পুরসভার বিল্ডিং ট্রাইব্যুনাল দীর্ঘ দিন থেকে শহরের বেশ কিছু বেআইনি বাড়ি ভাঙার বা অত্যন্ত চড়া টাকার জরিমানায় কিছু বাড়ির বেআইনি অংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু ট্রাইব্যুনালেরই একটি চক্র সেই সব নির্দেশ কার্যকর করার জন্য পুরসভার বিল্ডিং বিভাগে পাঠাচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলে পুরসভা সেই নির্দেশ কার্যকর করতে পারছে না। অভিযোগটি কোনও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির নয়। অভিযোগ স্বয়ং মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান যুধিষ্টির হালদারের। তিনি অভিযোগটি পাঠিয়েছেন রাজ্য সরকারের পুরসচিবের কাছে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি।
চড়া জরিমানায় বাড়ির বেআইনি অংশকে বৈধ করে দেওয়ার একটি ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের এক শ্রেণির কর্মী কী ভাবে টাকা ঘুষ চাইছেন, তার নথি-সহ চিঠি পাঠানো হয়েছে পুরসভার আইজি ভিজিল্যান্সকে। পুরসভার বিল্ডিং ট্রাইব্যুনালের টেকনিক্যাল মেম্বার আইজি ভিজিল্যান্সকে চিঠি দেন চলতি বছরের মার্চে। পুরসভার ভিজিল্যান্স অথরিটির আইজি মহারথী অধিকারী জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। কোনও ক্ষেত্রেই ট্রাইব্যুনাল সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনও উত্তর পায়নি। কারও বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি বলে ট্রাইব্যুনালের কর্তারা জানান।
২৫ ফেব্রুয়ারি বিল্ডিং ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান রাজ্যের পুরসচিবকে লেখা তাঁর চিঠির সঙ্গে ২৭টি মামলার একটি তালিকা পাঠিয়েছেন। যার মধ্যে ২৪টি ক্ষেত্রেই আদালতের নির্দেশ পুরসভায় পাঠানো হয়নি। ওই সব বাড়ির মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে। চেয়ারম্যান তাঁর চিঠিতে সরাসরি অভিযোগ করেছেন, “ওই সব মামলার রায় ও বিল্ডিং ভাঙার মামলার নথির পুরসভায় না পাঠানোর পিছনে হয়তো বা কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। সঠিক তদন্তে সেই বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে।” একই সঙ্গে তিনি পুরসচিবকে লিখেছেন “এই পরিস্থিতিতে আমার পরামর্শ, পুরসভাকে যথাযথ নির্দেশ দেওয়া হোক যাতে ওই সব মামলার নথি পুরসভা সংগ্রহ করে নির্দেশ কার্যকর করার ব্যবস্থা করে।”
আরও একটি তথ্য পরবর্তী কালে বিল্ডিং ট্রাইব্যুনালের হাতে আসে। আর তা হল ১৬ গঙ্গাধরবাবু লেনের একটি বাড়ির বেআইনি অংশ ভাঙা নিয়ে পুরসভার নির্দেশের বিরুদ্ধে রুস্তম খান বিল্ডিং ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। সেই মামলার রায় হয় যথা সময়ে। বিল্ডিং ট্রাইব্যুনাল রায় দেয় ওই বাড়ির বেআইনি অংশটি বৈধ করা যাবে যদি ৪০ লক্ষ টাকা জরিমানা পুরসভায় জমা পড়ে। আবেদনকারীর পক্ষে নূরি বেগম ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেন, ওই পরিমাণ টাকা দেওয়া সম্ভব নয় জানালে ট্রাইব্যুনালের দুই কর্মী তাঁকে বলেন, তিনি যদি ৫ লক্ষ টাকা পুরসভায় জমা করে ওই কর্মীদের ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দেন, তা হলে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। তাঁদের কথামতো নূরি ৫ লক্ষ টাকা জমা দেন। পরে তিনি বিষয়টি চেয়ারম্যানের নজরে আনেন।
ওই চিঠি পাওয়ার পর চেয়ারম্যান তাঁর অফিসের কাছে জানতে চান কতগুলি নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া মামলার নথি পুরসভার বিল্ডিং বিভাগে পাঠানো হয়নি। তাঁর অফিসের সুপার যে রিপোর্ট দিয়েছেন সেই রিপোর্ট পুরসচিবের কাছে তিনি পাঠান। তাতে দেখা গিয়েছে ২৪টি বাড়ি সম্পর্কে ট্রাইব্যুনালের রায় ও মামলার নথি পুরসভায় পাঠানো হয়নি। একই সঙ্গে নূরি বেগমের অভিযোগটি পুরসভার ভিজিল্যান্স অথরিটির আইজির কাছে পাঠানো হয়েছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি ভাল করে খোঁজখবর নেবেন। প্রায় একই সুরে ‘খোঁজ নেবেন’ বলে জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। |