শব্দবাজির তাণ্ডবে কোজাগরীতে আতঙ্কের রাত জাগল হাবরা |
দীপাবলির আগেই শব্দবাজির তাণ্ডবে আতঙ্কে কোজাগরীর রাত কাটালেন হাবরার মানুষ। এলাকার মানুষের অভিযোগ, তাঁরা এতটাই আতঙ্কিত ছিলেন যে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই সন্ধের পর আর বাড়ি থেকে বের হননি। অবশ্য এই সমস্যা এই প্রথম নয়। প্রতিবারই হাবরার মানুষ লক্ষ্মীপুজোর রাতে দীপাবলির মতো শব্দবাজির তাণ্ডবে অতিষ্ট হন। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবাধে শব্দবাজি ফাটলেও তা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-প্রশাসন একেবারেই ব্যর্থ। অথচ প্রতিবারই এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে। কিন্তু তা যে শুধু কথার কথা, তা ফের হাড়ে হাড়ে টের পেলেন হাবরার বাসিন্দারা।
আর কী বলছে পুলিশ?
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “অভিযান চালিয়ে হাবরা থেকে ৩৫ কিলোগ্রাম শব্দবাজি আটক করা হয়েছে। শব্দবাজি বন্ধে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজ্যের আর কোথাও লক্ষ্মীপুজোয় শব্দবাজির তাণ্ডব দেখা যায় না বলে দাবি হাবরার বাসিন্দাদের। তাঁদের কথায়, লক্ষ্মীপুজোয় শব্দবাজি যেন হাবরার ‘ঐতিহ্য’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তুলে অনেকেই এর থেকে পরিত্রাণ পেতে পুজোর সময় হাবরা ছাড়েন। সোমবার সন্ধ্যায় ভ্যানে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন মনোজ রায়। তাঁর কথায়, “যশোহর রোড ধরে বাড়ি ফিরছিলাম। রাস্তার পাশে বাড়ির ছাদ থেকে যে ভাবে নীচে শব্দবাজি ছুড়ে ফেলা হচ্ছিল তাতে যে কোনও সময় গায়ে লেগে জখম হতে পারতাম। ভাগ্য ভাল তেমন কিছু ঘটেনি।”
হাটথুবা, কামারথুবা, সপ্তপল্লি, চোঙদা, উত্তর হাবরা, প্রফুল্লনগর, শ্রীনগর, নগরথুবা, দেশবন্ধু পার্ক, ডহরখুবা, হাবরা বাজার সর্বত্রই এ দিন সন্ধে থেকে রাতভর শোনা গিয়েছে বিকট বিকট আওয়াজ। এমনকী বোমার চেয়েও বেশি আওয়াজের শব্দবাজি ফেটেছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। এক নাগাড়ে বাজির শব্দে অনেকেই রীতিমত অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায় প্রতি বাড়িতেই বিনিদ্র রজনী কাটাতে হয়েছে পরিবারগুলিকে। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েন শিশু এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। সন্ধে থেকে রাতভর বাজির তাণ্ডব চললেও পুলিশকে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মানুষ। যদিও টহল ছিল বলে পুলিশের দাবি।
হাটথুবার বাসিন্দা ও ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের হাবরা শাখার সম্পাদক শঙ্করপ্রসাদ সরকার বলেন, “এ বার রাতভর শব্দবাজির এমন তাণ্ডব দেখে রীতিমত ভয় করছিল। এলাকার মানুষ প্রায় কেউই ঘুমোতে পারেননি।” হাবরা হাসপাতালের সুপার সাত্যকি হালদার বলেন, “যে ভাবে বিকট আওয়াজ করে একের পর এক বাজি ফেটেছে তাতে যে কারও হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট ও চোখের সমস্যাও। এ সব বন্ধ করতে প্রশাসনের আরও কড়া হওয়া উচিত।” সিপিএম নেতা ঋজিনন্দন বিশ্বাসের অভিযোগ, “শব্দবাজি নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে পুরসভা যথেষ্ট উদ্যোগী হয়নি। এটা তারই পরিণতি।”
কী বলছেন হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান?
পুর-চেয়ারম্যান তপতী দত্ত বলেন, “এলাকায় শব্দবাজি বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাই বাইরে থেকে এনে ফাটানো হয়েছে। এখানে সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজো নেই-ই বলা যায়। সবই বাড়ির। বাজির আওয়াজ শুনে পুলিশ গিয়ে কাউকে শনাক্ত করতে পারছে না। পুলিশি ব্যবস্থার পাশাপাশি মানুষকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তা না হলে এই উপদ্রব বন্ধ করা যাবে না।” |