আমন্ত্রিতদের একপ্রস্থ খাওয়াদাওয়ার পালা শেষ। মুসলিম রীতি মেনে দেনমোহরের জন্য কনের অপেক্ষায় বসে পাত্র। ঘরে সাজগোজের পালা চলছিল কনের। ওই সময়ই ব্লক ওয়েলফেয়ার অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে বিয়েবাড়িতে হাজির হন চাঁচল থানার আইসি জ্যোতিষ রায়। বন্ধ হয়ে গেল সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া নাবালিকার বিয়ে। মালদহের চাঁচলের ধানগাড়া এলাকায় সোমবার দুপুরের ঘটনা। ‘আইন না জেনে’ নাবালিকা নাতনির বিয়ে দিচ্ছিলেন বলে পুলিশকে মুচলেকা দেন ঠাকুর্দা রকিমুদ্দিন আহমেদ। বিয়ে বন্ধ হলেও অভ্যাগতদের আপ্যায়নের ত্রুটি রাখেননি নাবালিকার পরিবার। পুলিশ-প্রশাসনের ফেরার পর বিয়েবাড়িতে আসা আমন্ত্রিতদের খাইয়ে ছাড়েন নাবালিকার দিনমজুর বাবা আবু হায়াত। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেছেন, “আইন না জেনে বিয়ে দিচ্ছিলেন বলে নাবালিকার পরিবারের তরফে মুচলেকা দেওয়ায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” দিনমজুর আবু হায়াতের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে বড় লালবানু খাতুন। স্থানীয় হাই মাদ্রাসার পড়ুয়া। বিয়ে ঠিক হয়েছিল হরিশ্চন্দ্রপুরের সোনাপুরের দিনমজুর পাত্র রেজাউল ইসলামের সঙ্গে। পাত্রপক্ষের মেয়ে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় ধার দেনা করেই মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন। আবু বলেন, “পাত্র পেয়ে মেয়ের বিয়ে ঠিক করি। আমরা আইন-কানুনের কি জানি? ১৮ বছর না হলে ওকে আর শ্বশুরবাড়িতে পাঠাব না। বাড়িতে থেকেই ও পড়াশোনা করবে।” বিয়ে বন্ধ হলেও ২২ বছর বয়সী ছেলের বিয়ে অন্যত্র দিতে চান না পাত্রের বাবা রইসুদ্দিন আহমেদ। ফিরে যাওয়ার আগে লালবানুকে তিনি আশীর্বাদ করে ভালভাবে লেখাপড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “লালবানুর ১৮ বছর হলে ফের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ওকে ঘরে নিয়ে যাব।” চাঁচলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক অশোক সরকার জানান, দুপুরে একইসঙ্গে বিডিও ও আইসি-র কাছে নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে খবর যায়। তার পরেই বিয়ে বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে মহকুমাশাসক জানান। রাতে ওই এলাকারই নুরগঞ্জে আরও এক নাবালিকার বিয়ে রুখেছে প্রশাসন। বছর ষোলোর শাহানাজ খাতুন-এর বিয়ের আয়োজন করেছিলেন তাঁর বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি গফুর আলি। পাত্র ছিল ওই গ্রামেরই তজিমুল হক। খবর পেয়ে ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক অশোক সরকার গিয়ে বিয়ে আটকান। এ ক্ষেত্রেও পাত্রীর বাবা আইন না জানার কথা জানিয়েছেন। গত বুধবার চাঁচলের তারাপুরে বিয়ের আসরে হাজির হয়ে দুই নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ-প্রশাসন। এই প্রবণতা আটকাতে সচেতনতা অভিযান হবে বলে পুলিশ-প্রশাসন জানিয়েছে। |