দলের এক জনও নির্বাচিত সদস্য নেই। কিন্তু সিপিএমের ১২ ও কংগ্রেসের ৮ সদস্যকে ‘পাশে পেয়ে’ মালদহের কালিয়াচক ৩ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি ‘দখল করল’ তৃণমূল। সোমবার ২০-১৬ ভোটে কংগ্রেসকে হারিয়ে নতুন সভাপতি হয়েছেন সুধীর মণ্ডল। তিনি বলেন, “আমি ও এই পঞ্চায়েত সমিতির আরও ১১ জন সিপিএম সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আবেদন করেছি। কারণ, আমাদের বিপদের দিনে তৃণমূল পাশে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগ দেব।’’ কংগ্রেসের ৮ সদস্যও তৃণমূলে যোগ দিতে আবেদন করেছেন। মালদহ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “সিপিএমের ১২ জন ও কংগ্রেসের ৮ জন সদস্য স্বেচ্ছায় তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়েছেন। তাঁদের পাশে পেয়ে আমরা ওই পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছি।” এই পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসন ৩৯। কংগ্রেসের দখলে ছিল তার মধ্যে ২৪টি। সিপিএমের হাতে ছিল ১৫টি। সভাপতি ছিলেন কংগ্রেসের দিলীপ মণ্ডল। ৩০ এপ্রিল অনাস্থা ভোটে তিনি অপসারিত হন। তারপরে এই দিন নতুন সভাপতি নির্বাচন হয়। তৃণমূলের অন্দরের খবর, এই পঞ্চায়েত সমিতি ‘দখল করে’ এক সঙ্গে জোটসঙ্গী কংগ্রেস ও বিরোধী সিপিএমকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে ‘অনৈতিক’ বলে সমালোচনা করেছেন সিপিএমের মালদহ জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র। তিনি বলেন, “যে পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের একজনও সদস্য নেই, তা এভাবে দখল করাটা চরম অনৈতিক ব্যাপার। পঞ্চায়েত নিয়ে তৃণমূল একাজ করলেও মানুষ তা মেনে নেবেন না। এ ভাবে নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের দলের লোকজনকে ভাঙানোর চেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক।” পাশাপাশি, অম্বরবাবু স্বীকার করেন, কালিয়াচক ৩ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে তাঁদের ১৫ জন সদস্যকে সভাপতি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হলেও ১২ জন তা মানেননি। দলের নির্দেশ অমান্য করায় ওই ১২ জনকে সিপিএম থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে জেলা সম্পাদক জানান। মালদহ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেন, “জেলায় তৃণমূলের কোনও শক্তি নেই। তৃণমূল মুখে জোটের কথা বলছে। আর পিছন থেকে কংগ্রেসকে ভাঙতে চাইছে। নানা প্রলোভন দেখিয়ে কংগ্রেসকে নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে। এ তো বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতি। তবে সিপিএমকে নিয়ে তারা যে ভাবে সমিতি দখল করল, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে কালিয়াচকের মানুষ তৃণমূলকে এর যোগ্য জবাব দেবে।” সাবিত্রীদেবী অবশ্য দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজ্যের উন্নয়নে যে ভাবে কাজ শুরু করেছেন, তা দেখে কংগ্রেস, সিপিএমের কর্মী সমর্থকেরা নিজেদের দল ছেড়ে তাঁদের দলের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, “কোনও দলের সদস্য যদি স্বেচ্ছায় তৃণমূলে যোগ দিতে চান, তা হলে কি বাধা দিতে পারি? কংগ্রেস ও সিপিএম দুই দলই নিজেদের কর্মী, সমর্থকদের দলে ধরে রাখতে পারছেন না। ফলে তারা এখন নিজের দুবর্লতা ঢাকতে তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন।” |