গাড়ির ব্যবস্থা নেই, সাফাই হচ্ছে না নর্দমা-রাস্তা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বাঁকুড়া |
পুজোর আগে পদ্ধতি মেনে শহর পরিষ্কারের কাজ হয়নি। ফলে বাঁকুড়া শহরের কোথাও নালা উপচে বইছে জল, কোথাও আবার রাস্তার পাশে ঘাসের জঙ্গল। স্বভাবতই ক্ষুব্ধ শহরবাসী থেকে শুরু করে কাউন্সিলরদের একাংশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর আগে সাফাই কাজ করতে প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য টাকা বরাদ্দ করেছিল পুরসভা। কিন্তু অন্যান্য বছর আবর্জনা ওয়ার্ডের বাইরে নিয়ে ফেলার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয় পুরসভার তরফ থেকে। যা এই বছর করা হয়নি। তাই ক্ষুব্ধ কাউন্সিলররাও। কোনও কোনও ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা নিজেদের উদ্যোগে এবার গাড়ি ভাড়া করে আবর্জনা ওয়ার্ডের বাইরে নিয়ে গিয়ে ফেললেও বেশ কিছু ওয়ার্ডে সেই আবর্জনা জমে রয়েছে।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাজার রোড এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, নালার জল উপচে রাস্তার উপর দিয়ে বইছে। সেই জল ৬ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেও ঢুকছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গণেশ দত্ত, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনারায়ণ দত্তরা বলেন, “অন্যান্য বছর পুজোর আগে যদিও নালা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয় পুরসভার পক্ষ থেকে এবার তাও হয়নি। ষষ্ঠীর দিন থেকে নালা উপচে জল বইছে। কাউন্সিলরকে বারবার জানিয়েও কাজ হয়নি।” ১০ নম্বর ওয়ার্ডের গৌরীশঙ্কর সিংহমহাপাত্র, বেলা মুখোপাধ্যায়দের ক্ষোভ, “গত বছর পুজোর আগে রাস্তার দুপাশের ঘাস মুড়িয়ে রাস্তার পাশেই ফেলে রাখা হয়েছিল। এবছর নতুন করে ঘাস গজিয়েছে। কোনও সাফাই হয়নি।” |
অন্যদিকে, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর প্রতিমা দরিপার দাবি, “পুজোর আগে লালবাজার রোডের নালা পরিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু নালায় ফের আবর্জনা জমে জল উপচে পড়ছে।” তাঁর ক্ষোভ, “ওয়ার্ড পরিষ্কারের জন্য যে টাকা পেয়েছিলাম তাতে কোনও মতে সাফাই কাজ করা গিয়েছে। কিন্তু ময়লা ফেলার গাড়ি না থাকায় নিজের খরচেই ট্রাক্টর ভাড়া করে সেই ময়লা বাইরে ফেলতে হয়েছে।” একই ক্ষোভ বাঁকুড়া পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর রাধারানি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও।
১১ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার সাফাই করা মুড়োন ঘাস, আগাছা পড়ে রয়েছে রাস্তার পাশেই। ১ নম্বর ওয়ার্ডের হালও প্রায় একই। ওয়ার্ডের আবর্জনা ফেলার জায়গাটি আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, আবর্জনাময় জায়গাগুলির জন্য মশার উপদ্রব বাড়ছে। নালাগুলি ঠিকঠাক পরিষ্কার করা হচ্ছে না। ওই ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর সঞ্চিতা লাহার দাবি, “পুজোর আগে সঠিক সময়ে সাফাই কাজের টাকা হাতে পাইনি। নিজের খরচেই ওয়ার্ড পরিষ্কার করেছি।” পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী তথা ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর শিউলি মিদ্যার অভিযোগ, “তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে প্রায় চারমাস বাঁকুড়া পুরসভা পুরপ্রধানহীন। পুজোর আগে শহর পরিষ্কারের সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো লোকই ছিল না। ওয়ার্ড সাফাইয়ের জন্য যে টাকা দেওয়া হয়েছিল তা যথেষ্ট ছিল না। আবার ময়লা ফেলার গাড়ির ব্যবস্থাও এবার করা হয়নি।”
যদিও এই সব অভিযোগ, ক্ষোভ মানতে নারাজ পুজোর আগে শহর পরিষ্কারের সঠিক উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ বাঁকুড়া পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল দিলীপ অগ্রবাল। তাঁর দাবি, “পুজোর আগে প্রত্যেক কাউন্সিলরের হাতে ওয়ার্ড পরিষ্কারের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়েছিল। আমি নিজে গোটা শহর ঘুরে সেই কাজ খতিয়ে দেখেছি।”
ময়লা পরিষ্কার করার গাড়ি কেন করা হয়নি? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রতি বছর পুজোর আগে কয়েকটি এজেন্সির কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া করি। কিন্তু ওই এজেন্সিগুলির কিছু টাকা বাকি আছে। সময়ে টাকা না মেটানোয় তারা এ বার গাড়ি দেয়নি।” তবে গাড়ি ভাড়া করে ময়লা ফেলার জন্য কাউন্সিলরদের বাড়তি টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে দিলীপবাবুর দাবি। |