কারাগার কবেই হয়ে গিয়েছে সংশোধনাগার। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এ বার দুর্গাপুরে মুক্ত সংশোধনাগার (ওপেন এয়ার কারেকশনাল হোম) তৈরির ভাবনাচিন্তা চলছে। ১৯৮৭ সালে রাজ্যের প্রথম মুক্ত সংশোধনাগার গড়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের লালবাগে। একই মডেলে দুর্গাপুরে দ্বিতীয়টি গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে কারা দফতর।
কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, লালবাগের রাজ পরিবারের দান করা জমি ও বাড়িতে গড়ে তোলা মুক্ত সংশোধনাগারের কাজকর্ম ইতিমধ্যেই প্রশংসা পেয়েছে। প্রায় একশো একর জায়গা নিয়ে তৈরি ওই সংশোধনাগারে ৭ বছর বা তার অধিক সময়ের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদের রাখা হয়। তাঁরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকতে পারেন। ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সংশোধনাগারের বাইরে তাঁরা বিভিন্ন কাজকর্ম করে পরিবারের জন্য রোজগারের সুযোগ পান। কেউ খেতে কাজ করেন, কেউ বাগান করেন, কেউ দোকান চালান। রাতে তাঁরা ফিরে আসেন সংশোধনাগারের চৌহদ্দিতে। প্রায় শ’খানেক কয়েদির জীবন কাটছে এ ভাবেই। |
লালবাগের মুক্ত সংশোধনাগারের ‘সাফল্য’ দেখে এ বার রাজ্যের অন্যত্রও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের ধাপে-ধাপে এই সুযোগ করে দিতে চাইছে কারা দফতর। তারই অঙ্গ হিসাবে রাজ্যে আরও মুক্ত সংশোধনাগার গড়ে তুলতে চায় তারা। কারা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বিতীয়টি গড়ে তোলা হবে দুর্গাপুরে। দফতরের এক আধিকারিক জানান, বিধানগরের কাছে ফুলঝোড়ের সংশোধনাগারে বহু জমি অব্যবহৃত পড়ে আছে। সীমানা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা সেই জমিতে জন্মেছে আগাছা। ওই জমি ব্যবহার করেই নতুন পরিকাঠামো গড়ার উদ্যোগ হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ৩০ জন কয়েদির জন্য পরিকাঠামো গড়া হবে। পরে ধাপে-ধাপে সংখ্যাটা বাড়বে। লালবাগের মুক্ত সংশোধনাগারের কয়েদিরা মূলত কৃষি ও সংশ্লিষ্ট কাজকর্মের সঙ্গেই জড়িত। দুর্গাপুরের মুক্ত সংশোধনাগারের কয়েদিরা স্থানীয় বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কাজের সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি তাঁদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। চাইলে পড়াশোনার সুযোগও পাবেন।
কারা দফতরের ওই আধিকারিকের কথায়, “হয়তো সাময়িক উত্তেজনার বশে অপকর্ম করে ফেলেন কেউ কেউ। কিন্তু সাজার মেয়াদ ফুরোনোর আগে এ ভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং বাইরের জগতের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগের সুফল কাজে লাগিয়ে মুক্তির পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কয়েদিকে বিশেষ বেগ পেতে হবে না।” দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক আয়েষারানি এ জানান, কারা দফতরের তরফে লিখিত নির্দেশিকা না এলেও বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। দুর্গাপুর সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কারা দফতরের আধিকারিকেরা রুটিন পরিদর্শনের সময়েই সংশোধনাগারের আধিকারিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে একপ্রস্ত আলোচনা করেছেন। মহকুমাশাসক বলেন, “দুর্গাপুরে বর্তমান সংশোধনাগারের সামনে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রয়েছে। সীমানা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা আছে জায়গাটি। সেখানেই গড়া যাবে মুক্ত সংশোধনাগার।” |