নকশা তৈরি, ভবন নির্মাণের টাকা পাওয়া গিয়েছে সবই। কিন্তু নকশা মঞ্জুর করাতে গিয়েই বিপত্তি। জানা গেল, রবীন্দ্রভারতীর বিটি রোড ক্যাম্পাস রয়েছে যে জমিতে, তার মালিকানাই নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের!
আগে রবীন্দ্রভারতীর দু’টি ক্যাম্পাস ছিল। জোড়াসাঁকো এবং বিটি রোডের মরকতকুঞ্জ। কিছু দিন হল, ঐতিহ্যবাহী ভবন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে সব বিভাগ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বিটি রোডে। বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি নতুন বিভাগ চালু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে মরকতকুঞ্জে এখন স্থানাভাব। প্রয়োজন একটি প্রশাসনিক ভবনের। পরিস্থিতির চাপে ওই ক্যাম্পাসে কয়েকটি নতুন ভবন তৈরির পরিকল্পনা নেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কাজ শুরু করতে গিয়ে দেখা গেল, গোড়ায় গলদ।
ভবন তৈরির প্রথম শর্ত হল জমির মালিকানা। সেটির খোঁজ করতে গিয়ে জানা গিয়েছে, বিটি রোডের ওই জমি রবীন্দ্রভারতীর তো নয়ই, এমনকী উচ্চশিক্ষা দফতরও তার মালিক নয়। ছয়ের দশকে ওই জমি তৎকালীন সমাজশিক্ষা (সোশ্যাল এডুকেশন) দফতরের নামে নথিভুক্ত হয়েছিল। এখন আবার সেই দফতরের অস্তিত্ব নেই। নাম বদলে এখন তা হয়েছে জনশিক্ষা প্রসার (মাস এডুকেশন) দফতর।
জোকায় নিজেদের ভবন তৈরি হওয়ার আগে আইআইএম-কলকাতার ক্লাস হত বিটি রোডের ওই ক্যাম্পাসে। পরে আইআইএম ওখান থেকে সরে গেলে রাজ্য সরকার ওই ক্যাম্পাসটি দেয় রবীন্দ্রভারতীকে। কিন্তু জমির মালিকানা হস্তান্তর হয়নি। তার পরে পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি সবার অগোচরেই থেকে গিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত অগস্ট মাসে দায়িত্ব হাতে নিয়ে ক্যাম্পাসে কয়েকটি নতুন ভবন তৈরির পরিকল্পনা করেন উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। এর মধ্যে রয়েছে নতুন একটি প্রশাসনিক ভবন তৈরির কাজ। এ ছাড়া, চিত্র ভবন, রামানুজন ভবন বাড়ানোর কাজও শুরু করতে চান কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য বলেন, “গত কয়েক বছরে ভূগোল, অঙ্ক, সমাজতত্ত্ব, হিন্দি-সহ কয়েকটি নতুন বিভাগ চালু হয়েছে। কিন্তু সে জন্য নতুন ক্লাসঘরের বন্দোবস্ত হয়নি। এখন জায়গার অভাব প্রকট। তাই আমরা কয়েকটি নতুন ভবন তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছি। কিন্তু জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতায় নকশা মঞ্জুর হচ্ছে না।”
তা হলে এত কাল মরকতকুঞ্জে নির্মাণের কাজ হয়েছে কী করে? বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, হয়তো তখন বিষয়টি কেউ খেয়াল করেননি। এখন যে ভাবেই হোক, মালিকানার প্রসঙ্গ যখন সামনে এসে গিয়েছে, তখন তার নিষ্পত্তি হওয়া দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই। কর্তৃপক্ষও চান, যে জমিতে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তার বৈধ মালিকানা তাঁদের হাতে আসুক। সেই কারণেই জমি-জট কাটানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
জট কাটবে কী করে? বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, জমির মালিক জনশিক্ষা প্রসার দফতরকে প্রথমে জমিটি হস্তান্তর করতে হবে উচ্চশিক্ষা দফতরের নামে। তার পরে উচ্চশিক্ষা দফতর সেটি তুলে দেবে রবীন্দ্রভারতী কর্তৃপক্ষের হাতে। উপাচার্য বলেন, “রবীন্দ্রভারতী বরাবর বিটি রোডের ওই জমির জন্য কর দিয়ে এসেছে। সে দিক থেকে সমস্যা নেই। তাই আশা করি সরকারি হস্তক্ষেপে দ্রুত জটিলতা কাটবে।” উচ্চশিক্ষা দফতর এবং কলকাতা পুরসভাকে গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে উপাচার্য জানিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “ওই জমি এখন জনশিক্ষা প্রসার দফতরের। তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনুরোধ করা হয়েছে যাতে দ্রুত ওই জমি উচ্চশিক্ষা দফতরকে হস্তান্তর করা হয়।” জনশিক্ষা প্রসার অধিকর্তার কাছে এই ব্যাপারে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই দফতরের সচিব রিনচেন টেম্পো। |