রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শত্রুঘ্ন সিংহকে নিগ্রহ করার ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মচারী সমিতির ৫ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন। তাঁদের মধ্যে এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতাও রয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে অভিযুক্তরা রায়গঞ্জের মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। উচ্চ আদালতে অভিযুক্তদের আগাম জামিন মঞ্জুর হয়েছিল। এদিন মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতের বিচারক সমজিত রায় বিনা শর্তে জামিন মঞ্জুর করেন। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, আত্মসমর্পণকারী ৫ জনের নাম, সুব্রত চক্রবর্তী, তপন নাগ, বিকাশ নাগ, সুবীর সাহা ও বিনয় গোস্বামী। সুব্রতবাবু কলেজের কর্মচারী সমিতির সম্পাদক। তপনবাবু রায়গঞ্জ শহর তৃণমূলের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি। অভিযুক্তদের আইনজীবী পার্থ ভট্টাচার্য বলেন, “ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে নিগ্রহ করার অভিযোগে ওই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হলেও সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। কিছুদিন আগে অভিযুক্তরা রায়গঞ্জের জেলা দায়রা বিচারকের আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন। পুলিশ সরকারি সম্পত্তি নষ্টের প্রমাণ দিতে না পারায় বিচারক প্রত্যেকের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন। এদিন অভিযুক্তরা সশরীরে মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।” সরকারি আইনজীবী শেখর পালও বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হলেও পুলিশ নষ্ট হওয়া কোনও সরকারি সম্পত্তির নমুনা আদালতে পেশ করতে পারেনি। সেই কারণেই উচ্চ আদালত আগেই অভিযুক্তদের জামিন মঞ্জুর করে দিয়েছিল।” কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্মে দায়িত্ব বন্টনের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত ৭ জুন সুব্রতবাবু ও তপনবাবুর নেতৃত্বে অভিযুক্তরা কলেজের টিচার্চ কমন রুমে ঢুকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কলেজের অপর শিক্ষক অচ্যুতমোহন রায়চৌধুরীও ওই দু’জনকে পাল্টা নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ। অধ্যক্ষ সুব্রতবাবু ও তপনবাবু-সহ কর্মচারী সমিতির ওই পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অধ্যক্ষকে নিগ্রহ করার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ৩৪২, ৩২৫, ৩২৩ ধারায় মামলা দায়ের করলেও সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে জামিন অযোগ্য পিডিপিপি ৩ ও ৪ ধারায় মামলা দায়ের করে। এ দিন আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে তপনবাবু বলেন, “আমরা শত্রুঘ্নবাবুর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ভাবেই কথা বলছিলাম। অনিয়ম প্রকাশ্যে আসতেই তিনি ও অচ্যুতমোহনবাবু আমাকে ও সুব্রতবাবুকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেন। পরে কলেজের দুই শিক্ষক দেবাশিস বিশ্বাস ও বাবুলাল বালার প্ররোচনায় শত্রুঘ্নবাবু আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। সাহস থাকলে শত্রুঘ্নবাবু ও অচ্যুতমোহনবাবু আদালতে আত্মসমর্পণ করুন। আদালতে এই মামলার সিবিআই তদন্ত দাবি করেছি। তাহলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।” ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, “কর্মচারী সমিতির ওই ৫ সদস্য যে আমায় খুনের চেষ্টা করেছিলেন তা সবাই জানেন। দেবাশিসবাবু ও বাবুলালবাবু এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। ব্যক্তিগত শত্রুতারয় তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” দেবাশিস ও বাবুলাল বলেন, “শিক্ষক হিসেবে তপনবাবুদের কোনও অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে চাই না।” |