মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে মারধরের অভিযোগে দক্ষিণ দিনাজপুরের ইউনিফায়েডের জেলা নেতা সহ ৩ স্বাস্থ্যকর্মীকে সাসপেন্ড ও একজন অস্থায়ী কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রবিবার রাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর থেকে ওই চার কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ পৌঁছেছে জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরের ৩ জন কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ১ জন অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ এসেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” জেলাশাসক জানান, শাস্তিপ্রাপ্তরা হলেন বালুরঘাটের জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ক্লার্ক কাম স্টোর কিপার চিত্তরঞ্জন মোহান্ত। চিত্তবাবু স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (ইউনিফায়েড) অব হেলথ্রে জেলা সভাপতি। তা ছাড়া সাসপেন্ড হয়েছেন দফতরের দুই মেকানিক্যাল বিভাগের কর্মী তথা ইউনিফায়েডের সদস্য প্রশান্ত রায় এবং অশোক চক্রবর্তী। ওই সংগঠনের সহ সম্পাদক মিঠুন চক্রবর্তীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। মিঠুনবাবু সিএমওএইচ অফিসে ‘ডাটা-এন্ট্রির’ কাজে অস্থায়ী ভাবে যুক্ত ছিলেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ৭ জুন বিকেলে ইউনিফায়েডের তরফে বালুরঘাটে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গৌরব রায়কে ডেপুটেশন দেওয়ার সময় ওই নেতা কর্মীরা তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। নিগৃহীত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ওই ৪ জনের বিরুদ্ধে বালুরঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পাশাপাশি, তিনি গোটা ঘটনা জানিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের হস্তক্ষেপ চান। এর পরেই ইউনিফায়েড সংগঠনের তরফে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকেক বিরুদ্ধে দফতরের এক মহিলা কর্মীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হয়। অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তিনি বিষয়টি পুলিশ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। সরকারি সূত্রের খবর, সম্প্রতি দফতরের আসবাব, কম্পিউটার কেনা সহ বেশ কিছু অনিয়ম ধরে ফেলে ব্যবস্থা নেওয়ায় ওই কর্মীদের রোষের মুখে পড়েছিলেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। পছন্দের সংস্থা ওষুধ কেনার বরাত না পাওয়ায় নানা অছিলায় টাকা ফেলে রাখার বিরুদ্ধে গৌরববাবু সরব হয়েছিলেন বলে স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। সেই কারণে ডেপুটেশন দেওয়ার নাম করে ওই দিন চেম্বারের মধ্যে গৌরববাবুকে মারধোর করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত ইউনিফায়েডের সভাপতি চিত্তরঞ্জনবাবু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “মারধোরের অভিযোগ মিথ্যা। ডেপুটেশনের সময় এক মহিলা স্বাস্থ্য কর্মীর গায়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হাত দেন। এ ব্যাপারে যা বলার পরে বলা হবে।” দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ (ইউনিফায়েড) অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি বিলাস দেব বলেন, “বিষয়টি আমরা রাজ্য কমিটিকে জানিয়েছি। শীঘ্রই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে আমরা সব বলব।” তৃণমূল প্রভাবিত ইউনাইটেড স্টেট গভর্মেন্ট ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সঞ্জীব মন্ডল বলেন, “আন্দোলনের নামে উচ্ছৃঙ্খলতাকে আমরা বরদাস্ত করি না। তবে ওই কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হবে।” |