কলকাতা পুরসভা
কলকাতা স্টেশনে চলছেই ট্যাক্সির জুলুম, অভিযোগ
রাত ৮টা ২০। কলকাতা স্টেশনে তখন সবে মাত্র ঢুকেছে লালগোলা প্যাসেঞ্জার। প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রীরা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে আসতেই গুটিগুটি এগিয়ে এলেন একদল ট্যাক্সিচালক। ‘কোথায় যাবেন? শিয়ালদহ? ফুলবাগান? সল্টলেক?’ এক যাত্রী ও তাঁর বৃদ্ধা মা জানালেন বেলেঘাটা যাবেন। ট্যাক্সিচালক রাজি। কিন্তু লটবহর নিয়ে এগোতেই জানিয়ে দিলেন, বেলেঘাটা পর্যন্ত যেতে ভাড়া লাগবে ৪০০ টাকা। আঁতকে উঠলেন যাত্রী। ট্যাক্সিচালকের সাফ বক্তব্য, ‘মিটারে যাবে না দাদা। খুব জ্যাম। বেশি টাকা তো দিতেই হবে।’ পাশ থেকে অন্য ট্যাক্সিচালকরাও বলছেন, ‘চলে যান দাদা। রাত হলে ভাড়া আরও বাড়বে।’ ওই যাত্রী ও তাঁর বৃদ্ধা মা অসহায় ভাবে উঠে বসলেন সেই ট্যাক্সিতেই।
রাত ৯টা ২৫। কলকাতা স্টেশনে ঢুকেছে হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এসে নাজেহাল অবস্থা কাঁকুড়গাছির এক পরিবারের। কোলে এক শিশুকে নিয়ে পরিবারের এক পুরুষ সদস্য খুঁজছেন কোনও চালক যদি মিটারে যেতে রাজি হন। ৩০০ টাকার কমে কেউ যাবে না। শেষ পর্যন্ত এক জন চালক মিটারে যেতে রাজি হলেন। কিন্তু দাবি, মিটারে যা উঠবে তার উপরে ১০০ টাকা বেশি দিতে হবে। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের পিছনে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা বাস স্ট্যান্ডে এসেও সুরাহা হল না তাঁদের। রাতে বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়ায় রাজি হয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্যাক্সিতে উঠতে বাধ্য হলেন তাঁরা।
ভোর থেকে রাত, কলকাতা স্টেশনে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের ছবিটা এ রকমই। অভিযোগ, অধিকাংশ ট্যাক্সিচালকই মিটারে যেতে চান না। কেউ যদি রাজিও হন, মিটারের উপরে অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। এটাই দস্তুর। হাওড়া বা অন্যান্য স্টেশনে যেমন বিকল্প বাস বা অটোর ব্যবস্থা রয়েছে, এখানে কার্যত সে রকম কিছুই নেই। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের পিছনে গুটি কয়েক বাস ও অটো দাঁড়িয়ে থাকে ঠিকই, কিন্তু তা সংখ্যায় এতই কম যে সমস্যার কোনও সমাধান হয় না বলে অভিযোগ। ট্যাক্সির বেশি ভাড়ার সঙ্গে যে সব যাত্রীরা আপস করেন না, তাঁদের বাস বা ট্যাক্সি ধরতে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে আরজিকর হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হয়। গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু অভিযোগ, ট্রেনের সংখ্যা বাড়লেও ট্যাক্সি স্ট্যান্ড বা স্টেশন সংলগ্ন যাতায়াতের ব্যবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি।
এই স্টেশন দিয়ে লালগোলা প্যাসেঞ্জারে নিয়মিত যাতায়াত করেন শোভাবাজারের বাসিন্দা তাপস মজুমদার। তাঁর অভিযোগ, “দুপুর বা বিকেলের তুলনায় রাতে যে ট্রেনগুলি আসে, তার যাত্রীদের উপরে ভাড়া নিয়ে জোর জুলুম বেশি হয়। এখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্ব উল্টোডাঙা যেতেও অনেক ট্যাক্সিচালক দেড়শো-দুশো টাকা চেয়ে বসেন।” এখানকার নিয়মিত যাত্রীদের মতে, কলকাতা স্টেশনে একটি প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ তৈরি হওয়া দরকার। যাত্রীদের অভিযোগ, পুলিশের কাছেও ট্যাক্সির জুলুমের কথা জানিয়ে লাভ হয় না।
কলকাতা স্টেশনে ট্যাক্সি স্টান্ডে যে ‘জুলুম’ হয়, তা স্বীকার করে নিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও। মদনবাবু বলেন, “মাঝেমধ্যেই যা খুশি ভাড়া নেওয়া হয় বলে অভিযোগ আসে। ট্যাক্সিচালককে চিহ্নিত করতে পারলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবু সমস্যার সমাধান পুরো হয়নি। স্থায়ী সমাধানের জন্য কলকাতা স্টেশনে প্রিপেড স্ট্যান্ড করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রেল দফতরের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।” অন্য দিকে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী বলেন, “কলকাতা স্টেশনে প্রিপেড স্ট্যান্ডের জন্য জায়গা আমরা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছি। এই নিয়ে আগেও বৈঠকও হয়েছে। এখন দায়িত্ব পরিবহণ দফতর ও পুলিশের।” রেলপুলিশের এক কর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, রাতে জায়গাটি খুব অন্ধকার থাকে। তাই ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ও সংলগ্ন এলাকায় আরও বাতিস্তম্ভ বসিয়ে আলো লাগানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে যাত্রীদের হয়রানি কমাতে ওই অঞ্চলে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.