বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পার্টির (বিএনপি) সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চার দিনব্যাপী ভারত সফর ভারতীয় কূটনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ইতিপূর্বে নয়াদিল্লিকে কেবল প্রতিবেশী দেশের শাসক গোষ্ঠীর নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গেই আলাপ-আলোচনা করিতে দেখা গিয়াছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকারের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক নিবিড়। মনে হইতেই পারে, নয়াদিল্লি বুঝি বাংলাদেশের অন্য রাজনীতিকদের সংস্পর্শ বা ঘনিষ্ঠতা এড়াইয়া চলিতে চায়। এই ধারণা ভারতীয় কূটনীতি সম্পর্কে উপমহাদেশের প্রতিবেশীদের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করিয়াছিল। প্রথমে হুসেন মহম্মদ এরশাদ ও বর্তমানে বেগম জিয়ার সহিত আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ করিয়া ভারতীয় প্রধামন্ত্রী সেই বিভ্রান্তি দূর করিতে চেষ্টা করিলেন।
প্রতিবেশী দেশগুলির নীতিকে আপন জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে প্রভাবিত করার চেষ্টা দোষণীয় নহে। সব দেশই অল্পবিস্তর তাহা করিয়া থাকে। কিন্তু তাহা করিতে গিয়া প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের সহিত অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা যদি অন্য সব দলের অবিশ্বাস ও সন্দেহ আকর্ষণ করে, তবে তাহাও অভিপ্রেত নয়। নেপালের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির এ ধরনের ভূমিকার কুফল লক্ষিত হইয়াছে। বাংলাদেশেও বেগম জিয়া সহ অন্য রাজনীতিকদের প্রতি নয়াদিল্লির মনোভাবে উষ্ণতার অভাব থাকিয়াছে, পারস্পরিক অবিশ্বাসও থাকিয়াছে। মনমোহন সিংহ যে অবশেষে সেই অনাস্থা ও অবিশ্বাসের বাতাবরণ দূর করিতে সচেষ্ট হইয়াছেন, ইহা ইতিবাচক। আগামী নির্বাচনে বেগম জিয়া যদি হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন, এরশাদের জাতীয় পার্টির সমর্থন তখন নির্ণায়ক হইতে পারে। এই দুই রাজনীতিকের সহিত নয়াদিল্লির সুসম্পর্ক তখন প্রতিবেশী দেশে বন্ধু-সরকার প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখিবে।
বেগম জিয়া নয়াদিল্লিকে আশ্বাস দিয়াছেন, দুই দেশই যৌথ ভাবে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করিবে এবং বাংলাদেশের মাটিকে ভারত-বিরোধী তৎপরতার ঘাঁটি করিতে দেওয়া হইবে না। ইহা এখনও আশ্বাসমাত্র, কিন্তু অবস্থান হিসাবে নিঃসন্দেহে ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিপ্রতীপ। বাংলাদেশের আর্থিক উন্নয়নে, ছিটমহল হস্তান্তর, তিস্তার জলবণ্টন ও টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে নয়াদিল্লি যে সহযোগিতামূলক অবস্থান লইয়াছে, বাংলাদেশের বিরোধী নেত্রী তাহার প্রশংসা করিয়াছেন। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য অবাধ করিতে ভারতের প্রয়াসও তাঁহার শংসা পাইয়াছে। বাংলাদেশ সহ অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রে কোন দল বা রাজনীতিক ক্ষমতাসীন, তাহা নির্বিশেষেই ভারতকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিকাশ ঘটাইতে হইবে। মায়ানমারে সামরিক জুন্টার সহিত সম্পর্ক স্থাপনের দ্বিধা নয়াদিল্লিকে যে বেজিংয়ের সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেক পিছাইয়া দেয়, চড়া মূল্য দিয়া তাহা উপলব্ধি করিতে হইয়াছে। ইহার পুনরাবৃত্তি না হওয়াই শ্রেয়। |