অসমে গোষ্ঠীসংঘর্ষের উত্তাপে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল সীমানা লাগোয়া উত্তরবঙ্গের গ্রামগুলিতেও। সীমানার ওপার থেকে ছিটকে আসা গুলিতে আহত হয়েছে জলপাইগুড়ির পাকড়িগুড়ি গ্রামের এক কিশোরী।
পম্পি বর্মণ নামে ওই কিশোরীর মা নয়ন বর্মণ বলেন, “সকাল থেকেই অসমের শিমুলতাপু থেকে গুলি ছুটে আসছিল।” কুমারগ্রামের পাকড়িগুড়ি তাই মঙ্গলবার তখন থেকেই ভয়ে কাঁটা হয়ে ছিল। তার মধ্যেই দুপুরে সবে খেতে বসেছেন, আবার গুলির শব্দ শুনে আর বাড়িতে থাকতে ভরসা পাননি তাঁরা। ছুটে পালানোর সময়ে পম্পির বাঁ পায়ে গুলি লাগে। তাতে আতঙ্ক আরও ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। ওই কিশোরীকে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
বিপাকে পড়েছেন ট্রেন যাত্রীরাও। সোমবার রাত থেকে অসমগামী ও অসম থেকে আসা বহু ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল। এই দিন সেগুলি যেখান থেকে ছেড়েছে সেখানেই ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে এদিন এক বিবৃতিতে জানানো হয়, কাটিহারে দাঁড়িয়ে থাকা অসমগামী নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেস এবং নিউ জলপাইগুড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রহ্মপুত্র মেল ফিরে যাবে দিল্লিতে। অসমগামী কামরূপ এক্সপ্রেস হাওড়ায় ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গুয়াহাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা দিল্লিগামী দু’টি রাজধানী এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র মেল এবং হাওড়াগামী কামরূপ এক্সপ্রেস ডিব্রুগড়ে ফিরে যাবে। লামডিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অমৃতসর এক্সপ্রেসও ফিরবে ডিব্রুগড়ে। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুব্রত হাজং জানান, ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না বলে যাত্রীদের নিজেদের এলাকায় ফেরাতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আলিপুরদুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা অসমমুখী অবধ অসম এক্সপ্রেস হাওড়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে জেনে যাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান। স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষ এই পরিপ্রেক্ষিতে রাতে ট্রেনটি অসমেই পাঠানোর আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। যদিও রাত ৯টা পর্যন্ত ট্রেনটি কোনও দিকেই রওনা হয়নি। পাশাপাশি বাতিল করা হয়েছে বুধবারের আপ সরাইঘাট ও কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস।
রেল পুলিশ সূত্রের খবর, ডাউন নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেসকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হলে কয়েকটি জানলার কাচ ভেঙেছে। আপ রাজধানীর যাত্রী বিশ্বরাম পান্ডে বিক্রম সিংহ, যশমিৎ সিংহ’রা জানিয়েছেন, চৌতরা ও গোঁসাইগাঁও স্টেশনের মাঝে দুষ্কৃতীরা ইট, পাথর, কুড়োল নিয়ে হামলা করে। এদিন বিকালে নিউ কোচবিহার স্টেশনে আটকে পড়া ট্রেনের যাত্রীদের দুই দফায় খাবার বিলি করেন নাটাবাড়ির তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। রেলের যাত্রী পরিষেবা কমিটির চেয়ারম্যান তথা আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন সাংসদ জোয়াকিম বাক্সলা বলেন, “দূরপাল্লার ট্রেনগুলির যাত্রীদের সুবিধা দেখার জন্য রেলের অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন সীমানাবর্তী বারবিশায় যান জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র। তিনি বলেন, “সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সিআরপিএফের পাশাপাশি বাড়তি পুলিশ কর্মী মোতায়েন হয়েছে। রাতে টহলদারি বেড়েছে। জাতীয় সড়কেও তল্লাশি চলছে।” আলিপুরদুয়ারের এসডিপিওর নেতৃত্বে পুলিশ অফিসারদের একটি দলকে কুমারগ্রামে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অসম থেকে বহু মানুষ চলে আসছেন জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে। কুমারগ্রামের শালবাড়ি স্কুলে কমপক্ষে ৩২ জন আশ্রয় নিয়েছেন। খয়েরডাঙা এবং জয়বাংলা তাপু গ্রামেও একটি দল আশ্রয় নিয়েছেন। অসম থেকে কামাক্ষাগুড়ি হয়ে বক্সিরহাটে চলে এসেছেন অনেকে। অসমের কোকরাঝাড়, ধুবুরি, চিরাং জেলার বাসিন্দারা চলে আসছেন কোচবিহারে। কেউ এসেছেন সঙ্কোশ পার হয়ে। রেল চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অনেককে রেলপথ ধরে হাঁটতেও দেখা গিয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলা পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “সর্বক্ষণ পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে। অসমের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসিন্দারা কুমারগ্রামে এসেছেন।” |