পাকিস্তান থেকে অমৃতসর হয়ে আজ বাড়িতে সুবোধ
বাবাকে সে চোখে দেখেনি।
জন্মের পরে চোখ ফুটতে না ফুটতেই বাবা পাকিস্তানের কারাগারে। আঠারো বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আর সপ্তাহ দুই বাদে যখন মেয়েটির বিয়ে, বাবা ফিরছেন।
ভারতীয় চর পাকিস্তানে সন্দেহে ধৃত সর্বজিৎ সিংহের মুক্তির অপেক্ষায় এখনও দিন গুনছেন তাঁর পরিজনেরা। সদ্য মুক্তি পেয়েছেন আর এক ‘চর’ সুরজিৎ সিংহ। গত এপ্রিলের গোড়ায় সুবোধ রুইদাসকে যখন মুক্তি দেওয়া হয়, তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। পঞ্জাবের অমৃতসরে সরকারি মানসিক হাসপাতালে মাস তিনেক কাটিয়ে আজ, বুধবার তিনি বাড়ি ফিরছেন।
সুবোধবাবুর বাড়ি বাঁকুড়ার ইন্দাসে আঁকুই গ্রামে। ২৭ বছর বয়সে তিনি ওই গ্রাম ছেড়ে চলে যান। জেলা পুলিশের একাংশের সন্দেহ, কাজের টোপ দিয়ে তাঁকে প্রথমে দিল্লি, পরে পঞ্জাব নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে পাকিস্তানের রাওলপিন্ডিতে পাচার করা হয়। বিনা পোসপোর্টে, বিনা ভিসায় সে দেশে ঢোকায় তাঁকে গারদে পোরা হয়েছিল। মুক্তি যখন পেলেন, বয়স ছুঁয়েছে ৪৫। সুবোধবাবুর বাবা অনুকূল রুইদাস অবশ্য বলেন, “ছেলেটা পাগলাটে স্বভাবের ছিল। বিয়ের পর থেকেই মাঝে-মাঝে বাড়ি ছেড়ে পালাত। কিছু দিন পরে ফিরেও আসত।” তিনি জানান, এই নিয়ে অশান্তির জেরে বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন তাঁর বৌমা প্রতিমা। তাতে আরও মানসিক রোগগ্রস্ত হয়ে ছেলে বাজারে, মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়াত। শেষে এক দিন নিখোঁজ হয়ে যায়। তাঁরা পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি করেননি। ভাবতেন, কিছু দিন বাদে ঠিকই ফিরে আসবে।
গত ৩০ মে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মেন্টাল কেয়ার সেল থেকে বর্ধমান ও বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি আসে। জানানো হয়, পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে দেওয়া দুই মানসিক রোগী কমল সরকার ও সুবোধ দাস অমৃতসর মানসিক হাসপাতালে রয়েছেন। প্রথম জনের বাড়ি বাঁকুড়ার পুটুসায়, অপর জনের বর্ধমানের আঁকুই গ্রামে। বাড়ির লোকেদের চিহ্নিত করে দু’জনকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে। বাঁকুড়া জেলা পুলিশ পুটুসা নামে কোনও জায়গা খুঁজে পায়নি। বর্ধমান পুলিশ রায়না, মাধবডিহি, খণ্ডঘোষ, গলসিতে খোঁজাখুঁজির পরে জানতে পারে, আঁকুই গ্রাম ইন্দাসে। বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। পরপর কয়েক দিন তাঁদের থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে বর্ধমানের আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় সুবোধবাবুর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যান। পুলিশেরই দেওয়া রাহাখরচ নিয়ে শনিবার রাতে অমৃতসর রওনা দেন সুবোধবাবুর স্ত্রী প্রতিমা, ভাগ্নে কৃষ্ণপদ ও প্রতিবেশী পাপন মিত্র।
অমৃতসরে স্ত্রীর সঙ্গে সুবোধ। ইনসেটে হারিয়ে যাওয়ার আগের ছবি। পিটিআই ও পরিবার সূত্রে প্রাপ্ত ছবি
বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “হাসপাতালের অধিকর্তা, চিকিৎসক বি আই গোয়েল ফোনে জানিয়েছেন, ওঁরা সুবোধবাবুকে শনাক্ত করেছেন। তাঁকে নিয়ে ফিরছেন।” সুবোধবাবুর সঙ্গী পাপনবাবু বলেন, “উনি মাঝে-মাঝে কথার খেই হারিয়ে ফেলছেন। তবে স্ত্রীকে চিনতে পেরেছেন। গ্রামের নামও বলতে পেরেছেন। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওঁকে আমাদের হাতে দিয়েছেন।” প্রতিমাদেবী বলেন, “স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি, এটাই আনন্দের। পিছনের কথা আর মনে রাখতে চাই না।”
ইন্দাসের বাড়িতেও খুশির ঢেউ। সুবোধবাবুর ভাই সুভাষ রুইদাস বলেন, “দাদা আবার ফিরছেন, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে!” মা গঙ্গাদেবী আপ্লুত, “কত দিন যে ছেলেটার মুখ দেখিনি!”
ভোরেই বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছে যাওয়ার কথা অমৃতসর মেলের। তার পরেই বাড়ি। কিন্তু তত ক্ষণ উত্তেজনা চেপে রাখতে পারছেন না সুবোধবাবুর ছোট মেয়ে খুকুমনি। এক নিঃশ্বাসে তিনি বলেন, “৬ অগস্ট আমার বিয়ে। কয়েক বছর আগে দিদির বিয়েতে বাবা থাকতে পারেননি। বাবাই আমায় সম্প্রদান করবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.