ঐতিহাসিক ইডেন টেস্টের ডিভিডি চাইলেন রাইট
প্রিয় শিষ্যের ধারাভাষ্যে প্রিয় মানুষের ছায়া দেখছেন গুরু।
তেত্রিশ বছর আগে ১৯৭৮ সালে যখন তাঁর টেস্ট অভিষেক, সে বছরই পেশাদার টেনিস দুনিয়ায় পা রাখা জন ম্যাকেনরোর। তখন থেকেই ‘মাচো’ ম্যাকেনরোর গুণমুগ্ধ ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন কোচ জন রাইট। আর এই ২০১২-এ এসে ৫৮ বছরের রাইট তাঁর সেই ভারতীয় দলের অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অধুনা কমেন্ট্রি-বক্সের মারকাটারি পারফরম্যান্সের মধ্যে ম্যাকেনরোকেই দেখছেন।
কী ভাবে?
প্রশ্ন শুনেই সৌরভের শহরে ঝটিকা সফরে আসা রাইট বললেন, “আরে, আমার ক্যাপ্টেন তো ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে ম্যাকেনরোর মত সোজা কথাটা সোজা ভাবেই বলছে। যে ভাবে আমাদের যৌবনে ম্যাকেনরো ঝড় তুলেছিল।”
এরই মাঝে এক সাংবাদিক কানে তুলে দিয়েছেন ‘প্রিন্স অফ ক্যালকাটা’-র আইপিএল ইনিংস শেষ হওয়ার প্রসঙ্গ। অল্প থেমে তার পরেই ফের রাইটের স্ট্রেট ড্রাইভ, “ভালই তো হল খেলা ছেড়ে। ম্যাকেনরোর মতো কমেন্ট্রি করছে।”
মঙ্গলবারের ভরা সন্ধেতে তখন ডুবছে শহর। মধ্য কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলের পুলসাইডে রাইটের সঙ্গে নস্ট্যালজিক আড্ডার আসরে এ কথা শুনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হেসে প্রায় লুটিয়ে পড়েন। তার পরে প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক বললেন, “নতুন করে আর কী বলব? কোচ থাকার সময় ড্রেসিংরুমেও আমাদের এ রকম এক একটা মজার কথা বলে জোশ ফিরিয়ে আনত জন। তিন দিন আগে ফোন করে বলেছিল, তোমার শহরে আসছি। মঙ্গলবার সন্ধেয় আড্ডা হবে। জনের সঙ্গে সেই মহার্ঘ আড্ডাটা আজ বহু দিন পরে হচ্ছে।”
সোনার জুটি
আবার একসঙ্গে। মঙ্গলবার শহরে জন রাইটের সঙ্গে সৌরভ। ছবি: উৎপল সরকার
দু’জনের মধ্যে সম্পর্কটা অনেকটা আর্জেন্তিনা ফুটবলে বিলার্দো-মারাদোনার মতো। সচিন-ধোনিদের সংসার ছেড়েছেন সাত বছর আগে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট সম্পর্কে নিয়ম করে খবরাখবর রাখেন রিচার্ড হ্যাডলিদের ‘শেক’ (এই নামেই রাইটকে ডাকতেন তাঁর সতীর্থরা)। শহরে পা দিয়েই শুনে নিয়েছেন আসন্ন ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজে সৌরভের সঙ্গে কমেন্ট্রি বক্সে থাকবেন তাঁর আর এক শিষ্য রাহুল দ্রাবিড়। স্বভাবরসিক রাইট সে প্রসঙ্গে বলছেন, “এই রে! দু’জনে যখন একসঙ্গে ব্যাট করত তখন দু’হাত চেপে বসে থাকতাম। কে কখন রান আউট হয়ে যায় তা ভেবে। এ বার কমেন্ট্রি বক্সে রান আউট হলে কিন্তু খুব মুশকিল।” বলেই দমফাটা হাসিতে ফেটে পড়লেন ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালিস্ট সৌরভের টিম ইন্ডিয়া-র কোচ। হাইভোল্টেজ হাসি সৌরভের মুখেও।
পঁয়তাল্লিশ মিনিটের আড্ডা। যার একমাত্র সঙ্গী আনন্দবাজার। এ দেশে তাঁর দেশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রচারে রাইটের কলকাতায় আসা। এগারো দিনের সফরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে হবে নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন ওপেনারকে। দরজায় কড়া নাড়ছে কুকদের ভারত সফর। উত্তেজনার বারুদে ঠাসা যে সিরিজ সম্পর্কে দিন কয়েক আগেই বিরাট কোহলি ‘টার্নিং পিচ’-এর হয়ে জোরালো সওয়াল করেছেন। আড্ডার আসরে রাইটও বিরাটদের দলেই। কথা শুনে কে বলবে তিনি প্রাক্তন হয়ে গিয়েছেন ২০০৫ সালেই। রাইটের প্রশ্ন, “দেশের মাটিতে কে নিজের সুবিধা মতো পিচ বানায় না বলতে পারেন?”
আর নৈশালোকে টেস্ট ক্রিকেট? এ বার ক্রিকেটের একদম বিশুদ্ধবাদীর মতো বললেন, “আমি সকাল দশটা থেকেই টেস্ট ম্যাচ দেখতে পছন্দ করব। ওয়েলিংটন কিংবা নেপিয়ারে রাতের টেস্টে হুশ করে যখন তাপমাত্রা কমতে থাকবে তখন কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছেন!”
তিনি ভারতীয় কোচের জোব্বা ছাড়ার পরে সেটা এখন পর্যন্ত পরপর গায়ে উঠেছে গ্রেগ চ্যাপেল, গ্যারি কার্স্টেন, ডানকান ফ্লেচারের। কাকে এগিয়ে রাখবেন? বরাবরের নির্বিরোধী রাইট বললেন, “গ্যারি সফল। তবে গ্রেগও কিছু সাফল্য পেয়েছে। ওর কিছু ব্যাপারে সমস্যা হয়েছিল। আর ডানকান তো কাজ করছে। তাই ওঁর সম্পর্কে এখন কিছু বলা যাবে না।”
গ্রেগের কিছু সমস্যার ব্যাপার? হাজার চাপাচাপিতেও জন এ বার নিশ্চুপ। তার পরেই ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বললেন, “ম্যান-ম্যানেজমেন্টটা জরুরি। যা সৌরভের সঙ্গে আমার ঠিকঠাক হয়েছিল।”
টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এক বলে আট রান নেওয়ার বিরল নজির থাকলেও স্পর্শ করা হয়নি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ট্রফিটা। ১৯৯২ সালে ক্রিকেটার হিসাবে সেমিফাইনালে আর সৌরভদের মাস্টারমশাই হিসাবে ২০০৩ সালে ফাইনালে যে দৌড় থেমে গিয়েছিল তাঁর। এক বছর আগের ২ এপ্রিল ধোনি-কার্স্টেনরা যখন ওয়াংখেড়েতে বিশ্বকাপ হাতে দৌড়োচ্ছিলেন তখন একটুও হিংসা হয়নি?
শুনে হাসতে হাসতে বললেন, “আমরা একটা বিন্দু থেকে সাফল্যের বৃত্তটা আঁকতে শুরু করেছিলাম। সেটা ওই দিন পূর্ণ হয়েছিল। হিংসা বা দুঃখ হবে কেন?” একটাই আক্ষেপ। স্টিভের অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়ে দেওয়ার সেই ইডেন টেস্টের একটাও ডিভিডি নেই তাঁর কাছে। “দু’হাজার একের সেই ইডেন টেস্টের একটা ডিভিডি আমার কিন্তু চাই,” বলে ফেললেন সৌরভের সেই ভারতীয় দলের কোচ।
হাসিখুশি রাইট গম্ভীর হয়ে গেলেন আড্ডার শেষ লগ্নে এসে। যখন মার্টিন ক্রো-র ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রসঙ্গ উঠল। যুবরাজ সিংহের এক সময়কার কোচ বলে উঠলেন, “যুবি তো লড়াই করে ফিরল। মার্টিনের আরও একবার পরীক্ষা হোক। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি, তখন যেন সব ফল নেগেটিভ হয়।”
কে বলে পেশাদারের হৃদয় নেই!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.