কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি-দাওয়া মানতে না চাওয়ায় এক নিরাপত্তারক্ষী তাঁদের গালিগালাজ করেন, এমনকী প্রাণে মারার হুমকিও দেন বলে অভিযোগ। পুলিশে সেই অভিযোগ জানানোয় তিনিই আবার কিছু সঙ্গী জুটিয়ে মঙ্গলবার কারখানার গেট আটকে বিক্ষোভ দেখান। যে নিরাপত্তা সংস্থার হয়ে তিনি কাডজ করছিলেন, তারা অবশ্য তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলিও জানিয়েছে, এই ধরনের ব্যবহার তারা সমর্থন করে না।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার। দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি কারখানায় ৬টি ইউনিটে পাহারার দায়িত্বে আছেন একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার ১১০ জন কর্মী। মুক্তি রুইদাস নামে তাঁদেরই এক জন আধিকারিকদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। সংস্থার সিইও সুমন্ত ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “ওই নিরাপত্তারক্ষী তাঁর কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে বারবার কারখানায় অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। আমাদের সিনিয়র ম্যানেজার (পার্সোনেল অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) পুলককুমার নিয়োগীকে মোবাইল ফোনে গালিগালাজ করেছেন ও হুমকি দিয়েছেন।” পুলকবাবুর অভিযোগ, “বাইরে বেরোলে মাথায় ডান্ডা মারবে, গাড়ির কাচ ভেঙে দেবে বলেছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।”
কিন্তু পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের হওয়ায় ওই রক্ষী আরও খেপে ওঠেন। এ দিন সকালে জনা কয়েক সঙ্গী নিয়ে কারখানার প্রধান ফটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তিনি। কারখানার আধিকারিকদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, “কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্মীদের আর্থিক দিকটি উপেক্ষা করছেন। আমি প্রতিবাদ করি বলে আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” যদিও কারখানার তরফে তা অস্বীকার করে বলা হয়, সরকার নির্ধারিত নীতি মেনেই কর্মীদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে।
মুক্তিবাবু কর্মীদের বঞ্চনার অভিযোগ তুললেও শ্রমিক সংগঠনগুলি কিন্তু তাঁকে সমর্থন করছে না। আইএনটিটিইউসি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই লোকটির সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। এই ধরনের কাজ আমরা সমর্থনও করি না। কারও কোনও দাবিদাওয়া বা অভিযোগ থাকলে বৈঠকে বসে আলোচনা করা উচিত।” একই সুরে সিটু-র জেলা সাধারণ সম্পাদক অজিত মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “আমাদের সংগঠন অতীতেও এ সব করেনি, এখনও সমর্থন করে না। ওই রক্ষী আমাদের সঙ্গে যুক্ত নন।”
যে নিরাপত্তা সংস্থার হয়ে মুক্তিবাবু কারখানায় রক্ষীর কাজ করতেন, সেটির অন্যতম কর্ণধার রমেশ বহেল বলেন, “কারখানা যে অভিযোগ তুলেছে, তার সারবত্তা আছে বলেই আমাদের মনে হয়েছে। ওই রক্ষীকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “কারখানার আধিকারিকদের হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, আমরা তার তদন্ত করছি। তার ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |