সারা বিশ্বের ফুটবল অ্যাকাডেমির ছেলেরা স্বপ্ন দেখে লিওনেল মেসির মতো খেলার। কিন্তু ছোটবেলায় মেসি কার মতো খেলার স্বপ্ন দেখতেন? দিয়েগো মারাদোনা নন, আর এক আর্জেন্তিনীয়— পাবলো আইমার।
সোমবার সোনার বুট পাওয়ার পর এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, “বরাবরই আমি আইমারের ভক্ত ছিলাম। রিভারপ্লেট থেকে উঠে এসেছিল ও। ওর খেলার ধরণ খুব ভাল লাগত। আমি ওকেই অনুসরণ করেছি।” যদিও বার্সেলোনার বড় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই সারা বিশ্বে লিও মেসির তুলনা শুরু হয়েছিল দিয়েগো মারাদোনার সঙ্গে। এমনকী মারাদোনা গত বছর ইংল্যান্ডের এক দৈনিকে বলেছিলেন, “মেসিকে যে ‘নতুন মারাদোনা’ বলা হচ্ছে, সেটা অনেকটাই সত্যি।” কিন্তু রিভারপ্লেটের সমর্থক মেসির ছোটবেলায় স্বপ্ন জুগিয়েছিল রিভারপ্লেট এবং আর্জেন্তিনার অ্যাটাকিং মিডিও আইমার। যিনি দেশের হয়ে দু’টি বিশ্বকাপ খেলেছেন। বর্তমানে খেলেন পর্তুগালের বেনফিকায়। পেলে-মারাদোনার সঙ্গে মাঝেমাঝেই যে তাঁর তুলনা টানা হয় সেই প্রসঙ্গে মেসি বলেন, “প্রতিদিনই নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করি। ওঁরা দু’জনই অনেক বড় ফুটবলার। তাঁদের সঙ্গে আমার নাম উচ্চারিত হওয়ায় ভাল লাগে।” |
বার্সেলোনার যুব অ্যাকাডেমি লা মাসিয়ায় মেসি এসেছিলেন ২০০০ সালে। চার বছর পর প্রথম সুযোগ পান বড় দলে। যখন ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের কোচিংয়ে দলের ‘হিরো’ রোনাল্ডিনহো। ছিলেন থিয়েরি অঁরি, স্যামুয়েল এটো, ডেকোর মতো তারকা। তবু তাঁদের মাঝে নিজেকে অল্প অল্প করে চেনাতে শুরু করেন আর্জেন্তিনীয় বিস্ময় প্রতিভা। তবে মেসি পরিণত হয়ে ওঠেন পেপ গুয়ার্দিওলার আমলে। ২০০৮-এ যিনি রোনাল্ডিনহো, ডেকোদের বাদ দিয়ে বাড়তি গুরুত্ব দেন জাভি, ইনিয়েস্তা এবং অবশ্যই মেসির উপর। শুরু হয় ‘তিকিতাকা’-র জয়যাত্রা। পেপের সহকারী ছিলেন বর্তমান কোচ তিতো ভিলানোভা। পেপ-এর পাশাপাশি ভিলানোভাকেও মেসি যথেষ্ট কৃতিত্ব দিচ্ছেন নিজের সাফল্যের জন্য।
অ্যাকাডেমিতে থাকাকালীন প্রথম দিকে মেসি প্রথম দলে সে ভাবে সুযোগ পেতেন না। “প্রথমে বার্সেলোনার নতুন পরিবেশ এক দিকে ভাল লাগত। আবার পরিবারের সবার থেকে আলাদ থাকার কষ্টও ছিল। তা ছাড়া প্রথম দিকে চোটের জন্য খেলতে পারতাম না। কাগজপত্রও তখন সব তৈরি হয়নি। খুব কঠিন ছিল শুরুর সেই সময়টা,” বলেছেন মেসি। ছবিটা পাল্টে যায় ভিলানোভা যুব দলের দায়িত্বে আসার পর। যাঁর প্রধান অস্ত্রই হয়ে ওঠেন আর্জেন্তিনীয় তারকা। মেসির কথায়, “যখন সুযোগ পেতাম না একবারও মনে হয়নি, সব ছেড়েছুড়ে দিই। সব সময়ই চাইতাম এগিয়ে যেতে। নিজের স্বপ্ন সফল করার জন্য খাটতে। আমি ভাগ্যবান ছিলাম, অ্যাকাডেমিতে তিতো আসার পর যথেষ্ট সুযোগ পেতে লাগলাম।” সেই সঙ্গে মেসি জানান, এখনকার ভিলানোভাও সেই আগের মতোই আছেন।
এখন বার্সায় নেই গুয়ার্দিওলা। দলের অধিনায়ক হন পুওল বা জাভি। কিন্তু আর্জেন্তিনার অধিনায়কই কি বকলমে বার্সেলোনার নেতা? একেবারেই মানছেন না মেসি। তাঁর বক্তব্য, “আগের বছরগুলোতে যে রকম দায়িত্ব ছিল, পেপ যাওয়ার পরও দায়িত্ব একই আছে। এই টিমে যে সব ফুটবলার আছে তাতে আলাদা করে নেতার দরকার নেই।” মাত্র ক’দিন আগেই পৃথিবীর আলো দেখেছে মেসি ‘জুনিয়র’এলএম টেন ও তাঁর বান্ধবী আন্তোনেইয়ার ছেলে থিয়াগো। মেসি মনে করেন, তাঁর ছোটবেলার মতো থিয়াগো হয়তো রিভারপ্লেট বা রোজারিও সেন্ট্রালের সমর্থক হবে না। তবে ফুটবলার তো হতেই পারে। কিন্তু ‘জুনিয়র’কে সেই সিদ্ধান্ত স্বাধীন ভাবেই নিতে দেবেন ‘সিনিয়র’ মেসি। |