বন্যা রোধ বিষয়ক কোনও কাজ করাতে হলে এখন থেকে উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করল সেচ দফতর। সম্প্রতি রাজ্য সেচ দফতরের শীর্ষ পর্যায় থেকে এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজে অর্থের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারে লাগাম টানতে ওই নির্দেশ বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং কোচবিহার উত্তরবঙ্গের এই তিন জেলার সেচ দফতরের কাছে নির্দেশ পৌছে গিয়েছে। বর্ষার সময় বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে অর্থের অপব্যয়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। যে সব এলাকায় প্রয়োজন নেই সেখানেও লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে, নদীতে বোল্ডার ফেলা, পাড় বাঁধানোর মতো কাজ করার প্রবণতা রয়েছে বলে অভিযোগ। যে হেতু নদী বাঁধে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ হয়, সে কারণে এ সব ক্ষেত্রে পরে কত টাকার কাজ হয়েছে তার সঠিক হিসেবনিকেশ করাও সম্ভব হয় না। সেচ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, যে হেতু নদীর পাড়ে ফেলা বোল্ডার জলের নিচে তলিয়ে যায়, সে কারণে তার হিসেব করার কোনও উপায় নেই। সরকারি সূত্রের খবর, অপ্রয়োজনীয় খরচ আটকানো ও আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বন্যা নিয়ন্ত্রণের খরচ কমাতেই ওই সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি, বর্ষার সময়ে জরুরি অবস্থাতে কমিশনের চেয়ারম্যানের মৌখিক নির্দেশেও জেলা গুলি কাজ শুরু করতে পারবে বলে নির্দেশে জানানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রনের কমিশনের চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই নির্দেশের ফলে অপরিকল্পিত ভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রনের কাজের আশঙ্কা আর থাকল না। গত বিভিন্ন বছরে বন্যা নিয়ন্ত্রণে অর্থের অভাবের যে সমস্যা হতো। তাও এড়ানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।”
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলাগুলিকে আপৎকালীন কয়েক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে কাজ করতেও চেয়ারম্যানের অনুমতি লাগবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি চলতি বছরে উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রহ্মপুত্র বোর্ড থেকে ১৬০ কোটি টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কমিশন থেকে ইতিমধ্যেই বোর্ডকে বিস্তারিত পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে। আগামী শনিবার একজন অধীক্ষক বাস্তুকার এবং একজন নির্বাহী বাস্তুকার পদমর্যাদার আধিকারিক অসমে ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের দফতরে যাচ্ছেন। বোর্ডের অর্থ দিয়ে সঙ্কোশ, রায়ডাক, কালজানি, তোর্সা, জলঢাকা-মানসাই এবং তিস্তা অববাহিকায় বন্যা প্রতিরোধের অর্থাত বাধ সংস্কার নতুন বাধ তৈরি, পাড় বাধানোর মতো কাজ হবে। আগামী দু মাসে এই কাজ শেষ করা গেলে আগামীতে উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা কমবে বলে দাবি করছে কমিশন। উপরন্তু, গত পাঁচ বছরে যেখানে ব্রহ্মপুত্র বোর্ড কমিশনকে ১৮০ কোটি টাকা দেয়। সেখানে এক বছরেই ১৬০ কোটি টাকা আদায় করতে পারা বড় সাফল্য মনে করা হচ্ছে। কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “দফায় দফায় ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের বাস্তুকার, আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করতে হয়েছে। উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি তাদের খুটিয়ে বোঝানো হয়েছে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, সেচমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সকলে এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এই কাজ সম্ভব হয়েছে।” |