মাকে বলেছিলেন, “অফিস যাচ্ছি।” সাত দিন হয়ে গেল, আর খোঁজ নেই হাওড়ার এক তরুণের। কলেজে পড়তেন, চাকরিও করতেন তিনি। তাঁর অন্তর্ধানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রহস্য ক্রমেই দানা বাঁধছে।
ওই ছাত্রের পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে খুন করা হয়েছে। এবং এক তরুণীকে ঘিরে ত্রিকোণ প্রেমের দ্বন্দ্বেই এই খুন। খুনের পিছনে রয়েছে বান্টিরই কয়েক জন বন্ধু। যাঁদের দিকে সন্দেহের তর্জনী, সেই বন্ধুরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, গঙ্গায় স্নান করতে নেমে ডুবে গিয়েছেন ওই তরুণ।
সালকিয়ার ধর্মতলার বাসিন্দা ওই ছাত্রের নাম বান্টি সিংহ (২০)। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, ১৮ জুলাই ছিল বান্টির জন্মদিন। সে-দিন বেলা দেড়টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজের সান্ধ্য বিভাগের বাণিজ্য প্রথম বর্ষের ছাত্র বান্টি। সল্টলেকে একটি কলসেন্টারে চাকরিও করতেন তিনি। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় মা নিরুদেবীকে তিনি বলেন, “অফিস যাচ্ছি। একটু কাজ আছে। বিকেলেই ফিরব।”
বান্টি আর ফেরেননি। তাঁর বন্ধু অজয় শর্মা সে-দিন বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ বান্টির খুড়তুতো ভাই জিতুর মোবাইলে ফোন করে জানান, বালির বাদামতলার কাছে পুনমচাঁদ বাগাড়িয়া ঘাটে স্নান করতে নেমে বান্টি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছেন। বান্টির কলেজেই পড়েন অজয়। সিংহ পরিবারেরও সকলেই তাঁকে চেনেন। তাঁর ফোন পেয়ে বান্টির বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে যান। তাঁদের বক্তব্য, তখন ওই ঘাটে অজয় ছাড়া আরও দুই যুবক ছিলেন। এক জন তাঁদের পরিচিত। নাম নবীন প্রসাদ। অজয় তাঁদের জানান, অন্য জনের নাম রাহুল বর্মা। তিনি অজয় ও নবীনের বন্ধু। বান্টির মোটরবাইক, জামাপ্যান্ট, মোবাইল, মানিব্যাগ এবং দু’টি নতুন গামছা পাওয়া যায় ঘটনাস্থলে। আসে বালি থানার পুলিশ। কলকাতা রিভার ট্রাফিকও। লঞ্চ ও নৌকা ভাড়া করে তল্লাশি শুরু হয়। কিন্তু দু’দিনের তল্লাশিতেও বান্টির দেহ মেলেনি। সন্দেহ বাড়ে তাঁর পরিবারের। ২০ জুলাই বান্টির বাবা রামশঙ্কর সিংহ থানায় অজয়, নবীন ও রাহুলের বিরুদ্ধে অপহরণ ও খুনের অভিযোগ আনেন। |
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, বান্টির সঙ্গে এক তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সেই তরুণীও পছন্দ করতেন বান্টিকে। কিন্তু অজয় সম্প্রতি ওই তরুণীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এই নিয়ে বান্টি ও অজয়ের মধ্যে কয়েক মাস ধরে ঠান্ডা লড়াই চলছিল। মঙ্গলবার বাড়িতে বসে বান্টির জেঠামশাই ওমপ্রকাশ সিংহ বলেন, “ও যে-দিন নিখোঁজ হয়, সে-দিন সন্ধ্যায় ওই মেয়েটি ফোন করেছিল। সে জানায়, তার সঙ্গে বান্টির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই জন্যই বান্টিকে নানা ভাবে মানসিক নির্যাতন করছিল অজয়।”
বান্টির খুড়তুতো ভাই জিতুও বলেন, “ঘটনার দিনেই অজয় ফোন করে আমাকে শাসায়। বলেছিল, বান্টি বাড়াবাড়ি করছে। বেশি বাড়লে ফল খুব খারাপ হবে।” বান্টির পরিবারের অভিযোগ, অজয় গাড়ি কেনার জন্য বান্টির কাছে ৮০ হাজার টাকা চেয়ে চাপ দিচ্ছিল। ঘটনার দিন সকালে বান্টির মোবাইলে এসএমএস করে অজয় হুমকি দেয়। এসএমএসে লেখা হয়, “বহুত হিরো হো রাহা হ্যায়। তেরা হিসাব হোগা। ইয়াদ রাখনা।” রামশঙ্করবাবুর অভিযোগ, “আমার ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে অথবা আটকে রাখা হয়েছে। ওর বন্ধুরাই এটা করেছে। ওরা সব জানে। কিন্তু পুলিশ এখনও ওদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করল না!” মঙ্গলবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে অজয় বলেন, “সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। বান্টি মদ খেয়েছিল। তাই গঙ্গায় নেমে আর নিজেকে সামলাতে পারেনি। আমাদের চোখের সামনেই তলিয়ে গেল।” বান্টিকে বাঁচাতে তাঁরা জলে নামলেন না কেন? প্রশ্ন শুনেই ফোন কেটে দেন অজয়। হাওড়া সিটি পুলিশের এডিসি (উত্তর) রশিদমুনির খানের দাবি, “তদন্ত ঠিক ভাবেই চলছে। ওই তিন বন্ধুকে রোজই থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় কোনও ত্রিকোণ প্রেমের ব্যাপার আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |