় জর্জরিত কর্তাদের এখনও মেলাতে পারেননি সুব্রতবাবু। ফলে সর্বভারতীয় স্তরে খেলাধুলোয় এক সময়ের বাংলার পদক জেতার ‘সোনার হাঁস’ আর জাতীয় স্তরে সে ভাবে ‘ডিম’ পাড়ছে না। কর্তাদের ঝামেলার মধ্যে পড়ে খেলোয়াড়দের অবস্থা কাহিল। রাজ্যের সব টেবল টেনিস তারকাকে কোনও টুর্নামেন্টেই একসঙ্গে খেলতে দেখা যাচ্ছে না। কর্তারা নানা ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ায় সাংগঠনিক ত্রুটিও ধরা পড়ছে। যার শিকার হয়ে এ বারের টুর্নামেন্ট থেকে শেষ মুহূর্তে নাম তুলে নেন মৌমা দাস।
মৌমার অনুপস্থিতিতে যাঁকে মেয়েদের বিভাগে শীর্ষ বাছাই করেছিলেন সংগঠকরা সেই মৌসুমী পালকে এ দিন ফাইনালে হারিয়ে দিল সুতীর্থা। প্রতিদিন একই ক্লাবের একই টেবিলে অনুশীলন করার ফসল তুলল সুতীর্থা। শুধু সিনিয়রেই নয়, সুতীর্থা জুনিয়র ও যুব বিভাগেও চ্যাম্পিয়ন হয়। সম্প্রতি গুয়াতেমালা-সালভাদোরে আন্তর্জাতিক গোল্ডবার্গ সার্কিটে খেলতে গিয়েছিল সুতীর্থা। সেখানে ‘গোল্ডেন গার্ল’ পুরস্কারও পেয়েছে। ভাটপাড়া মডেল স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী বলছিল, “দিনে আমি পাঁচ-ছয় ঘণ্টা অনুশীলন করি। ওটাই আমার নেশা। সে জন্যই সাফল্য পাচ্ছি।”
সিনিয়র ছেলেদের বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হলেন শীর্ষ বাছাই অনির্বাণ নন্দী। অন্য বিভাগগুলিতে চ্যাম্পিয়নমৌমিতা দত্ত, সায়ন চট্টোপাধ্যায়, প্রাপ্তি সেন, রোহন ঘোষ, অঙ্গনা ঘোষ। |