সোমবার দিনভর ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় স্বস্তি ফিরল উত্তরবঙ্গে। ফুঁসে ওঠা নদীনালা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। যদিও নদী ভাঙনের বিপদ বেড়েছে। রবিবার রাতে বিপদসীমা ছুঁয়ে বইতে থাকে তিস্তা নদী। দেওয়া হয় লাল সঙ্কেত। সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জলস্তর নামতে শুরু করে। লাল সঙ্কেত তুলে তিস্তার সংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত দেওয়া হয়। স্বস্তি ফিরেছে কোচবিহারের জলবন্দি এলাকাতেও। ত্রাণ শিবিরে আশ্রিতরা এ দিন বাড়ি ফিরে যেতে শুরু করেন। যদিও উল্টো ছবি জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা ও মালদহে। নাগরাকাটায় ডায়না নদী গতিপথ পাল্টে সড়কের উপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে। মালদহে ফুলহারের জল বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ভাঙনের তাণ্ডব। |
শনিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ সোমবার স্বস্তি ফিরে পেল। সকাল থেকে তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ওই স্বস্তি। যদিও আবহাওয়া দফতর তেমন ভরসা দিতে পারছে না। তাদের সতর্কতা ফের জাঁকিয়ে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই স্বস্তি কতটা স্থায়ী হয় তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “উত্তরবঙ্গে বর্ষা ঢুকে পড়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।” গত ২৪ ঘন্টায় জলপাইগুড়িতে ৭৪ মিলিমিটার, কোচবিহারে ৫৪মিলিমিটার, সেবকে ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার থেকে টানা বৃষ্টিপাতের জেরে শুধু তিস্তা নদীর জলস্তর বাড়েনি। সঙ্গে ধরলা, জরদা, রুকরুকা, বারোহাতির মতো প্রতি ছোট নদীও ফুঁসে উঠেছে। জরদা নদী পাড় এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ময়নাগুড়ির দক্ষিণ মৌয়ামারি এলাকায় ধরলার জল ঢুকে পড়ে। এ দিকে নাগরাকাটা ব্লকে ডায়না নদী গতিপথ পাল্টে খয়েরকাটার একমাত্র সংযোগকারী রাস্তার উপর দিয়ে বইতে শুরু করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। নদীর উপরে থাকা কাঠের সেতুটিও বেহাল হয়ে পড়েছে। সোমবার খয়েরকাটায় যান মালবাজারের মহকুমাশাসক দেবযানী ভট্টাচার্য। তিনি বলেন “সেচ দফতর বাঁধ দিয়ে নদীকে দূরে রাখবার একটা প্রকল্প নিয়েছে। কাঠের সেতুর বদলে পাকা সেতুর তৈরির বিষয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রকে রিপোর্ট পাঠানো হবে।” উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার থেকে টানা বর্ষণের ফলে ডুয়ার্সের রায়ডাক, ডায়না নদী বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। কোচবিহারের তোর্সা ও ধরলা নদীর কিছু বাঁধেও ভাঙন দেখা গিয়েছে। দু’দিনের বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট দ্রুত তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়াম্যান নারায়ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তোর্সা, রায়ডাক, ডায়না নদী বাঁধে কিছু ক্ষতি হয়েছে। তিস্তা নদীতে ভাঙনের খবর নেই। বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।” |
মালদহের ফুলহার নদীতে জলস্তর বেড়ে চলায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে ভাঙন। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার ফুলহারের উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ২৪.১০ মিটারে। শনিবার তা ছিল ২৩.০৯ মিটারে। জেলা সেচ দফতরের মহানন্দা এমবেঙ্কমেন্টের নির্বাহী বাস্তুকার আশিসকুমার সাহু বলেন, “ফুলহারের জল বাড়ছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে।” সোমবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কোচবিহারের দুই মহকুমায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তুফানগঞ্জের দেওচড়াই ,বালাভূত, কৃষ্ণপুর , নাককাটিগছ সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় ২৫ হাজার বাসিন্দা রবিবার জলবন্দি হয়। বালাভূত ও দেওচড়াইয়ের শতাধিক পরিবার ৩টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেয়। সোমবার থেকে তাঁরা বাড়ি ফিরে যেতে শুরু করে। তুফানগঞ্জের মহকুমাশাসক পালদেন শেরপা বলেন, “পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ত্রাণ শিবিরের অর্ধেক বাসিন্দা বাড়ি ফিরেছেন।” কোচবিহার সদর মহকুমার টাকাগছ, মধুপুর, ঘুঘুমারি, পানিশালা প্রভৃতি এলাকাতেও জল নেমেছে। |